শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

হলো না টার্গেট পূরণ

গোলাম রাব্বানী

হলো না টার্গেট পূরণ

দেশের নাগরিকদের হাতে স্মার্ট কার্ড তুলে দেওয়ার টার্গেট পূরণ করতে পারল না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। স্মার্ট কার্ড বিতরণের এক বছর পার হলেও ৯ কোটির মধ্যে সব মিলিয়ে মাত্র ১৫ শতাংশ কার্ড বিতরণ করতে পেরেছে কমিশন। অথচ ডিসেম্বরের মধ্যে কার্ড পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগরীতেই বছর ধরে চলেছে বিতরণকাজ। এখনো মিরপুর ও উত্তরা এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডে বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। অর্ধকোটি নাগরিকের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ কার্ড সংগ্রহ করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ইসি টার্গেট পূরণে অনেকটা ব্যর্থ হয়েছে। স্মার্ট কার্ড বিতরণের এ হার খুবই ‘হতাশাজনক’। ঢাকঢোল পিটিয়ে বিতরণকাজ শুরু হলেও অর্ধেকেরও বেশি সময় কাজ হয়েছে শম্বুকগতিতে। ফ্রান্সের একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিও বাতিল করতে হয়েছে এরই মধ্যে। ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেওয়ার যন্ত্র কেনা নিয়ে নতুন করে ঝামেলা তৈরি হয়েছে। এতে করে কাজের অগ্রগতি খুবই শ্লথ। এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ জানিয়েছে, মাঝখানে ফ্রান্সের একটি কোম্পানির ব্যর্থতার কারণে বিতরণকাজ পিছিয়ে গেছে। এখন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন ও পার্সোনালাইজেশন করা হচ্ছে। কাজের গতি বাড়িয়ে কার্ড ছাপানো মাসে ৫০ লাখ পর্যন্ত করা হয়েছে। ১৫ মাসের মধ্যে সবার হাতে স্মার্ট কার্ড পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। ইসি সচিবালয় ও এনআইডি উইংয়ের কর্মকর্তারা জানান, ৯ কোটি নাগরিকের সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগ পর্যন্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ১০ হাজার স্মার্ট কার্ড (১২ দশমিক ৪১ মিলিয়ন) উৎপাদন ও পার্সোনালাইজেশন (ব্লাঙ্ক কার্ডের মধ্যে নাগরিকতথ্য ইনপুট সম্পন্নকরণ) হয়েছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার কার্ড (১০ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন) বিতরণ করা হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি ৭ কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার (৭৭ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন) স্মার্ট কার্ড উৎপাদন ও বিতরণ করার কথা রয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট কার্ড বিতরণ উদ্বোধন করেন। পরে ৩ অক্টোবর থেকে ঢাকা মহানগরীতে বিতরণ শুরু হয়। এ পর্যন্ত সিটি করপোরেশনগুলো এবং বিলুপ্ত একটি ছিটমহলে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।

মহানগরীতে ৬০ ভাগ কার্ড বিতরণ : ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন মণ্ডল জানান, ঢাকা মহানগরের অর্ধকোটি ভোটারের মধ্যে এ পর্যন্ত ২৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫২ জন স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করেছেন। ২০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯৭ জন এখনো কার্ড নেননি। তিনি বলেন, মিরপুর ও উত্তরার কয়েকটি ওয়ার্ডে এখন বিতরণ চলছে। এক বছর ধরে বিতরণ হয়েছে ঢাকা মহানগরে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।

আসছে নতুন প্রকল্প : উন্নত মানের জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্ট কার্ড বিতরণ অব্যাহত রাখতে আসছে নতুন প্রকল্প। স্মার্ট কার্ড বিতরণ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক চলতি বছর শেষে নতুন করে অর্থায়নে আগ্রহী না হওয়ায় নিজস্ব অর্থায়নেই তা চালু রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ভোটার তালিকা প্রস্তুত এবং জাতীয় পরিচিতি সেবা প্রদানে টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক এক নতুন প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া প্রকল্পটি অনুমোদন পেলেই বছর শেষে নতুন প্রকল্পের অধীনে স্মার্ট কার্ড বিতরণ চলবে। ২০০৮ সাল থেকে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন চালুর পর নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালনায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে (আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিস) আইডিইএ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় নাগরিকদের স্মার্ট কার্ড দিতে ২০১৫ সালে ফরাসি কোম্পানি অবার্থার টেকনোলজির সঙ্গে চুক্তি হয়। কয়েক দফা বাড়ানোর পর ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে প্রকল্পটির মেয়াদ। সেনাবাহিনীর লোকবল চায় ইসি : নিজস্ব উদ্যোগে স্মার্ট কার্ড উৎপাদন ও পার্সোনালাইজেশনের কাজ শুরুর পর এবার সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর লোকবল চাইছে নির্বাচন কমিশন। ডিসেম্বরের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৯ কোটি কার্ড ছাপতেই সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের কাছে অর্ধশতাধিক লোক প্রকল্পে সংযুক্তির জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইসির এক কর্মকর্তা বলেন, এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি ইতিমধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারকে তারা পাঠিয়েছেন।

সূত্র জানিয়েছে, ফ্রান্সের অবার্থার টেকনোলজিসের সঙ্গে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ১৮ মাসের মধ্যে স্মার্ট কার্ড প্রস্তুত করে দিতে চুক্তি করেছিল নির্বাচন কমিশন। চুক্তি অনুযায়ী, ওই সময়ের মধ্যে ৯ কোটি ভোটারের কার্ড তৈরি এবং তাতে নাগরিকের তথ্য ইনপুট দেওয়ার কাজ করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি চুক্তির শর্ত না মানায় এবং যথাসময়ে কার্ড সরবরাহ করতে না পারায় চুক্তি বাতিল করে সংস্থাটি। এদিকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্মার্ট কার্ডের জন্য নেওয়া আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর। আর এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ অর্থাৎ উপাদন ও বিতরণ করতে না পারলে টাকা ফেরত যাবে। এ জন্য গত মাসে নিজেরাই কার্ড বিতরণের লক্ষ্যে উৎপাদনে যায় সংস্থাটি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর