শিরোনাম
শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ধ্বংসের মুখে ৬০ হাজার একর বনভূমি

বন পাহাড়ে রোহিঙ্গা বসতি

মোস্তফা কাজল, কক্সবাজার থেকে ফিরে

ধ্বংসের মুখে ৬০ হাজার একর বনভূমি

বন-পাহাড়ে নতুন নতুন রোহিঙ্গা বসতি গড়ে উঠায় ধ্বংসের মুখে তিন জেলার ৬০ হাজার একর বনভূমি। এসব বন-পাহাড়ের বনজসম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে এক হাজার কোটি টাকার ওপর। মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলার পাহাড় ও বনভূমিতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বন বিভাগ বলছে, প্রতিদিন লাখ লাখ রোহিঙ্গার মলত্যাগ ও বর্জ্যের কারণে এসব এলাকার বনভূমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ। এছাড়া বসতি গড়তে গাছ-গাছালি কেটে বিরান ভূমিতে পরিণত হতে যাচ্ছে তিন জেলার প্রাকৃতিক বনভূমি। এছাড়া এসব অঞ্চলের বনে চারা গাছ রোপণ করা হলেও বেড়ে উঠবে না। বিলীন হয়ে যাবে বনজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ। তিন জেলায় বনভূমির পরিমাণ ৯০ হাজার ৮৭০ একর। ইতিমধ্যে টেকনাফের রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকায় রোহিঙ্গা বসতি স্থাপন করায় তিল ধারণের ভূমি অবশিষ্ট নেই।

বন বিভাগের তথ্য মতে, এসব বন থেকে গড়ে প্রতি বছর কাঠ নিলামের মাধ্যমে সরকারের আয় হয় প্রায় ৫০ লাখ টাকার মতো। এবছর তেমন একটা হবে না। ফলে সরকারকে আয় থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকতে হবে অনেক বছর। বন বিভাগের মনিটরিং গ্রুপের তথ্য মতে, বন ও পাহাড়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের বসতি গড়ে ওঠায় কক্সবাজার জেলায় ২২ হাজার, বান্দরবানে ১৮ হাজার এবং রাঙামাটির ২০ হাজার একর বনভূমি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটির বিভিন্ন পাহাড়ে এবং বনভূমিতে বসবাস শুরু করেছে। এছাড়া হিমছড়ি, উখিয়া ও টেকনাফ ফরেস্ট বন বিট রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে। এ এলাকার টিলা এবং পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। প্রাথমিক হিসেবে বন বিভাগের দেড় লাখ গাছ-গাছালি কাটা হয়েছে। এসব পাহাড় ও বনে ফুল, ফল ও বাহারি গাছ-গাছালি ছাড়া আরও আছে দুর্লভ ২৯০ প্রজাতির উদ্ভিদ। ৫৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৮৬ প্রজাতির পাখি, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১৩ প্রজাতির উভচর প্রাণী। সরেজমিন দেখা গেছে, রোহিঙ্গাদের বসতির কারণে টেকনাফের বাহারছড়া, হ্নীমা, সুবরাং ও হোয়াইক্যং এলাকার টিলা ও বন-বাদাড়ে তিল ধারণের ভূমি অবশিষ্ট নেই। এসব এলাকার গাছ কেটে বসতি তৈরি চলছে। এছাড়া রোহিঙ্গারা বনের মূল্যবান কাঠ-বাঁশ কেটে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিচ্ছে। এসব বনের বাঁশঝাড় উজাড় হওয়ার পথে। বনের ছন যে যার মতো কেটে নিয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, তিন সপ্তাহ ধরে কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটির পাহাড়ি এলাকায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। বন বিভাগের তথ্য মতে, রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার মনাইপাড়া, গোদারপাড়, ডাক্তারছোলা, ডাইলংপাড়া, চৌধুরীপাড়া, নাকাটা, তলতলা, দোচালা, ডিলাইট, চিকনছড়া, কচুপাড়া এলাকায় বসতি গড়ে তুলছে রোহিঙ্গারা। এছাড়া রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের বৃন্দাবনপুর, ওয়াহেদ্যাখীল, বৃকবানুপুর, বানারস, জানিপাথর, গলাচিপা, হলদিয়া এলাকায় রোহিঙ্গাদের নতুন নতুন বসতি দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি বসতি গড়ে তুলছে রাঙ্গুিনয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। এছাড়া উপজেলার কোদালা, নারিশ্চা, হোচনাবাদ, ইসলামপুর, রাজানগর, পোমরা, বেতাগি ও সরফভাটাসহ হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারা ও কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়েছে। রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের কোরবান আলী বলেন, বেতবুনিয়ার পাহাড়ি এলাকায় কয়েকশ রোহিঙ্গা পরিবার বসতি গড়ে তুলছে। রাউজানের কয়েকটি ইউনিয়নের গহিন পাহাড়েও রোহিঙ্গা বসতি গড়ে তুলেছে। টেকনাফ উপজেলার কুতুপালং ইউনিয়নের খাজার টিলার পাহাড়ি এলাকায় বসতি গড়ে তোলা রোহিঙ্গা পরিবারের বৃদ্ধা ছুরা খাতুন বলেন, প্রাণ বাঁচাতে নিকট আত্মীয়সহ চার পরিবারকে নিয়ে ১২ দিন আগে এখানে এসেছি। এখন বনের কাঠ-বাঁশ আর ছন দিয়ে কোনো রকমে ঘর বানিয়ে থাকছি। সাত দিন আগে এ ইউনিয়নের পাহাড়ে একসঙ্গে বসতি গড়েছে আরও শতাধিক পরিবার। বনের বাঁশ-কাঠ-ছন কেটে ও জঙ্গল পরিষ্কার করে বসবাস করছেন তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর