শিরোনাম
রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিশাচর পাখি লক্ষ্মী পেঁচা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিশাচর পাখি লক্ষ্মী পেঁচা

শুভ পাখি হিসেবে পরিচিত লক্ষ্মী পেঁচা। নিশাচরও বটে। পৃথিবীজুড়ে ১৭০ প্রজাতির পেঁচা দেখা গেলেও বাংলাদেশে রয়েছে ১৬ প্রজাতির পেঁচা। এর মধ্যে দেখতে আর্কষণীয় হল লক্ষ্মী পেঁচা।

এদের দৈহিক বৈশিষ্ট্যের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হল বড় বড় গোল চোখ আর তীক্ষ দৃষ্টি। মাথা ঘুরিয়ে এরা প্রায় পুরোপুরি পেছনের দিকেও তাকাতে পারে। তীক্ষ দৃষ্টির কারণে রাতের অন্ধকারেও শিকার ধরতে কোনো অসুবিধা হয় না। এ কারণেই লক্ষ্মী পেঁচা এক জায়গায় চুপচাপ বসে চারদিকে নজর রাখতে পারে। এ পাখির চোখের পুরো অংশই সাদা। চোখের তারা এবং পা হলুদ রঙের হয়। পিঠের দিক গারো বাদামি, তার ওপর সাদা সাদা অনেক ফোটা থাকে। এরা জোড়ায় জোড়ায় এক জায়গায় থাকতে পছন্দ করে। এছাড়া চাকতির মতো এদের মুখমণ্ডলের সুবিধা হল খুব সূক্ষ্ম শব্দের প্রতিধ্বনিও এদের কানে পৌঁছায়। সন্ধ্যা কিংবা রাতে এ পাখির ডাক শোনা যায়। গুরুগম্ভীর ডাক শুনে অনেকেই পেঁচাকে অশুভ প্রতীক বলে মনে করেন।  কোনো কোনো অঞ্চলে পেঁচা ডাকলে ঘরে ওঠার সিঁড়িতে জল ঢেলে দেওয়া হয়। তাদের বিশ্বাস, এতে সব ধরনের অকল্যাণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আবার কোনো কোনো অঞ্চলে দা, খুন্তি আগুনে গরম করা হয় পেঁচার গায়ে ছ্যাঁক দেওয়ার জন্য। গরম ছ্যাঁকের কথা জানতে পেরে পেঁচা নাকি আর ওই স্থানে থাকে না। এসবই মানুষের কুসংস্কার, ভুল ধারণা। আসলে পেঁচা কোনো অশুভ পাখি নয়। অনেক সম্প্র্রদায় যেমন- মান্দি, হাজং, গারোদের কাছে পেঁচা অনেকটা পূজনীয় পাখি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে লক্ষ্মীর বাহন হিসেবে লক্ষ্মী পেঁচাকে শুভ শক্তির প্রতীক হিসেবেই দেখা হয়। অন্ধকারে খসখস নড়াচড়ার শব্দ শুনেই পেঁচা শিকারের অবস্থান বুঝতে পারে। পেঁচার অধিকাংশ প্রজাতি রাতের  বেলা শিকার করে। এরা শিকারি পাখিগুলোর মধ্যে অন্যতম। বেশির ভাগ পেঁচারই লম্বা ও ধারালো নখড় আছে। শিকারের সন্ধান পেলে বাঁকানো নখড়ের থাবায় শিকার ধরে। এদের খাবারে তেমন বাছবিচার নেই। ছোট ইঁদুর, শুঁয়াপোকা, ছোট পাখি, টিকটিকি, ঢোঁড়া সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারণ করে। পেঁচা দিনের আলো সহ্য করতে পারে না। তাই বড় বড় গাছের কোটরে, বন-জঙ্গল, দালানের ফাঁকফোকর কিংবা গাছগাছালির ঘনপাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে। পাখি বিশারদরা মনে করেন, নির্বিচারে বৃক্ষ উজাড়, ফসল আবাদ করতে জমিতে বিভিন্ন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ শিকারিদের দৌরাত্ম্য, খাদ্যের অভাব, অশুভ পাখি বলে মেরে ফেলাসহ বিভিন্ন কারণে প্রকৃতি থেকে পেঁচার সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর