বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

আইএসে যোগ দিতে গিয়ে বাংলাদেশি যুবক নিউইয়র্কে গ্রেফতার

প্রতিদিন ডেস্ক

পারভেজ আহমেদ (২২) নামে এক বাংলাদেশি যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে জে এফ কে এয়ারপোর্ট থেকে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র ‘আইসিস’-এ ভর্তির জন্য সৌদি আরব থেকে জুনে সিরিয়া যাওয়ার পথে পারভেজকে গ্রেফতার করে সৌদি পুলিশ। এর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির ওজোন পার্কে তার বাবার বাড়িতে খোঁজখবর নিতে থাকে এফবিআই। এনআরবি নিউজ। ১৭ জুলাই পারভেজের কম্পিউটারসহ যাবতীয় কাগজপত্র অনুসন্ধান করে এফবিআই নিশ্চিত হয়, তিনি আইসিসে ভর্তির জন্যই সৌদি আরব থেকে সিরিয়ায় গমন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সৌদি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এফবিআইর অনুরোধে সৌদি পুলিশ তাকে ২৮ আগস্ট নিউইয়র্কে ফেরত পাঠায়। জে এফ কে এয়ারপোর্টে অবতরণের পরই এফবিআই পারভেজকে গ্রেফতার করে এবং ২৯ আগস্ট ব্রুকলিনে ফেডারেল কোর্টে সোপর্দ করে। পারভেজ তার সিলেটী মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও গ্রহণ করেছেন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে নিউইয়র্কের স্টাইভ্যাসেন্ট হাইস্কুলে ভর্তির সুযোগ পান। এরপর তিনি হান্টার কলেজে ভর্তি হলেও অনিয়মিত ছাত্রে পরিণত হন। পরিবারের সদস্যরা জানান, হঠাৎ করেই বদলে যান পারভেজ। সবকিছু ছেড়ে তিনি নীরব হয়ে যান। জুনে বাবার সঙ্গে সৌদি আরবে যান পারভেজ। সেখান থেকেই উধাও হন। ফেডারেল কোর্টে দায়েরকৃত অভিযোগ অনুযায়ী তিনি তার মা-বাবাকে লিখে জানান, ‘আমি যদি কোনো কারণে নিষ্ঠুর হয়ে থাকি, অতিরিক্ত কিছু করে থাকি, তাহলে ক্ষমা করে দিও। আমি যা তোমাদের শেখাতে চেয়েছি দয়া করে তা স্মরণ করো।’ পারভেজের বিরুদ্ধে আইসিসকে হত্যাযজ্ঞে সহায়তা এবং আইসিসের সদস্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতিসাধন তথা অসহায়-নিরপরাধ মানুষ হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এগুলো প্রমাণিত হলে তাকে কমপক্ষে ২০ বছরের সাজা ভোগ করতে হবে। এফবিআই জানিয়েছে, তদন্তের সময় পারভেজের ফোনে আইসিসের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার ছবি ছাড়াও পাঁচজনকে ঝুলিয়ে হত্যার ছবিও দেখা গেছে। ‘সমকামীদের এভাবেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা উচিত’ বলেও পারভেজ লিখে রেখেছেন। ৯/১১-এ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সন্ত্রাসী হামলাকে যথার্থ বলেও অভিহিত করেছেন পারভেজ। তার ফোনে আইসিসের লিডার আবু বকর আল-বাগদাদির ছবিও পাওয়া গেছে। পারভেজের ফোনে লেখা পাওয়া যায়, ‘আমরা শিগগিরই জিহাদে অংশ নিচ্ছি এবং এর পরই আমরা শহীদ হব।’ পারভেজ আমেরিকানদের ‘ইসলামের শত্রু’ হিসেবে মন্তব্য করে তাদের খতম করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন স্থানে। ২০১৪ সালের অক্টোবরে পারভেজ একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘কারা জিহাদি? অধিকাংশ মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী নিজের ভূমিতে যেসব মুসলমান শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মত্যাগ করেন, তারাই জিহাদি। সত্যিকারের সন্ত্রাসী হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।’

 আদালতকে এসব তথ্য অবহিত করেন এফবিআইর সহকারী পরিচালক উইলিয়াম এফ সুইনি। আদালতে প্রদত্ত অভিযোগে এফবিআইসহ বিভিন্ন সংস্থার তদন্তের উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সফরের পর জানুয়ারিতে নিউইয়র্কে ফেরার সময় জে এফ কে এয়ারপোর্টে এফবিআই তার মুখোমুখি হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওইসব পোস্টের ব্যাপারে পারভেজ তাদের বলেছিলেন, তিন যখন গাঁজা-আফিমে বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন, সে সময়ই ওই ধরনের মতামত প্রকাশ পেয়েছে; যা সত্যি ছিল না।

২৯ আগস্ট অপরাহ্নে পারভেজকে ব্রুকলিনে ফেডারেল কোর্টের জজ জেমস ওরেনস্টাইনের এজলাসে সোপর্দ করার পরই উপরোক্ত অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদিকে, পারভেজ আহমেদের গ্রেফতারের তথ্য প্রকাশের পর প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে এক ধরনের ভীতির সঞ্চার ঘটেছে।

সর্বশেষ খবর