বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগে নতুন মুখ লেজে গোবরে বিএনপি!

সঞ্জয় কুমার দাস লিটু, পটুয়াখালী

আওয়ামী লীগে নতুন মুখ লেজে গোবরে বিএনপি!

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মতবিনিময় অনুষ্ঠান ও প্রচার-প্রচারণা সরগরম হয়ে উঠেছে পটুয়াখালী-৪ আসনের শহর থেকে গ্রাম। ফলে ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। আর বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও প্রচার-প্রচারণায় তেমনটা দেখা যাচ্ছে না।

কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী উপজেলা নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী-৪ আসন। এ আসনে আরও আছে মহিপুর থানা ও কুয়াকাটা। আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। এ আসনের সংসদ সদস্য কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান। তবে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন দফতরের কাজ ও ভাগ বাটোয়ারাসহ নানা কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন মাহাবুব। বিপক্ষ গ্রুপের নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করে রাখা, পছন্দের লোকদের পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী করায় দলের নেতা-কর্মীদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। স্বজনপ্রীতি, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন মাহাবুব। ২০০৮ সালে এমপি নির্বাচিত হয়ে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহাবুব। সম্পদের হিসাবে তথ্য গোপন করায় দুদকের মামলায় অভিযুক্ত হন তিনি। তাই আগামী নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের নতুন মুখ আসতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, দলীয় কোন্দলের কারণে স্থানীয় কলাপাড়া কুয়াকাটা ও রাঙ্গাবালীতে বেশির ভাগ ত্যাগীদের আস্থা ধরে রাখতে পারেনি মাহাবুব। রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের উপনির্বাচনে তার এক ভাগ্নেকে জয়ী করতে ভোট কেন্দ্রে এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে লাঞ্ছিত করেন তিনি। পরে ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পান। তবে এ আসনে মাহাবুবুর রহমান আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা নেতা-কর্মীদের নিয়ে করছেন মতবিনিময়। রাস্তায় টানানো হয়েছে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও তোরণ। এর মধ্যে রয়েছে কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন আহমেদ। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসজীবনেও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি। এ ছাড়া সাবেক এমপি মরহুম আনোয়ার হোসেনের পুত্র যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল ইসলাম লিটন এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মরহুম পিতার ক্লিনইমেজ কাজে লাগিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীর মাঝে লিটন পেয়েছেন আলাদা গ্রহণযোগ্যতা। এরই মধ্যে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে স্থান তৈরি করে নিয়েছেন। প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন। এ ছাড়া কলাপাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার, কুয়াকাটা পৌর সভার মেয়র ও মহিপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারেক মোল্লা, কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব তালুকদার দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে আলোচনা আছে। ২০০৮ সালের পর এলাকায় চোখে পড়ার মতো কোনো কর্মকাণ্ড নেই বিএনপির। মামলা-হামলার ভয়ে এলাকা ছাড়তে হয়েছে বিএনপির বহু নেতা-কর্মীকে। অনেকে আবার দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। দলের তিন জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে দুজনেই থাকেন ঢাকায়। নেতারা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ায় স্থানীয় নেতা-কর্মী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে দলীয় ত্রিমুখী গ্রুপিং। সব মিলিয়ে কলাপাড়া বিএনপির লেজে-গোবরে অবস্থা। বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা এ বি এম মোশারেফ হোসেন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মনির। এলাকায় থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান। পটুয়াখালী সদর আসনের এমপি জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার এ আসনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলেও আলোচনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর