বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বসুন্ধরায় দুর্গোৎসবে দর্শনার্থীর ঢল

আজ মহা অষ্টমী ও কুমারী পূজা

প্রিন্স বিশ্বাস

বসুন্ধরায় দুর্গোৎসবে দর্শনার্থীর ঢল

শারদীয় দুর্গোৎসবের গতকাল ছিল মহাসপ্তমী। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব। গতকাল মহাসপ্তমীতে রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকা বসুন্ধরায় পূজামণ্ডপে দর্শনার্থী ও ভক্তের ঢল নামে। আজ মহা অষ্টমী ও কুমারী পূজা। ঢাকায় সকালে গোপীবাগে রামকৃষ্ণ মিশনসহ সারা দেশে রামকৃষ্ণ মিশন মঠে অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। আগামীকাল মহানবমী ও শনিবার বিজয়া দশমী এবং প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক নজরদারি, মনোরম পরিবেশ, সাজসজ্জায় ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মিশেল— সব মিলিয়ে বসুন্ধরা দুর্গোৎসব সবার নজর কেড়েছে। প্রতিদিন দর্শনার্থী ও ভক্তের ভিড় বাড়ছে। দুর্গোৎসবের দ্বিতীয় দিনে গতকাল মহাসপ্তমীতে সন্ধ্যা থেকে ঢাক-ঢোল, কাঁসার বাদন, শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে গোটা পূজামণ্ডপ ছিল উৎসবমুখর। বসুন্ধরা সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকে মেহেদী মাঠের পুবপাশে এবার ষষ্ঠবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজা। ডি ব্লকের গোলচত্বর থেকে মণ্ডপে ঢোকার প্রধান রাস্তাটি শারদীয় শুভেচ্ছাসংবলিত বাহারি রঙের পোস্টার ও ব্যানারে সাজানো হয়েছে। এ রাস্তা ধরে সামনে এগোলেই পূজামণ্ডপের বিশাল তোরণ। তোরণের গায়ে পাথর খচিত দেব-দেবীদের প্রতিকৃতির প্রতিচ্ছবি। সেই সঙ্গে মরিচবাতি, লেড বাতি দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে মণ্ডপের প্রধান তোরণ ও সামনের রাস্তাটি। মণ্ডপের ভিতরে তৈরি করা হয়েছে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য মঞ্চ, দর্শনার্থীর পানাহারের ব্যবস্থা ও সনাতনধর্ম সম্পর্কিত বিভিন্ন পুস্তক স্টল। পূজামণ্ডপের ভিতরের তিন পাশ সজ্জিত করা হয়েছে বিভিন্ন দেব-দেবীর পোস্টার ও ফেস্টুনে। মণ্ডপের ভিতরে ভক্ত ও দর্শনার্থীর বসার জায়গা। মণ্ডপের বাঁ পাশে আলাদা প্যান্ডেলে ভক্ত ও দর্শনার্থীর মাঝে প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা। বসুন্ধরা সর্বজনীন পূজা কমিটির সহসভাপতি প্রাণেশ বণিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভক্তবৃন্দের সবাই যাতে সুশৃঙ্খলভাবে অঞ্জলি দিতে পারেন সেজন্য আমাদের এ মণ্ডপে সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। আগত সবার মাঝে দুপুর দেড়টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রসাদ বিতরণ কর হয়। রাতের পূজা শেষে আবার প্রসাদ বিতরণ করা হয়। ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ধর্মীয় সংগীত, আরতি প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।’ মণ্ডপ নিরাপত্তা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নিরাপত্তার কাজ করে যাচ্ছেন। পূজামণ্ডপ ও আশপাশ ৩২টি সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষায় আমাদের ২০ জন ভলান্টিয়ার সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।’

হিন্দুশাস্ত্রমতে, গতকাল দুর্গাপূজার দ্বিতীয় দিন মহাসপ্তমীতে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান শেষে সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর নবপত্রিকায় প্রবেশ ও সপ্তমী বিহিত পূজা আরম্ভ হয়। পরে আগত ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ, মহাসপ্তমীর অপরিহার্য দুস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, শিশুদের ছবি অঙ্কন ও আরতি প্রতিযোগিতা এবং আলোচনা সভা শুরু হয়। রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে গতকাল সপ্তমীর দিন সকালে নয় ধরনের উদ্ভিদ দিয়ে দেবীর প্রতিকৃতি তৈরি করে স্নান করানো হয়। যাকে নবদুর্গা বা কলাস্নানও বলা হয়। পৃথিবীর মঙ্গল ও পবিত্রতা কামনায় তা করা হয়। দুপুরে দুস্থদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করা হয়। এদিকে গতকাল বিকালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শনে যান। তিনি মন্দিরে আগত ভক্ত, পূজারি, মহানগরী সর্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শারদীয় শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, হাজী সেলিম এমপি, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন দীপু, মহানগরী পূজা কমিটির সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জি প্রমুখ। এরপর রাষ্ট্রপতি রামকৃষ্ণ মিশন মঠ মন্দির পরিদর্শন করেন।

আজ মহা অষ্টমী ও কুমারী পূজা : দুর্গোৎসবের আজ তৃতীয় দিন মহা অষ্টমী ও কুমারী পূজা। সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহা অষ্টমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা শেষে কেবল দেশের রামকৃষ্ণ মিশন মঠ মন্দিরে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। জগতের সব নারীর যে মমত্ববোধ ও শক্তি রয়েছে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই মাটির প্রতিমার পাশাপাশি কোনো কিশোরীকে নানা অলঙ্করণ ও প্রসাধনে সজ্জিত করে মন্ত্রোচ্চারণপূর্বক যে পূজা দেওয়া হয় তা কুমারী পূজা নামে পরিচিত। এরপর সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে মণ্ডপে মণ্ডপে শুরু হবে সন্ধিপূজা।

সর্বশেষ খবর