বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভাঙা রাস্তাই ঈদযাত্রার কাল

নানা আয়োজন চূড়ান্ত, বাসের টিকিটও কাটা হয়েছে-তবুও বেহাল সড়কের কথা ভেবেই উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা

সাঈদুর রহমান রিমন

ভাঙা রাস্তাই ঈদযাত্রার কাল

ভাঙাচো    রা, খানাখন্দকে পূর্ণ রাস্তাঘাট, কাদা-পানিতে সয়লাব সড়কই এবারের ঈদযাত্রার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদ উদযাপনের নানা আয়োজন চূড়ান্ত হয়েছে, বাসের টিকিটও কাটা হয়েছে—তবুও বেহাল সড়কের কথা ভেবে অনেকেই উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায় ভোগছেন। কয়েকদিনের অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে দেশের সড়ক মহাসড়কগুলোর বেহালদশা হয়েছে। দেশের ২৩টি পয়েন্টে ২-৩ কিলোমিটার করে রাস্তা হয় পানিতে ডুবে আছে নয়তো পিচ ধুয়ে-মুছে যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। উত্তরাঞ্চলের সড়কগুলোর দেড় শতাধিক পয়েন্ট চরম ক্ষতিগ্রস্ত। সেসব স্থানে গাড়ি থেকে যাত্রীদের নেমে কাদা পানি পেরিয়ে পুনরায় গাড়িতে উঠতে হয়। এ অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে ঘরমুখে রওনা দিতেই সাহস পাচ্ছেন না অনেকে। এর ওপর ঈদযাত্রার সময় সামান্য বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ কতটা চরম আকার ধারণ করবে তা সহজেই ধারণা করা যায়।

নির্মাণকাজ আর খানাখন্দে বেহাল সড়ক মহাসড়কে যানজট, জলজটে নাকাল যাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা। ঈদে এই দুর্ভোগ আরও বাড়ার আশঙ্কা বাড়ি ফেরা যাত্রীদের। সামান্য বৃষ্টিতেই মহাসড়কের বহু স্থানে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। দুর্ভোগের কথা স্বীকার করলেও হাইওয়ে পুলিশের আশা, বৃষ্টি না হলে যানজট ছাড়াই ঈদে ঘরে ফিরতে পারবেন যাত্রীরা। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে হাটিকুমরুল গোলচত্বর থেকে নগরবাড়ি, বগুড়া ও বনপাড়া সড়কের ৪০ কিলোমিটার এলাকার সংস্কার কাজ শেষ না হওয়ায় ঈদে এই সড়কে যানজটের আশঙ্কা করছে পুলিশ।

বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের একজন নেতা বলেন, সড়ক-মহাসড়কের বেহালদশার কারণে এবার গত ঈদের তুলনায় ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি বাড়তে পারে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগ ক্ষেত্রে বড় সমস্যাস্থল হচ্ছে ফেরিঘাট। আরিচা-পাটুরিয়া ঘাটে যেমন নানা অব্যবস্থাপনা আছে, তেমনি মাওয়া-কেওড়াকান্দি, শিমুলিয়া ফেরিঘাটে বহাল রয়েছে সিন্ডিকেট সমস্যা। সম্প্রতি ভারি বর্ষণের কারণে ভোগরা বাইপাস এলাকা, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়াই থেকে টাঙ্গাইল বাইপাস পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকা নাজুক অবস্থায় আছে। এরপর সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে বগুড়া পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার পথে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মেরামত করা হলেও তা পরক্ষণেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। মহাসড়কের গাইবান্ধা অংশের ৩২ কিলোমিটারও ছোট-বড় গর্তে ভরা। যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা ও চুয়াডাঙ্গাসহ অঞ্চলটির ১০ জেলায় ১৮টি রুটের সড়ক ও মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সাতক্ষীরায় এমন কোনো রাস্তা নেই যেখানে ক্ষতবিক্ষত হয়নি। একই অবস্থা ঝিনাইদহ ও যশোরের। যশোর-খুলনা, যশোর চুকনগর, যশোর-সাতক্ষীরা, যশোর-বেনাপোল, যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-মাগুরা এবং যশোর-নড়াইল সড়কের মাইলের পর মাইল ভাঙাচুরা। সড়ক বিভাগ জোড়াতালি দিয়ে রাস্তায় ইট, বালি, পাথর বিছিয়ে কোনোরকমে চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করছে। ঢাকা থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত সড়ক ভালো থাকলেও মহাসড়কের যশোর-খুলনা, যশোর-বেনাপোল, যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-মাগুরা ও যশোর-নড়াইল রুটের অন্তত ১৩০ কিলোমিটার হেলেদুলে যানবাহন চলাচল করছে। উজিরপুর থেকে বরিশাল পর্যন্ত প্রায় ৭৬ কিলোমিটার পথের পুরোটাতেই স্থানে স্থানে গর্ত। এর মধ্যে চলছে সড়ক সম্প্রসারণের কাজ। ঢাকা থেকে সিলেটের তামাবিল পর্যন্ত ২৮৭ কিলোমিটার মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে খানাখন্দ রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের শেরপুর থেকে সিলেট শহর পর্যন্ত অংশের অবস্থা খুবই খারাপ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটে প্রায় ৯০ কিলোমিটার মহাসড়কে ছোট-বড় গর্ত রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন হলেও যাত্রাবাড়ী-কুতুবখালীর দুর্ভোগ থেকে যাত্রীরা রেহাই পাচ্ছে না। এ ছাড়া মেঘনা-গোমতী সেতু দুটি দুই লেনের এবং এর দুই পাশের সড়ক চার লেনের। ফলে বিপুল যানবাহন সেতুতে এসে আটকে যাচ্ছে। সেতুর টোল প্লাজা ও ওজন নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে লাইন পড়ে যাচ্ছে। এই দুই সেতুতে প্রায়ই যানবাহন বিকল হয়। যা ঈদে ভোগান্তির সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

দুর্ভোগ শুরু রাজধানী থেকেই : ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে চলতে গেলে টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার জুড়ে খানাখন্দ। কিন্তু ময়মনসিংহের পর নেত্রকোনা ও জামালপুরের দিকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খারাপ। শুধু ঢাকার বাইরেই নয়, খোদ রাজধানী থেকে বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার শুরুতেই সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। ঢাকা থেকে সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-ডেমরার রোড হয়ে সিলেটসহ নয়টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তের সামনে থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত উড়ালসড়কের নিচের সড়কের একাংশ মেরামতের কারণে বন্ধ। বাকি অংশে পানি জমে আছে। কুতুবখালী হয়ে সায়েদাবাদ টার্মিনালে ঢোকার পথেও বড় বড় গর্ত। ডেমরা হয়ে সুলতানা কামাল সেতু দিয়ে সিলেট রোডে উঠতে গেলেও আরও বড় ভোগান্তি অপেক্ষায় থাকে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গাউছিয়া কাপড়ের হাটের কাছে উড়ালসড়কের নির্মাণকাজের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই যানজটে পড়তে হচ্ছে। অন্যদিকে টঙ্গী ও ঘোড়াশাল হয়ে যাওয়ার পথটি আরও অচল। টঙ্গী থেকে নরসিংদীর পাঁচদোনা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

পূর্ণাঙ্গ মেরামত হচ্ছে না সড়ক : চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে দেশের অধিকাংশ সড়ক। বেহাল সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। আর ভাঙাচুরা সড়ক দিয়ে চলাচলের কারণে দুর্ভোগের শেষ নেই মানুষের। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগ (এইচডিএম) থেকে সম্প্রতি দেওয়া প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশের ৪৩ শতাংশ সড়ক-মহাসড়ক ভাঙাচুরা। ৩৭ শতাংশ মোটামুটি চলে। আর ১৯ শতাংশ সড়ক ভালো অবস্থায় আছে। সারা দেশে সওজের ১৯ হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়কের মধ্যে ১৫ হাজার ৭০৩ কিমি সড়কই চলাচলের অনুপোযোগী। সড়কগুলো উন্নয়নে কিছু অংশে হালকা বা ভারী মেরামত করা দরকার। বাকি সড়ক পুনঃনির্মাণ করতে হবে। কিন্তু আপাতত চলাচলের উপযোগী করে মেরামত করা হচ্ছে সড়কগুলো।

সর্বশেষ খবর