রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঝুঁকিতে দুই লাখ রোহিঙ্গা শিশু

পাচার ও যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

তেরো বছর বয়েসি রোহিঙ্গা শিশু আয়েশা। মিয়ানমার সরকারের বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়ে পরিবারের সঙ্গে কক্সবাজারে এসেছে। কিছুক্ষণের জন্য আয়েশা তার পরিবার থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। একা পেয়ে হঠাৎ করে স্থানীয় এক অপরিচিত লোক তাকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দেয়। বিয়েতে অসম্মতি জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই লোকটি তাকে অনবরত চড় মারতে শুরু করে। সে চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন দৌড়ে এলে লোকটি পালিয়ে যায়।

অন্যদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে অনেক শিশুই পাচারকারীদের খপ্পরে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে জামিলা (১১) ও ফাতিমা (৭) নামের দুই রোহিঙ্গা বোন রাস্তার পাশের অস্থায়ী শরণার্থী ক্যাম্প থেকে শিশু পাচারকারীদের ফাঁদে পড়তে যাচ্ছিল। এই দুই বোনকে কয়েকজন লোক খাবার দেওয়ার কথা বলে মাইক্রোবাসে ওঠানোর চেষ্টা করছিল। সে সময় স্থানীয় লোকজন বিষয়টি বুঝতে পেরে মেয়ে দুটিকে পাচারকারীদের হাত থেকে রক্ষা করে। মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা দুই লাখের বেশি শিশু এখন ঝুঁকির মধ্যে আছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ এ কথা জানায়। মিয়ানমার থেকে যেসব শিশু বাংলাদেশে এসেছে তারা কয়েকদিন ধরে নির্ঘুম রাত পার করে হেঁটে বাংলাদেশে এসেছে। তারা ক্ষুধার্ত ও দুর্বল। তাদের অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখন তাদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন। একইসঙ্গে তাদের দরকার মানসিক চিকিৎসা। ইউনিসেফ বাংলাদেশের তথ্যে, গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১১২৮জন শিশু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এমন পরিবার বিচ্ছিন্ন শিশুদের খুঁজে বের করে ইউনিসেফ তাদের নিজস্ব নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে রাখছে। ইউনিসেফ বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধিত্বকারী এডোয়ার্ড বেইগবেদার বলেন, পানিবাহিত রোগের জন্য ক্যাম্পে থাকা শিশুরা ঝুঁকিতে আছে। আমাদের এই শিশুদের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে। 

এছাড়াও রোহিঙ্গা শরনার্থী শিশুদের সুরক্ষার জন্যে কার্যক্রম জোরদার করেছে ইউনিসেফ। আর নতুন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে অসুস্থ নবজাতক, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের শনাক্ত করে তাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠাতেও সাহায়তা করছে। এরই মধ্যে সংস্থাটি ট্রাকভর্তি জরুরি পানি, স্যানিটেশন সামগ্রী হাজার হাজার রাহিঙ্গা শিশুদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই শিশু। আগামী চার মাসে এই শিশুদের সহায়তায় ইউনিসেফ সাত দশমিক ৩ মার্কিন ডলার অর্থ সাহায্য দেবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর