সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ১

দখলদাররা গিলে খাচ্ছে বনের জমি

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

দখলদাররা গিলে খাচ্ছে বনের জমি

বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের আওতাধীন শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী রেঞ্জের অধীনে রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, চাউতলী ও কালাছড়া বনবিট। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীরা সংরক্ষিত বনের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও কালাছড়া বনবিটের প্রায় ৫২৫ একর জমি দখল করে রেখেছে। এরমধ্যে লাউয়াছড়া বনবিটে  রয়েছে ৬৫.৭০ একর, বাগমারা এলাকায় ৯০ একর ও কালাছড়া বনবিটে ৩৭০ একর।  বনের এসব জমিতে রয়েছে শতাধিক অবৈধ দখলদার। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ উপেক্ষা করে দখলদাররা দখলকৃত জমির প্রাকৃতিক বন উজার করে গড়ে তুলেছে ঘরবাড়ি, লেবু, আনারস ও কাঁঠাল বাগান। ১৯৯৬ সালে এই বনের কমলগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ভানুগাছ অংশের ১২৫০ হেক্টর এলাকাকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই বছর ইউএসএইডের অর্থায়নে নিসর্গ সাপোর্ট প্রজেক্ট জাতীয় উদ্যানে এক জরিপ পরিচালনা করে বনাঞ্চলের লংগুরপাড়, বাগমারা, ছাতকছড়া এলাকায় ৫৫৬ একর বনভূমি দখল হয়ে গেছে বলে রিপোর্ট প্রদান করে। ২০১২ সালের  ১২ জুন কালাছড়া ও লাউয়াছড়া বনের ৭০০ একর জমি জবরদখল  শিরোনামে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে ওই বছরের  ১৬ অক্টোবর সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দেত্তয়া হয়। জানা গেছে, দীর্ঘ ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও শুরু হয়নি লাউয়াছড়া ও কালাছড়া বনাঞ্চলের তদন্ত কাজ। বন বিভাগ থেকে দখলদারদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলেও তদারকির অভাবে অধিকাংশ মামলার রায় দখলদারদের পক্ষে যাচ্ছে। আর বছরের পর বছর ধরে চলতেই থাকে এসব মামলা। আবার উল্টো দখলদারাই বন কর্মকর্তাদের উপর মামলা করার নজিরও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, এই দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ধংসের মুখে পড়ছে। পাশাপাশি বন্যপ্রাণীরা হারাচ্ছে তাদের আবাসস্থল। বন দখলের ফলে বনের পরিধি ছোট হয়ে আসায় বনাঞ্চলের প্রাণীরা লোকালয়ে বেরিয়ে পড়ছে। মিশ্র-চিরহরিৎ লাউয়াছড়া রিজার্ভ ফরেস্টে রয়েছে প্রায় ৪০৭ প্রজাতির জীব ও কীট-পতঙ্গ-অনুজীব, ১৬৭ প্রজাতির বৃক্ষ-গুল্ম-লতা, ৬ প্রজাতির বানরসহ ২০ প্রজাতির স্তন্যপ্রাণী, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ৪ প্রজাতির উভচর এবং ৬ প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী। লাউয়াছড়াসহ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল কমিটির সাবেক সদস্য আনন্দমোহন সিংহ জানান, শুধু লাউয়াছড়া বনবিটেই দখককৃত বনভূমির পরিমাণ হবে ৫০০ হেক্টর। দখলদাররা ঘরবাড়ি, গাছপালা লাগিয়ে বসতিস্থাপন করে লাউয়াছড়ার বিরাট ক্ষতি সাধন করছে। সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান বলেন, নতুন করে লাউয়াছড়ার বনের কোনো জমি দখল হয়নি। যেগুলো হয়েছে তা ৪০/৫০ বছর আগে। আমরা সবগুলো জমি উদ্ধারের চেষ্টা করছি। দুই বছরে ২০ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, লাউয়াছড়া ও বাগমারা এলাকায় ১৫৫ একর জমি ১০৬ জন লোক দখল করে ঘরবাড়ি স্থাপন করেছে। ওইসব দখলদাররা বন কর্মকর্তাদের আসামি করে আদালতে স্বত্ব মামলা করেছে। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দো বলেন, লাউয়াছড়া থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দুই বছরে কিছু জমি থেকে দখলদাররের উচ্ছেদ করে ফলজ গাছ রোপণ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর