শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
অন্যরকম

ঐতিহ্যের পেশা চুন তৈরি

দিনাজপুর প্রতিনিধি

ঐতিহ্যের পেশা চুন তৈরি

দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে অনেক পুরনো রীতি অতিথি আপ্যায়নে পান খাওয়ানোর। পান খেতে সুপারি লাগে আরও লাগে চুন। আর এই পানকে স্বাদ এবং পূর্ণাঙ্গ করে তোলে এ চুন। শামুক-ঝিনুকের খোলস থেকে তৈরি চুনের কদর বেশি।

আর এই চুন তৈরির এলাকার নাম চুনিয়াপাড়া। দিনাজপুর-ফুলবাড়ী মহাসড়কের দিনাজপুর শহর থেকে ৫/৬ কিলোমিটার দূরে শশরা ইউপিতে অবস্থিত এই চুনিয়াপাড়া। এক সময় এই এলাকার ঘরে ঘরে সবাই চুন তৈরি করত। কালের বিবর্তনে অনেকে পেশা ছেড়ে অন্য পেশাতে চলে গেলেও এখনো ৭০ পরিবার এই ঐতিহ্যগত পেশা ধরে রেখেছেন। তবে আগের চেয়ে এখন কম লাভ হয়। যেহেতু শামুক-ঝিনুকের খোলস থেকে তৈরি চুন ছাড়াও বাজারে পাথরের চুনও পাওয়া যায়। দিনাজপুর অঞ্চলে নদী-নালা-জলাশয় কমে যাওয়ায় শামুক-ঝিনুক কম পাওয়া যায়। তাই বেড়ে গেছে শামুক-ঝিনুকের খোলসের দাম। শামুক-ঝিনুকের খোলস থেকে তৈরি করা চুন বিক্রিতে এ কারণে লাভ কমে গেছে। চুনিয়াপাড়ায় গেলেই দেখা যায়, রাস্তার পাশে শামুক-ঝিনুকের খোলস পোড়ানোর বড় বড় মাটির চুলা কিংবা দেখা যাবে কেউ না কেউ চুলাতে শামুক-ঝিনুকের খোলস ঢালছেন। অথবা বাড়ির মধ্যে পোড়ানো শামুক-ঝিনুক থেকে চুন তৈরির জন্য। চুনিয়াপাড়ার সুবাসী বালা জানান, ক্রয় করে আনা শামুক-ঝিনুকের খোসা বাছাই করে নিতে হয়। বাছাইয়ের পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হয় এগুলো। এরপর শামুকগুলো পোড়ানো হয়। পোড়া শামুক-ঝিনুক চালুনি দিয়ে বেছে, পানি মিশিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় চুন। সেই চুন পাত্রে ভর্তি করে স্বামী বিশু চন্দ্র এবং ছেলে নিখিল চন্দ্র বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। সজিব চন্দ্র ও সেন্ধু বালা জানান, এ অঞ্চলের বিভিন্ন নদী-নালা থেকে শামুক সংগ্রহ করা হয়। আমরা ওই শামুক-ঝিনুক ক্রয় করি। আগের তুলনায় দাম বেড়েছে। এক কেজি শামুক-ঝিনুকের খোলস ১৪/১৫টাকা কেজি দরে প্রতি মণ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পড়ে। জ্বালানি খড়িসহ প্রতিকেজি চুনের উৎপাদন খরচ হয় ২৫ টাকা। এবং বিক্রি করা হয় ৩০ টাকা কেজি দরে। নিখিল চন্দ্র জানান, চুন তৈরিতে কষ্ট থাকলেও লাভও আছে। তবে স্বল্প পুঁজিতে হুমকির মুখে পড়েছে চুনিয়াদের পূর্ব পুরুষের এ পেশা। তাই চুন তৈরির পেশায় জড়িত সবাইকে সরকারের পক্ষ থেকে সহজ শর্তে ঋণ দিলে উপকৃত হতো।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর