বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে মিরপুরের চার খাল

বাড়িঘর, বস্তি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, খালে সড়ক নির্মাণসামগ্রী ও বাসাবাড়ির ময়লা

জিন্নাতুন নূর

হারিয়ে যাচ্ছে মিরপুরের চার খাল

ময়লা-আবর্জনায় হারিয়ে গেছে কালশী সাংবাদিক আবাসিক এলাকার এই খালটি

মিরপুর ১১ নম্বর ই ব্লক এলাকা। স্থানীয়দের কাছে তা সাংবাদিক কলোনি নামেই পরিচিত। আর এই কলোনির প্রধান সড়কের পাশেই ‘সাংবাদিক আবাসিক এলাকা খাল’-এর অবস্থান। এ খালের ঠিক পাশেই খালের নামে একটি কংক্রিটের ফলক নির্মাণ করা হয়েছে। খালে কোনো প্রকার ময়লা-আবর্জনা না ফেলার জন্য নির্দেশাবলি থাকলেও খালের পাশে বসবাসকারী বাসিন্দারা সে নির্দেশের তোয়াক্কা করছেন না। ফলে আশপাশের ঘরবাড়ির ময়লা-আবর্জনা থেকে শুরু করে রাস্তা মেরামতের নির্মাণসামগ্রী, প্লাস্টিকের ব্যাগ-বস্তা, এমনকি সেই এলাকার ময়লাবাহী গাড়িগুলোর ময়লাও সরাসরি ফেলা হচ্ছে সেই খালে। এতে পুরো খালই পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। খালে এখন পানি কম, বেশি দেখা যাচ্ছে ময়লা। অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত ময়লা জমে তা পচে তীব্র দুর্গন্ধ বের হওয়ায় বেশিক্ষণ খালটির পাশে দাঁড়িয়ে থাকাও সম্ভব নয়। কালশী কবরস্থান থেকে সাংবাদিক কলোনির দিকে যেতে রাস্তার উল্টো পাশে অর্থাৎ ডান পাশে খালটির জন্য একটি কালভার্ট তৈরি করা হয়েছে। কালভার্টের নিচ দিয়ে খালের একদিকের পানি অন্যদিকে প্রবাহিত হওয়ার কথা। কিন্তু অন্য পাশের খালটি উধাও! কারণ সেদিকে ‘নিরিবিলি বিরিয়ানি হাউস’সহ আরও কয়েকটি ভবন ও রেস্টুরেন্ট তৈরি করা হয়েছে। এতে খালটি আর দেখা যাচ্ছে না। নেই ভবনগুলোর নিচ দিয়ে সরু হয়ে খালের যে পানি এখন প্রবাহিত হচ্ছে তা অনেকটা ড্রেনের মতোই। এ এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, আশপাশের বাসার মানুষ ও ময়লা বহনকারী গাড়িগুলো এই খালের পানিতে সরাসরি ময়লা ফেলছে। এতে বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার জন্য পানি আর সরতে পারে না। অল্প বৃষ্টিতেই ডুবে যায় এ এলাকা। অন্যদিকে রাজধানীর কালশী খালেরও বেহাল অবস্থা। আবাসন কোম্পানি, হোটেল, গ্যারেজ ও বস্তিঘর তৈরির ফলে এ খালটির ৮০ শতাংশই দখল হয়ে গেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কালশী খালের ব্রিজের দুই পাশে মাটি ফেলে জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। এর থেকে অল্প দূরত্বেই খালের ওপর গড়ে উঠেছে দুটি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট। নতুন করে কয়েকটি আবাসন কোম্পানি মাটি ফেলে বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করছে। এ খালের ওপর বস্তিগুলো কয়েকবার উচ্ছেদ করা হলেও সেগুলো আবারও তৈরি করা হয়। খালের ওপর আশপাশের গার্মেন্ট থেকে ফেলে যাওয়া ঝুট কাপড় ও ময়লার স্তূপও দেখা যায়। এ ছাড়া খালের ওপর বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কয়েকটি চায়ের দোকান। আরও আছে গাড়ির গ্যারেজ। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মজিদ জানান, কালশীর নতুন রাস্তাটি তৈরির ফলে এদিকে মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। আর সে কারণে এদিকে বিভিন্ন আবাসিক বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করা হচ্ছে। অথচ কিছু দিন আগেও খালটির কারণে এলাকার পরিবেশ বেশ সুন্দর ছিল। মিরপুর দুয়ারীপাড়া ঝিলপাড় এলাকার খালটিও একসময় বেশ বড় ছিল। স্থানীয়রা জানান, একসময় এ খাল থেকে মাছও ধরা হতো। কিন্তু পল্লবী, দুয়ারীপাড়া ও রূপনগরে মানুষের বসতি বৃদ্ধি পাওয়ায় দিন দিন এ খালের আয়তনও ছোট হতে থাকে। অবস্থা এতই খারাপ যে, দুয়ারীপাড়া খালটির আয়তন কমতে কমতে এখন তা সরু নালায় পরিণত হয়েছে। আর সেই খালের পানিও ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত।

সম্প্রতি দেখা যায়, খালের এক পাশে গড়ে উঠেছে বস্তি, অন্য পাশে অ্যাপার্টমেন্ট। বস্তি ও অ্যাপার্টমেন্ট দুই পাশের বসবাসকারীরাই খালের ওপর গৃহস্থালি ময়লা ফেলছেন। পল্লবীর বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহকারী গাড়িচালকরাও এ খালের ওপর ময়লা ফেলছেন। জানতে চাইলে এক গাড়িচালক জানান, তিনি অনেক দিন ধরেই এখানে ময়লা ফেলছেন। এ ছাড়া খালের ওপর দিয়ে বস্তিতে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ও আশপাশের বাসাবাড়ির ডিশ-ইন্টারনেটের তার নেওয়ায় এক ধরনের জঞ্জাল তৈরি হয়েছে। পল্লবী ইস্টার্ন হাউজিং এলাকার দ্বিতীয় পর্বের প্রধান গেটের পাশেই রূপনগর খাল। দখলের কারণে এ খালটিও এখন বিলুপ্তপ্রায়। সরেজমিন দেখা যায়, খালের ওপর একদিকে রূপনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে, অন্যদিকে বিভিন্ন আবাসিক স্থাপনা ও দোকান তৈরির ফলে খালের আয়তন কমতে কমতে সরু হয়ে গেছে। খালের ওপর বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপও দেখা যায়।

সর্বশেষ খবর