শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

উন্নয়ন চাইলে নৌকায় ভোট দিন

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

উন্নয়ন চাইলে নৌকায় ভোট দিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান সুগারমিল মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা দেশের উন্নয়নের জন্য ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কারও দাবি করার প্রয়োজন নাই। আমি জাতির পিতার মেয়ে। আমি জানি, কীভাবে দেশের উন্নয়ন করতে হয়।’ গতকাল বিকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ানে রাজশাহী চিনিকল মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার ৩০ মিনিটের ভাষণে সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুই মেয়াদে রাজশাহীর কী কী উন্নয়ন হয়েছে, তাও তুলে ধরেন তিনি। এ সময় তিনি আগামীতে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনার জন্য তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়ন চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদেরই ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে হবে। কেউ যেন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য অভিভাবক, শিক্ষক ও মসজিদের ইমামদের সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আর বাংলা ভাইয়ের জন্ম হয়। মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যায়। এমনকি জনগণের টাকা, এতিমখানার টাকাও তারা চুরি করে খায়। তিনি বলেন, দেশে শান্তি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তার সরকারের লক্ষ্য। জাতির পিতার ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তাই উত্তরবঙ্গে এখন আর কোনো মঙ্গা নেই। রাজশাহীর উন্নয়নে যা যা করা দরকার তার সবই করবে সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ১১০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হচ্ছে। রাজশাহীতেও এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। ইতিমধ্যে সরকার এখানে আইটি পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। সেখানে কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ নানা ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন হবে। এ অঞ্চলের কৃষি নিয়ে আরও বেশি গবেষণা করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরও সক্ষমতা বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তার সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ২০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করছে। বিনা পয়সায় দেওয়া হচ্ছে বই। দেশের এক কোটি ৭৩ লাখ শিক্ষার্থী এখন সরকারের বৃত্তি পাচ্ছে। এক কোটি ৩০ লাখ মায়ের মোবাইলে চলে যাচ্ছে বৃত্তির টাকা।

পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াসিন আলীর সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, আয়েন উদ্দিন ও এনামুল হক।

৭০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন : এর আগে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৭০০ কোটি টাকার মোট ২২টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী যে ১৬টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হলো বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্ক। রাজশাহী মহানগরীর নবীনগর এলাকায় ৩১ দশমিক ৬৩ একর জমিতে ২৩৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্কটির নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হবে ২০১৯ সালের জুনে। ডিজিটাল ইকোনমিক হাব হিসেবে নির্মিতব্য এই পার্কে প্রায় ১৪ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। এখানেই তৈরি হবে বিশ্বমানের সফটওয়্যার। এ ছাড়া ‘তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত বেসরকারি কলেজ (আইসিটি) সমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গুলগোফুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২৩ কোটি ৩৫ লাখ ৫৩ হাজার ৮২ টাকা। এ ছাড়া ২৬৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর সোনাইকান্দি থেকে বুলনপুর পর্যন্ত শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ, ২ কোটি ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা ব্যয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, রাজশাহী নগরীর তালাইমারী চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্কয়ার নির্মাণ, নগরীর কোর্ট স্টেশন থেকে বাইপাস এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটোর বাইপাস পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্তকরণ, আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী সরকারি শিশু হাসপাতাল, ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) বারনই আবাসিক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প ও ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রান্তিক আবাসিক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুলিশকে আইনের রক্ষকের ভূমিকায় দেখতে চাই : এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী সারদা পুলিশ একাডেমিতে যান। সেখানে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৪তম বিসিএস (পুলিশ) শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের শিক্ষাসমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশকে আইনের রক্ষকের ভূমিকায় দেখতে চাই। দেশের প্রচলিত আইন, সততা ও নৈতিক মূল্যবোধই হবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পথ প্রদর্শক। প্যারেড পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী প্রশিক্ষণকালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। ৩৪তম বিসিএসের ১৪১ জন কর্মকর্তা কর্মজীবনে প্রবেশ করছেন। এর মধ্যে ২৬ জন নারী রয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর