বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভিমরুলী খাল ঘুরতে উপচে পড়া ভিড়

রাহাত খান, বরিশাল

ভিমরুলী খাল ঘুরতে উপচে পড়া ভিড়

নৌকা ও ট্রলার নিয়ে ভিমরুলী খালে ভিড় বাড়ছে পর্যটকদের —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠির মধ্যবর্তী খালের নাম ‘ভিমরুলী’। এ খালের চারপাশে রয়েছে পেয়ারা-আমড়া বাগান, নার্সারি আর সবুজ প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। যা দেখতে ভিড় জমাচ্ছে মানুষ। তারা দলে দলে ছুটে আসে নৌকা এবং ট্রলারে। ছুটির দিনে এখানে উপচেপড়া ভিড় জমে যাচ্ছে।

বরিশালের বানারীপাড়া, পিরোজপুরের নেছারাবাদ এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় পেয়ারা-আমড়া উৎপাদনের ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরের। নিচু জমিতে উঁচু আইল কেটে সেই আইলের ওপর সারি সারি পেয়ারা-আমড়া, নার্সারি এবং বিভিন্ন সবজির চাষ করেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। দেশের মানুষের পেয়ারা এবং আমড়াসহ বিভিন্ন সবজির উল্লেখযোগ্য অংশের জোগান দেওয়া হয় বরিশাল থেকে। ভূ-প্রকৃতিগতভাবে নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে এখানকার মানুষের কৃষি উৎপাদন, সংগ্রহ ও বাজারজাত করার পুরো কাজটিই হয়ে থাকে ছোট ছোট নৌকায়। স্থানীয় মানুষের প্রয়োজনেই ভিমরুলী খালে গড়ে উঠেছে দেশের একমাত্র ‘ভাসমান বাজার’। এই পেয়ারা-আমড়া বাগান, নার্সারি, সবুজ প্রকৃতি দেখা এবং এর পাশ দিয়ে নদী-খালে নৌকা-ট্রলারে করে ঘুরে বেড়ানো যে কোনো মানুষের জন্য অন্যরকম আকর্ষণের। এ বাস্তবতায় ওয়াকেবহালদের ভাষ্য, এ স্থানটি হতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। দর্শকদের ভাষ্য অনুযায়ী, এখানকার কৃষি, বাগান, নার্সারি পরিচর্যা, ফসল সংগ্রহ এবং বাজারজাত সবই হয়ে থাকে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায়। দূরদূরান্তের পাইকার-বেপারিরা খালে রাখা বড় বড় ট্রলারে এসে উৎসবমুখর পরিবেশে কৃষকের উৎপাদিত এসব পণ্য কেনেন। সব মিলিয়ে ঐতিহ্যবাহী ভিমরুলী ভাসমান বাজার হয়ে উঠেছে জীবন-জীবিকার জন্য নতুন আকর্ষণ। তাদের মতে, গ্রামবাংলার সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে মেশার এরচেয়ে ভালো সুযোগ আর দ্বিতীয়টি নেই। তাই মৌসুমের এ সময়ে বিভিন্ন সরকারি এবং সাপ্তাহিক ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত হয়ে ওঠে ভিমরুলী এলাকা।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রানী জানান, ভাসমান পেয়ারা বাজার দেখে অনেক ভালো লেগেছে। প্রতি বছর এই মৌসুমে তিনি এখানে বেড়াতে আসেন। এটাকে বলা যায় বরিশালের বড় হেরিটেজ। এখানে সবাই এলে ভালো লাগবে। কিন্তু অসুবিধা হচ্ছে কমিউনিকেশন। যখন সবাই বেড়াতে আসে, তখন নদীতে পর্যটকদের যানজট হয়। এতে তাদের পেয়ারা বাজারে একটু সমস্যা হয়। এ ছাড়া খাবারের সেই রকম ব্যবস্থা নেই, ট্রলারে-নৌকায় অতিরিক্ত ভাড়া রাখে। যতটুকু ভাড়া রাখার কথা তার চেয়ে বেশি রাখে। আর স্টুডেন্ট পেলে তো আরও বেশি রাখে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আশিকুজ্জামান এবং নাহিদা সুলতানা বলেন, তারা তাদের বিভাগীয় ছাত্রছাত্রীদের এবং কিছু সহকর্মী নিয়ে এ এলাকা ঘুরে বেড়িয়েছেন। এটা তাদের প্রথম ভ্রমণ। অত্যন্ত সুন্দর লেগেছে। অত্যন্ত মনোরম পরিবেশ। সবচেয়ে ভালো লেগেছে জায়গাটা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। পুরো ভ্রমণটাই রোমাঞ্চকর। একটু রিস্কি হলেও এখানে সবার আসা উচিত, কারণ এটা আমাদের ঐতিহ্য। পর্যটকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার জন্য এখানে প্রশাসনের আরও অ্যাকটিভিটি থাকা উচিত। ভিমরুলী ভাসমান বাজারের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী সঞ্জিত দারি বলেন, সারা বছর এ এলাকায় পর্যটক আসে। তবে আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাসে পর্যটকের উপচেপড়া ভিড় থাকে। পর্যটক আসার কারণে আমাদের এ অঞ্চলের মানুষ খুবই উপকৃত হচ্ছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বাড়তি গতি আসছে। আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখর কুমার সিকদার বলেন, পেয়ারা-আমড়ার মৌসুম হচ্ছে জুন-জুলাই-আগস্ট তিন মাস। এই তিন মাসে বহু পর্যটক আসেন। এখানকার পরিবেশ-প্রকৃতি দেখে মানুষ আনন্দ পায়। ইউপি চেয়ারম্যান শেখর বলেন, এটা এই এলাকায় যুগ যুগ ধরে চলে এলেও আগে দূর-দূরান্তের মানুষ এ বিষয়ে জানত না। তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে যতটুকু পেরেছি পর্যটকদের জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এখন সরকার যদি রাস্তাগুলো সংস্কার এবং একটি রেস্ট হাউসের ব্যবস্থা করে, তাহলে পর্যটকরা আরও স্বস্তি পাবেন। আরও বেশি মানুষ এখানে বেড়াতে আসবে। এতে এ অঞ্চল সমৃদ্ধিশালী হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর