রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মেয়র ও নির্বাহী কর্মকর্তার দ্বন্দ্ব রূপ নিল প্রকাশ্যে!

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীবের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। উভয়ের মধ্যে এ নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়েছে। বিষয়টি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পর্যন্ত গড়াচ্ছে। এ অবস্থায় সিসিকের উন্নয়নকাজ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, সিলেট নগরীর রিকাবীবাজার থেকে পুলিশ লাইন্স হয়ে মীরেরময়দান পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজ গত বছরের প্রথম দিকে শুরু হয়। অর্থমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এ কাজের জন্য ১১ ডিসিমেল জায়গাও অধিগ্রহণ করে। যখন এ কাজ শুরু হয়, তখন কিবরিয়া হত্যায় কারান্তরীণ ছিলেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীবের তত্ত্বাবধানে এ কাজ চলে। চলতি বছরের শুরুতে আরিফ কারামুক্ত হওয়ার আগে রিকাবীবাজার থেকে পুলিশ লাইন্স পর্যন্ত কাজ শেষ হয়। বিভিন্ন কারণে বাকি সড়কে কাজ শেষ হয়নি। সৌন্দর্যবর্ধনে রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে অনুসরণ করে সড়কে ডিভাইডারের মধ্যে গাছের আকারের বেষ্টনী নির্মাণ করা হয়। নগরীর উপশহর থেকে সোবহানীঘাট সড়কেও একইরকম ডিভাইডার দেয় সিসিক। সৌন্দর্যবর্ধনমূলক এ কাজ নগরবাসীর কাছে প্রশংসিত হয়েছে। রাজশাহী থেকে আসা শ্রমিকরা গতকাল সকালে পুলিশ লাইন্স-মীরেরময়দান সড়কে ডিভাইডারে সৌন্দর্যবর্ধন কাজ ফের শুরু করেন। খবর পেয়ে মেয়র আরিফ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, এ সময় মেয়র আরিফ ও সেখানে উপস্থিত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীবের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এনামুল হাবীব মেয়রকে বলেন, ‘এ কাজের মেয়াদ গত জুনে শেষ হয়েছে। সময়মতো কাজ শেষ না হলে মন্ত্রণালয়ে জবাবদিহি করতে হয়। এভাবে কাজ বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি।’ এর জবাবে আরিফ তাকে ধমক দিয়ে কথা বলেন বলে জানিয়েছে সূত্রটি। এদিকে গতকাল দুপুরে নিজের বাসভবনে কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মেয়র আরিফ। বৈঠকসূত্র জানায়, এনামুল হাবীবের সঙ্গে সংগঠিত ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করেন আরিফ। পাশাপাশি এনামুল হাবীবের বিপক্ষে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে একটি কাগজে কাউন্সিলরদের স্বাক্ষর দিতে বলেন তিনি। তখন কাউন্সিলররা বিষয়টি সিসিকের মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থাপনের পরামর্শ দেন মেয়রকে। সূত্রটি আরও জানায়, সম্প্রতি হজে যাওয়ার আগে আরিফ প্যানেল মেয়রদের কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে এনামুল হাবীবকে দায়িত্ব দিয়ে যাওয়ায় কাউন্সিলররা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বৈঠকে উপস্থিত কাউন্সিলর দিলওয়ার হোসেইন সজীব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে মেয়রের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। নিজের সুখ-দুঃখের কথা বলতে মেয়র বাসায় ডেকেছিলেন। বৈঠকে মেয়র জানিয়েছেন, প্রধান নির্বাহীর বিষয়টি তিনি অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন। আগামীকাল (আজ) তিনি ঢাকায় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। এ ছাড়া আগামী বুধবার সিসিকের মাসিক সমন্বয় সভা করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে থাকা আরেক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে ঝামেলা নিয়ে কথা বলতে মেয়র বাসায় ডেকেছিলেন। আমরা বাসায় না বসে সমন্বয় সভা ডেকে আলোচনা করতে বলেছি। এ ব্যাপারে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিকাবীবাজার-মীরেরময়দান সড়কের কাজ শেষ করতে না পারায় এখন দ্রুতগতিতে কাজ শেষ করতে হবে। তবেই মেয়রের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়ে যাবে। সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, পুলিশ লাইন্স থেকে মীরেরময়দান সড়কের পিচ ও ড্রেনের কাজ শেষ হয়নি। প্রধান কাজ শেষ না করে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করলে জনমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাসায় বৈঠক ডেকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিপক্ষে অনাস্থা প্রস্তাব আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা সঠিক নয়। তিনি কোনো জনপ্রতিনিধি নন যে, তার বিপক্ষে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে হবে। নিজেদের ওয়ার্ডের উন্নয়নকাজের ব্যাপারে আলোচনা করতে কাউন্সিলররা এসেছিলেন। প্রসঙ্গত, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রায় দুই বছর কারান্তরীণ ছিলেন। তখন নগরীর উন্নয়নসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীবের তত্ত্বাবধানেই হয়।

সর্বশেষ খবর