বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সংসদ নির্বাচনের আগে ভোট দুই শতাধিক ইউপি ও পৌরসভায়

গোলাম রাব্বানী

মামলাসহ বিভিন্ন জটিলতায় আটকে থাকা স্থানীয় সরকারের দুই শতাধিক নির্বাচন দ্রুত করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই আইনি জটিলতা নিরসন করে ১৭৫টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও ৩৫ পৌরসভায় ভোট করার চিন্তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া যে ইউপি ও পৌরসভায় নির্বাচন করতে বাধা নেই তা দ্রুত শেষ করা হবে বলে জানিয়েছে ইসি সচিবালয়। এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবগঠিত ৩৬টি ওয়ার্ডে ভোটার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ১৫ দিনের মধ্যে এ তালিকা তৈরি হবে। এরপর ভোটের বিষয়ে চিন্তা করবে ইসি। গতকাল আইনি জটিলতা নিরসনে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতিনিধি নিয়ে যৌথ বৈঠক করেছে ইসি সচিবালয়। বৈঠকে মামলা নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাডভোকেট নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া যেসব ইউপি ও পৌরসভায় সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ হয়েছে, দ্রুত সেগুলোতে নির্বাচন করার পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ৩৫টি পৌরসভার মধ্যে ১৪টি এবং ১৭৫টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৪৩টিতে কোনো ধরনের মামলা বা সীমানা-সংক্রান্ত জটিলতা নেই। এসব ইউপি ও পৌরসভায় যেসব জটিলতা ছিল তা ইতিমধ্যে নিরসন হয়ে গেছে। সেগুলোতে দ্রুত ভোটার তালিকা তৈরির জন্য বলা হয়েছে। তালিকা তৈরি হলেই এসব ইউপি ও পৌরসভায় ভোট গ্রহণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, মামলা, নবগঠিত ইউপি ও পৌরসভা, সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তিসহ বিভিন্ন জটিলতায় দুই শতাধিক নির্বাচন আটকা রয়েছে। এর মধ্যে পৌরসভাগুলোতে সীমানা-সংক্রান্ত মামলা, পৌরসভা গঠনের বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। ইসি সম্প্রতি এসব প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন করতে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। আর মামলা জটিলতা নিরসনে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতিনিধির সঙ্গে গতকাল বৈঠক হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার এবং পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা মেয়াদ শেষেও বছরের পর বছর পদ ধরে রেখেছেন। এ জন্য তারা মামলার আশ্রয় নিয়েছেন। আর মামলার কারণে নির্বাচন হচ্ছে না বছরের পর বছর। এসব পদে থাকতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন রাজনৈতিক নেতারাও। আবার কোনো ইউপি ও পৌরসভায় দীর্ঘদিন ধরেই কোনো জনপ্রতিনিধি নেই। ওই সব স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন প্রশাসকরা।

আটকে থাকা পৌরসভা : ইসি সূত্র জানিয়েছে, নানা জটিলতায় নির্বাচন হয়নি। এ তালিকায় রয়েছে— চট্টগ্রাম বিভাগের নাজিরহাট, হাটহাজারী, নারায়ণপুর, দেবীদ্বার পৌরসভা; ঢাকা বিভাগের শিবপুর, কোটালীপাড়া, কালিয়াকৈর, গোসাইরহাট পৌরসভা;  সিলেট বিভাগের আজমিরীগঞ্জ, দোহার, শ্রীমঙ্গল পৌরসভা; রংপুর বিভাগের নীলফামারী, পলাশবাড়ী, পার্বতীপুর,  বোদা, দেবীগঞ্জ, সেতাবগঞ্জ, বিরল পৌরসভা; রাজশাহী বিভাগের বাগাতীপাড়া, বাঘা, বেনাপোল, ধামইরহাট, বনপাড়া, পাঁচবিবি পৌরসভা; খুলনা বিভাগের ঝিকরগাছা, মংলা পোর্ট, ঝিনাইদহ পৌরসভা; বরিশাল বিভাগের মঠবাড়িয়া, লালমোহন, আমতলী, পটুয়াখালী, বাউফল পৌরসভা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের নবগঠিত হালুয়াঘাট ও বকশীগঞ্জ পৌরসভা।

১৪ বছর আগে নির্বাচন হয় ৪০ ইউপিতে : পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০০৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। আইন অনুযায়ী পাঁচ বছর পর পর নির্বাচনের কথা। কিন্তু ১৪ বছর ধরে ওই ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে না। এ নির্বাচন নিয়ে আদালতে কোনো মামলা নেই। তবে সীমানা পুনর্নির্ধারণ জটিলতায় আটকে আছে এ ইউপির ভোট। বলরামপুর ইউপির মতো ২১০টি ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায় বছরের পর বছর নির্বাচন হচ্ছে না। মামলাজনিত জটিলতা, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ না হওয়াসহ নানা কারণে এসব ইউপি ও পৌরসভায় ভোট হচ্ছে না। এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ১৭৫টি ও পৌরসভা ৩৫টি। ৪০টি ইউনিয়ন পরিষদে সর্বশেষ ১৪ বছর আগে নির্বাচন হয়েছে বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে। এসব ইউপিতে সর্বশেষ ২০০৩ সালে নির্বাচন হয়েছে। ইউপিগুলো হচ্ছে— পঞ্চগড়ের বলরামপুর, দিনাজপুরের বিরল, গাইবান্ধার কিশোরগাড়ী ও পলাশবাড়ী, রাজশাহীর বাজুবাঘা, গড়গড়ি, মনিগ্রাম, পাকুড়িয়া, বানেশ্বর, ভালকগাছী ও শিলমাড়িয়া, কুষ্টিয়ার জিয়ারখী, চুয়াডাঙ্গার উথলি, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, ভোলার বড়মলংচড়া, সোনাপুর, টাঙ্গাইলের বাসাইল, বাংড়া, ঢাকার দোহারের রাইপাড়া ও সুতারপাড়া, নরসিংদীর চক্রধা ও মাছিমপুর, শরীয়তপুরের ইদিলপুর, সুনামগঞ্জের মিরপুর, সিলেটের মোল্লারগাঁও ও তেতলী, ফেঞ্চুগঞ্জ, মাইজগাঁও, ঘিলাছড়া ও দশঘর, চাঁদপুরের নারায়ণপুর, নোয়াখালীর সুখচর ও নলচিয়া, চট্টগ্রামের ১ নম্বর কধুরখিল, ২ নম্বর পশ্চিম গোমদন্ডী, ১ নম্বর করেরহাট, হোছনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, কালাপানিয়া ও উড়িরচর।

এদিকে ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ বিভিন্ন কারণে কয়েকটি নবগঠিত ইউনিয়ন পরিষদে কখনো ভোট হয়নি। এসব ইউপি হচ্ছে—দিনাজপুরের রাজারামপুর, চুয়াডাঙ্গার মাখালডাঙ্গা, নেহালপুর, কেডিকো, মনোহরপুর ও ভোলার ওমরপুর।

সর্বশেষ খবর