বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

জুমের হাসিতে হাসছে পাহাড়

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

জুমের হাসিতে হাসছে পাহাড়

আঁকা-বাঁকা সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সোনালি ধানের হাসি। সে হাসিতে হাসছে পাহাড়। পার্বত্যাঞ্চলে এ বছরও জুমের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই জুমিয়া নারী-পুরুষের চোখে-মুখে এখন আনন্দের উচ্ছ্বাস। পাহাড়ের জুম খেতে সবেমাত্র শুরু হয়েছে পাকা ধান কাটার উৎসব। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা খোস মনে ব্যস্ত জুমের পাকা ধান কাটতে। জুমিয়াদের ঘরে উঠছে জুমের সেই সোনালি ফসল। একই সঙ্গে ধুম পড়েছে মারফা, বেগুন, ধানি মরিচ, ঢেঁড়শ, কাঁকরোল, কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল তোলার কাজও।

জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী চাষ হচ্ছে জুম চাষ অর্থাৎ পাহাড়ের ঢালে বিশেষ ধরনের চাষাবাদ। জুমিয়ারা পাহাড়ের ঢালে বিশেষ পদ্ধতির এই আদি জুম চাষ করে থাকে। পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড়ি মানুষগুলোর জীবিকার আদিম ও প্রধান উৎস জুম চাষ। বাংলাদেশের শুধুমাত্র তিন পার্বত্য জেলায় এ জুম চাষ করা হয়। পার্বত্যাঞ্চলে প্রতি বছর কত একর জায়গায় জুম চাষ হয় তার সঠিক পরিসংখ্যান আজও জানতে পারেনি কৃষি বিভাগ। তবে পাহাড় ধসের ঘটনায় অনেক জুমের খেত নষ্ট হয়ে গেলেও, এ বছর রাঙামাটিতে জুম চাষ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে। রাঙামাটি কৃষিবিভাগ সূত্র মতে, জুমিয়ারা পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালে জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে রৌদ্রে শুকানোর পর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে জুম চাষে উপযোগী করে তোলে জমি। এরপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পোড়া জুমের মাটিতে সুঁচালো দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধান, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, তুলা, তিল, ভুট্টাসহ বিভিন্ন রকম বীজ বপন করে থাকে। আর এসব জুমের ধান আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেই পেকে থাকে। তারপর শুরু হয় জুমের ফসল তোলার কাজ। সে সময় মারফা, কাঁচামরিচ, চীনার ভুট্টো পাওয়া যায়। ধান পাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে। সব শেষে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে তোলা হবে তুলা, তিল ও যব। জুমচাষি বিমলা চাকমা জানান, জুমে বীজ বপনের পাঁচ মাস পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের পর ফসল পাওয়া যায়। কিন্তু এ বছর হঠাৎ পাহাড় ধসের কারণে অনেক ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। তবে যেসব জমি অক্ষত ছিল, সেগুলোতে ফলনও হয়েছে বাম্পার। এ মৌসুমে উপযুক্ত জলবায়ু ও বৃষ্টিপাতের কারণে আশানুরূপ ফলন পাওয়া গেছে। আশা করি এ বছর খাদ্য সংকট হবে না জুমচাষিদের।  রাঙামাটির জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপাপ্ত উপ-সহকারী কৃঞ্চ প্রসাদ মল্লিক জানান, পাহাড়ে জুম কাটার ধুম পড়েছে। ইতিমধ্যে ৫৮ ভাগ জুম কাটা হয়ে গেছে। যার পরিমাণ ২ হাজার ৬২০ হেক্টর। এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্র হচ্ছে ১.৩ মেট্রিক টন। রাঙামাটিতে প্রায় ১২ জাতের জুমে ধান চাষ হয়ে থাকে। তার মধ্যে মেরুন, গেলং, রাঙ্গি, কবরক, কামারং, বিনি, আমিং, তুরকি, ছড়ই, সুরি, মধুমালতি ও সোনাই চিকন উল্লেখযোগ্য। মাঠপর্যায়ে আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও জুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি এ বছর কৃষি বিভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর