বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ত্রাণের চাল নিয়ে নয়ছয়

ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামের দুর্নীতি তদন্তে দুদক

মোস্তফা কাজল

ত্রাণের চাল নিয়ে নয়ছয়, অবৈধ মজুদ এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামের অনিয়ম তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ লক্ষ্যে একজন উপপরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এর আগে চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকার তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামের (সিএসডি) নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে দুদকে প্রতিবেদন দিয়েছে এলিট ফোর্স  র‌্যাব। প্রতিবেদনের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের গুদাম থেকে উদ্ধার হওয়া অনিয়মের প্রমাণ, নথিপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। এসব নথিপত্র হাতে পাওয়ার পর ত্রাণের চাল নয়ছয় করার বিষয়ে তদন্তে নামে দুদক। নয়ছয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় এর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামের তিন খাদ্য কর্মকর্তা ও ২১ শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্তও করেছে সিএসডি কর্তৃপক্ষ। এ তিন খাদ্য কর্মকর্তা হলেন উপখাদ্য পরিদর্শক নান্নু মিয়া, উপখাদ্য পরিদর্শক মোহাম্মাদ হোসেন মামুন ও খাদ্য পরিদর্শক পাপিয়া সুলতানা। এসব বিষয়ে গতকাল দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দুদক মহাপরিচালক (বিশেষ-তদন্ত) জাফর ইকবালকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। র‌্যাব থেকে দুদকে পাঠানো অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ত্রাণের চালসহ নানা ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছেন ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিএসডির এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটিতে লুটপাট চালাচ্ছেন তারা। দুই জেলায় র‌্যাবের অভিযানের পর সবকিছু সামনে আসতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদাম একটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআইভুক্ত) হওয়া সত্ত্বেও সেখানে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। গুদামের কম্পাউন্ডের মধ্যেই গ্যারেজ হিসেবে ভাড়া দিয়ে বহিরাগত ট্রাক রাখা হচ্ছে। প্রতি ট্রাক থেকে ২০০ টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। এভাবে প্রতিদিন ৩০-৪০টি ট্রাক রাখা হচ্ছে। র‌্যাবের মতে, সংরক্ষিত এলাকায় এসব ট্রাক রাখা মারাত্মক হুমকির কারণ। সূত্র আরও জানায়, এসব ট্রাকে অল্প অল্প করে গুদাম থেকে চুরি করা চালের বস্তা সরিয়ে ফেলা হয়। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে অপকর্ম চালিয়ে আসছেন অসাধু কর্মকর্তারা। র‌্যাব থেকে দুদকে পাঠানো প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া খাদ্য কর্মকর্তা নান্নু মিয়ার পোস্টিং মূলত মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলায়। অপর কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তা। কিন্তু তদবিরের জোরে তারা দুজনই রাজধানীর কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামে সংযুক্ত (অ্যাটাচমেন্ট) হয়ে কাজ করছেন। মূলত কর্মকর্তারা অনিয়ম করতে কেন্দ্রে চলে আসেন সংযুক্তির মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামের ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তিন কর্মকর্তা ও ২১ শ্রমিককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সাসপেন্ড হওয়া শ্রমিকরা সবাই মাস্টাররোলে কাজ করতেন। তবে গ্যারেজ করে ট্রাক ভাড়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সংসদ সদস্য দুদকের হটলাইনে অভিযোগ করে বলেছেন, কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদাম থেকে নিজ নির্বাচনী এলাকার জন্য ত্রাণের চাল নিয়ে বিপদে পড়তে হয়েছিল। কারণ যে পরিমাণ চাল থাকার কথা ছিল তার চেয়ে অনেক কম নিতে হয়েছিল। পরে নিজের টাকায় ঘাটতি পড়া চাল কিনে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের মাঝে বিতরণ করতে হয়েছে। র‌্যাব জানায়, হতদরিদ্র মানুষের ত্রাণের চাল এভাবে চুরি হওয়ার বিষয়টিতে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর সঙ্গে যত প্রভাবশালী ব্যক্তিই জড়িত থাকুক না কেন- কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।  জানা গেছে, গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে র‌্যাব। ত্রাণের জন্য বরাদ্দ ৩০ টন চালের মধ্যে মাত্র ২০ টন পাওয়া যায়। বাকি চাল হাওয়া হয়ে যায় সিএসডি থেকেই। এ ছাড়া ঢাকা জেলা আনসারকে ৭০ টন চাল দিয়ে লেজার ও অন্য রেজিস্ট্রার খাতায় ২৫৮ টন চাল সরবরাহ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। র‌্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব অনিয়মের কথা উপস্থিত কর্মকর্তাদের স্বীকারোক্তিতেও উঠে এসেছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত কর্মকর্তারা নানা ধরনের অনিয়মের কথাও স্বীকার করেছেন। কিন্তু তারা সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় বিষয়টি দুদকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে দুদকে প্রেরিত অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। দুদক উপপরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ত্রাণের চাল ও অবৈধ মজুদসহ কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামের পরিমাণে চাল কম দেওয়া এবং নানা ধরনের অনিয়ম নিয়ে র‌্যাব থেকে একটি প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। দুদক থেকে প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দুদক তদন্ত দলের সদস্যদের আজ ঢাকা কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামের ঘটনাস্থল পরিদর্শনের কথা রয়েছে। এরপর তারা চট্টগ্রাম যাবেন।

সর্বশেষ খবর