নানা উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে। সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মহাবিজয়া দশমী উপলক্ষে গতকাল পূজামণ্ডপে আরতি ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় প্রতিমা বিসর্জন। পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাট দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। বেলা ৩টার দিকে পলাশীর মোড় থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা। ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতৃত্বে ওই শোভাযাত্রায় ট্রাকে করে এসে যোগ দেন রাজধানীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপের ভক্তরা। শোভাযাত্রার কিছু সময় পরেই শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, হাই কোর্ট মাজার, গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজার হয়ে ওয়াইজঘাটে গিয়ে পৌঁছায় শোভাযাত্রাটি। এ সময় ছিল র্যাব-পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শোভাযাত্রার সামনে এবং পেছনে রাখা হয় র্যাব-পুলিশের গাড়ি। আশপাশের সংযোগ সড়কগুলোও বন্ধ রাখা হয়। এর আগে নাচ-গানের মধ্য দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন উদযাপন করেন ভক্তরা। দুপুরে সিঁদুর খেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রিয়জন, আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা পরস্পরের মুখে সিঁদুর লাগিয়ে উল্লাস করেন। পূজার শেষ মুহূর্তে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দেশের কল্যাণ ও ব্যক্তিজীবনের সফলতার জন্য আশীর্বাদের আশায় প্রতিমাকে ভক্তি দেন অনেকে। নিতাই চক্রবর্তী নামে এদের একজন জানান, সবার জন্য মায়ের কাছে আশীর্বাদ চেয়েছি। এবারের জন্য মাকে ভালোভাবে বিসর্জন দিচ্ছি। আগামীতে তিনি মঙ্গলের বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে ফিরবেন— এটাই প্রত্যাশা।
শোভাযাত্রা শুরুর আগে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিমাসহ একে একে অসংখ্য ট্রাক সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়ায়। প্রতিমা বিসর্জনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিমা বিসর্জনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সদরঘাট, পাটুয়াটুলি, ইসলামপুর, বাবুবাজার ব্রিজের চারপাশে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এবার দেবী দুর্গা মর্তে এসেছিলেন নৌকায় চড়ে। যাচ্ছেন ঘোড়ায় চড়ে।
এদিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পূজা অনুষ্ঠানের প্রতিমা বিসর্জন সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বসুন্ধরা সার্বজনীন পূজা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পল্লব দাস জানান, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আশুলিয়ায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম থেকে জানান, পুণ্যার্থীর অঞ্জলি, আরতি এবং ঢাকের বাজনা শেষে বেজেছে বিদায়ের সুর। টানা দুর্গোৎসবের পর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ এ ধর্মীয় উৎসব। গতকাল বিকালে দুর্গাকে বিদায় জানাতে ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। তেল-সিঁদুর পরিয়ে, মুখে মিষ্টি আর পান খাইয়ে বিদায় জানানো হয়েছে দুর্গাকে। এ বিদায়ের বিচ্ছেদ সুর বেজে ওঠে সৈকত তীরে। শুক্রবার রাতে মহানবমীতে জেএমসেন হল, হাজারীলেন, বকশিরহাট, কুসুম কুমারী স্কুল, রাজাপুকুর লেন, হেমসেন লেন, আসকার দীঘির পশ্চিম পাড়ের রামকৃষ্ণ মিশন, গোসাইলডাঙ্গা একতা গোষ্ঠী, দেওয়ানজী পুকুরপাড়, পাথরঘাটা, চেরাগি পাহাড়, দক্ষিণ নালাপাড়া, ঘাটফরহাদবেগসহ নগরীর সব পূজামণ্ডপে দুর্গার আশীর্বাদ নিতে আসেন পুণ্যার্থীরা। গতকাল সকালে বিজয়া দশমীতে নগরীর প্রধান পূজামণ্ডপ জেএমসেন হলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ মহানগর শাখার উদ্যোগে পুষ্পাঞ্জলি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দুপুর ১২টার পর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। পতেঙ্গা সৈকত ছাড়াও নগরীর কাট্টলী সৈকত, কালুরঘাট, সদরঘাট বাঁশঘাটা, ফিরিঙ্গিবাজার, পারকি সমুদ্র সৈকতসহ বিভিন্ন বড়পুকুর, দীঘি, খাল ও নদীতে মা দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল থেকে জানান, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বরিশালে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। সকালে দশমী বিহিত পূজা শেষে দেবীবরণ অনুষ্ঠিত হয়। মণ্ডপে মণ্ডপে বিজয়া দশমীর আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে ভক্ত-পূজারিরা। সদবা নারীরা এ আনন্দের বহিঃপ্রকাশ করেন ‘সিঁদুর খেলা’র মধ্য দিয়ে। রাতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শেষ হয়।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে দেশের বৃহৎ প্রতিমা বিসর্জন উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বিকাল ৫টায় লাখো মানুষের উপস্থিতিতে একসঙ্গে ১৫৮টি প্রতিমা বঙ্গোপসাগরে বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় সৈকত বালিয়াড়ি। পূজারি, ভক্ত, দর্শনার্থী, পর্যটকসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষের মহামিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। ঢাক, ঢোল, কাঁসরের তালে আরতির বাদ্য বাজনায় ‘মা দুর্গার জয়’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সাগরতট। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে দেড় শতাধিক প্রতিমা সাগরে বিসর্জন দেন ভক্ত-পূজারিরা।