শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

অসুস্থ রোহিঙ্গাদের ঠাঁই চমেক হাসপাতালে

ভর্তি আছেন ৭৮, সেবা নিয়েছেন ২৩ জন

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

অসুস্থ রোহিঙ্গাদের ঠাঁই চমেক হাসপাতালে

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মাইন বিস্ফোরণে শরীরের অঙ্গ হারানো শিশু কক্সবাজার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন —এএফপি

মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার রাশিধং উপজেলার শোয়াইবপাড়ার তাসলিমা (৩০)। নিজ বাসভূমে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলিবিদ্ধ হন বাঁ হাতে ও বাঁ পায়ে। অতঃপর দেখেন ভয়ানক চিত্র। নিজ জন্মভূমিতে অমানুষিক নির্যাতন ও মানবিক বিপর্যয়ের মুখে কোনোরকম প্রাণ নিয়ে চলে আসেন চট্টগ্রামে। পরে চিকিৎসার জন্য তার ঠিকানা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি ওয়ার্ডে। বুধবার রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে তাকে ভর্তি করা হয়। তাসলিমা বলেন, ‘কোথায় কেন গুলিবিদ্ধ হয়েছি তা জানি না। পরে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’ তাসলিমার মতো বিপর্যয়ের হাত থেকে বেঁচে আসা অসুস্থ রোহিঙ্গাদের ঠাঁই হচ্ছে চমেক হাসপাতালে। এখানেই তারা পাচ্ছেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা। হাসপাতাল থেকে দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে ওষুধ ও খাবার। চিকিৎসা নিয়ে টেকনাফেও ফিরেছেন অনেকে। চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রে জানা যায়, ২৫ আগস্ট থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযানের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ও বিতাড়িত হয়ে পালিয়ে আসা নানা রোগে আক্রান্ত ১০৩ জন নারী-পুরুষ-শিশু চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়। আর চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছাড়েন ২৩ জন। বর্তমানে ভর্তি আছেন ৭৮ জন। ৩১ আগস্ট টেকনাফে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোহিঙ্গা শিশু মো. শোয়েব (১২) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। শোয়েব মিয়ানমারের মংডু এলাকার এনায়েত উল্লাহর ছেলে। টেকনাফের সোহানী ক্যাম্পে থাকত এই শিশু। এ ছাড়া ২৬ আগস্ট ভোরে মিয়ানমার থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আসা মুসা নামের একজন মারা যান। সর্বশেষ বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে বাঁ হাত ও বাঁ পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আসা তাসলিমাকে হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, ‘রাখাইন থেকে আসা রোগীদের আমরা মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করে জরুরি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ ও খাবার হাসপাতাল থেকেই বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে যেসব ওষুধ থাকে না সেগুলো আমরা রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে নগদ অর্থে কিনে তাদের দিচ্ছি। তাদের সেবায় কোনো ত্রুটি থাকছে না। সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।’ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘গতকাল পর্যন্ত ১০৩ জন রোহিঙ্গা নানাভাবে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। ইতিমধ্যে চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ২৩ জন। তবে সরকারের সিদ্ধান্তমতে চিকিৎসা শেষে সবাইকে টেকনাফে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৭৮ জন। এর মধ্যে ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে একজন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে একজন, ১১ নম্বরে চারজন, ১২ নম্বরে দুজন, ১৪ নম্বরে একজন, ১৯ নম্বরে দুজন, ২৪ নম্বরে আটজন, ২৫ নম্বরে তিনজন, ২৬ নম্বরে ৩৮ জন, ২৭ নম্বরে আটজন, ২৮ নম্বরে নয়জন এবং ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন ভর্তি আছেন। গতকাল দুপুরে ২৬ নম্বর অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৮ জন। এ ওয়ার্ডের সহযোগী অধ্যাপক ডা. চন্দন কুমার দাশ বলেন, ‘ভর্তি সবাইকে প্রয়োজনীয় সব সেবা দেওয়া হচ্ছে। তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সব চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন।’ হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোহিঙ্গারা চিকিৎসা পেয়ে খুশি। মংডু উপজেলার বাঘঘোনা গ্রামের আমান উল্লাহ (২৮) গুলিবিদ্ধ হয়ে ভর্তি হন হাসপাতালে। তিনি বলেন, ‘৫ সেপ্টেম্বর ডান হাতে গুলিবিদ্ধ হই। অনেক কষ্টে এখানে এসে ভর্তি হয়েছি। এখন ভালো হওয়ার পথে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর