সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বগুড়ায় ধর্ষণ

সেই তুফান ও মতিনের অবৈধ সম্পদের খোঁজে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ার শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার কর্তৃক কিশোরী ধর্ষণ ও মা-মেয়ে নির্যাতনের ঘটনার পর তাদের অবৈধ অর্থের সন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত জুলাই মাসের শেষে তুফান সরকার ও মতিন সরকারের অবৈধ সম্পদের কথা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে দুদক প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করে। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক পদ থেকে বহিষ্কৃত তুফান সরকার ও তার আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা বড় ভাই বগুড়া শহর যুবলীগ নেতা (বহিষ্কৃত) আবদুল মতিন সরকারের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের অনুমতি চেয়ে প্রধান কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়,            গত ১৭ জুলাই আজিজুল হক কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির প্রলোভন দিয়ে এক ছাত্রীকে বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুরের নিজ বাসায় কৌশলে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে জাতীয় শ্রমিক লীগ বগুড়া শহর শাখার আহ্বায়ক তুফান সরকার। এরপর ঘটনা জানাজানি হলে ২৭ জুলাই বিচারের নাম করে শহরের বাদুরতলার বাসায় ধর্ষিতা কিশোরী ও তার মাকে মারপিট করে মাথা ন্যাড়া করে দেন তুফান সরকারের স্ত্রী আশা সরকারের বড় বোন স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকিসহ তার সহযোগীরা। আহত মা-মেয়েকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর হৈচৈ পড়ে যায়। ওই রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে মূল হোতা তুফান সরকারসহ তার চার সহযোগীকে। এ ঘটনায় ধর্ষিতার মা বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় তুফান সরকারকে প্রধান আসামি করে ১১ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, মাথা ন্যাড়া ও মারপিটের ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ মামলার অপর আসামি তুফানের স্ত্রী আশা, বড়বোন মার্জিয়া হাসান রুমকি, রুমকির বাবা, মা, তুফানের সহযোগীসহ ১১ আসামিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর কয়েক দফা তাদের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে দুজনের জামিন হয়েছে। মামলার ভিকটিম মা ও মেয়ে বর্তমানে নিরাপত্তার কারণে রাজশাহী ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তুফান ও মতিন সরকার দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে ক্ষমতা ব্যবহার করত। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জমি দখল, মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। এই সব অবৈধ ব্যবসা করে তারা দুই ভাই অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এদিকে তুফান সরকার ও মতিন সরকারের অর্থ আয়ের উেসর সন্ধানে নেমেছে দুদক বগুড়া কার্যালয়। কার্যালয়ের কর্মকর্তারা প্রাথমিক তদন্ত শেষে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের অনুমতি চেয়ে প্রধান কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় বগুড়া সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসের শেষে প্রথমে গণমাধ্যমে তুফান সরকার ও মতিন সরকারের অবৈধ সম্পদের সংবাদ প্রকাশিত হলে দুদক প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করে। এরপর বগুড়া কার্যালয় থেকে ২ আগস্ট প্রধান কার্যালয়ের মহাপরিচালক (তদন্ত) বরাবর চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে তাদের সম্পদ অনুসন্ধানের অনুমতি চাওয়া হয়। চিঠি পাওয়া মাত্রই অনুসন্ধানের কাজ শুরু করা হবে। দুদক বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, সম্পদের তথ্য অনুসন্ধানের অনুমতি চেয়ে প্রধান কার্যালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। সম্পদের তথ্য অনুসন্ধানের অনুমতি পাওয়া গেলে সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে তুফান সরকার ও মতিন সরকারকে। হিসাব জমা দিলে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করা হবে। এরপর জমা দেওয়া হিসাবের সঙ্গে মিল না হলে মামলার অনুমতি চেয়ে প্রধান কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হবে। এ ধরনের মামলায় দোষী হলে সর্বোচ্চ ১৩ বছরের শাস্তি হতে পারে।

সর্বশেষ খবর