রোহিঙ্গারা অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক
—কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ
![](/assets/archive/images/Print-Edition/2017/September/17-09-2017/Bd-pratidin-17-09-17-F-09.jpg)
তিনি বলেন, ‘আমরা কিছু সময়ে বা দিনের জন্য মানবতা দেখাতে পারি। কিন্তু চিরদিনের জন্য পারি না। আমরা তো নিজের দেশকে ধ্বংস করতে চাই না। রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে যে জঙ্গিবাদ ও ইয়াবা ছড়িয়ে পড়বে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে। মায়ানমার থেকে এগুলো আমাদের দেশে আসছে। এগুলো কীভাবে প্রতিরোধ করব। এ অবস্থা আমরা অনেক দিন চালিয়ে যেতে পারি না। বিষয়টি বাংলাদেশ জাতিসংঘের কাছে তুলে ধরেছে। প্রধানমন্ত্রীও এবার জাতিসংঘ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিশ্বনেতাদের সহযোগিতা চাইবেন। বিশ্ববিবেক জেগে উঠবে এটাই প্রত্যাশা করছি।’
কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান চাই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে আমরা দেব না। বিশ্ববিবেক জাগলে রোহিঙ্গারা বাঁচবে। মিয়ানমারের নাগরিকদের আমরা বহন করতে পারব না।’
কূটনৈতিকভাবে ওদের ফেরত পাঠাতে হবে
—এ কে আজাদ
মিয়ানমারে মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর চলমান বর্বর গণহত্যা নিয়ে সৌদি আরব, কাতারসহ মুসলিম বিশ্বের বড় বড় দেশ চুপ থাকায় মর্মাহত ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য। এই রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় বাংলাদেশে আসছেন না। তারা আসতে বাধ্য হচ্ছেন। আজ ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এ কে আজাদ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য মুসলিম বিশ্বের দেশগুলো কোনো সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছে না। আমি মনে করি তাদেরও এগিয়ে আসা উচিত। রোহিঙ্গা শিশুদের মায়ের সামনে হত্যা করা হচ্ছে। তাদের কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। তাই জীবন বাঁচানোর তাগিদে তারা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন। এ অবস্থায় তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দাযিত্ব।’
দেশের এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে এবং তার সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ‘আমাদের খাবারটুকু রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাব। আমাদের ১৬ কোটি মানুষের সঙ্গে যদি ১০ লাখ অতিরিক্ত রোহিঙ্গা থাকেন, তাহলে সেটুকু আত্মত্যাগ আমরা করতে পারব। আবার আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেব। পাশে থাকব। সবই ঠিক। পাশাপাশি আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে কূটনৈতিকভাবে রোহিঙ্গাদের সসম্মানে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। তাদের জন্য যেন পৃথক নিরাপদ এলাকা তৈরি করা হয় এ বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করতে হবে।’
এফবিসিসিআইর সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি আমাদের জনগণকেও সজাগ থাকতে হবে। রোহিঙ্গারা যেন সন্ত্রাসী কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে না পারেন, সে বিষয়ে সরকার সজাগ আছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গারা যাতে অন্য স্থানে চলে যেতে না পারেন, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। আমাদের অর্থনৈতিক দায়ভার বিবেচনা করলে, এবার দুর্যোগের কারণে খাদ্যে যথেষ্ট সংকট হয়েছে। হাওরে বন্যার কারণে ২০ লাখ টন খাদ্যের ঘাটতি পড়েছে। সেই খাদ্য আমরা আমদানি করছি। সেই খাবার থেকে আবার ১০ লাখ মানুষ অতিরিক্ত হয়ে পড়েছেন। এটা আমাদের জন্য বিরাট চাপ তৈরি করছে। উত্তরাঞ্চলে বন্যায় বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল। এর পরও রোহিঙ্গা সংকট মানবিক বিষয় হিসেবে আমরা গ্রহণ করব।’
এ কে আজাদ প্রধানমন্ত্রীর কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজেও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন। তিনি চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। আমরাও প্রতিদিন যে দৃশ্য দেখছি, তাতে আমরা নিজেরাও খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছি। আমরা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি। প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের মানুষ রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমি মনে করি এই সাহায্যের হাত অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সাহায্যও যাতে আসে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তবে আমরা খুবই মর্মাহত হচ্ছি, মুসলিম বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশ সৌদি আরব, কাতারসহ অনেকে রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে মুখ খুলছে না। কোনো সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছে না। আমি মনে করি তাদেরও এগিয়ে আসা উচিত। যেভাবে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক আসছে সেভাবে সৌদি আরবসহ অন্য মুসলিম দেশগুলো এগিয়ে আসছে না।’
এ কে আজাদ বলেন, ‘আমি সাধুবাদ জানাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে, তারা খুব শক্ত অবস্থান নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘ নিন্দা প্রস্তাব করেছে। আশা করি ভারত এবং চীনও আমাদের পাশে থাকবে। ইতিমধ্যে ভারত তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে আসছে। আমি মনে করি চীনও ভারতের পথ অনুসরণ করবে। এই দুটি বড় দেশকে যদি আমরা পাশাপাশি পেয়ে যাই, তাহলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করা বাংলাদেশের জন্য আরও সহজ হয়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সব তুলে ধরতে হবে
—শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের মুখে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপ সামলানো অবশ্যই এ দেশের অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তার মতে, ‘সবকিছুর ওপরে মানবতা। দেশ হিসেবে মানবতা আমাদের কাছে অনেক বড় বিষয়।’ বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের তুলে ধরতে হবে, যাতে দ্রুত এ সমস্যার যৌক্তিক সমাধান হয়। তবে সবকিছুতেই এই রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের চাপের মুখে রাখবে এবং চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াবে। এর পরও দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয়ভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে।’ এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক দরিদ্র মানুষ আছেন। আমরা যখন দারিদ্য দূরীকরণের সংগ্রাম করছি তখন অর্থনীতি ও পরিবেশগতভাবে বাড়তি চাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গা সমস্যা। এর পরও মানবতার বিষয়টি সবার ওপরে। এখানে কোনো অর্থনীতি, পরিবেশ বা অন্য কোনো সূচকই কাজ করবে না।’ এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতার মতে, ‘নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাপের মধ্যে ফেলবেন রোহিঙ্গারা। শুধু চাপই নয়, এরা বাড়তি চাপ হিসেবে বোঝা হয়ে থাকবেন। যদিও আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার ইতিমধ্যে যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছেন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আশা করছি বিশ্বনেতারাও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থেকে মিয়ানমারকে চাপ দেবেন।’