আগামী বছরের জুনের মধ্যে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে পরিকল্পনা ও দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও এরই মধ্যে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিতব্য খুলনায় স্থানীয় এই নির্বাচনকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে আগেভাগেই প্রচারণায় নেমেছে আওয়ামী লীগ। দলের প্রার্থিতা এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় হেভিওয়েট প্রার্থীর পাশাপাশি তরুণ নেতৃত্বের প্রচারণায় ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। সরেজমিন দেখা গেছে, নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টাঙানো পোস্টার, ব্যানার আর ফেস্টুনে অলিগলি ছেয়ে গেছে। ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময়, পাড়া-মহল্লার ক্লাব উন্নয়নে অনুদান, প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি কেন্দ্রে লবিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সরকারদলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা। জানা যায়, এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খুলনায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক এমপি এবং প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল আলোচনায় রয়েছেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের দুই তরুণ নেতা খুলনা সদর থানা সভাপতি ও খুলনা চেম্বারের পরিচালক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি যুবলীগ নেতা অ্যাডভোকেট সরদার আনিছুর রহমান পপলু। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কাজী আমিনুল হকের নামও আলোচনায় আছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালের ৬ আগস্ট খুলনা সিটি করপোরেশন সৃষ্টির পর থেকে বিএনপি দলীয় মেয়রই বেশির ভাগ সময় নগরপিতার দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৮ সালে সরাসরি ভোটে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক। নগর উন্নয়নে বড় প্রকল্প অনুমোদন ও রাস্তাঘাট সংস্কারে সর্বত্র প্রশংসা অর্জনের পরও ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রায় ৬১ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতা। এ কারণে খুলনা সিটি করপোরেশনের আগামী নির্বাচনে কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। তবে মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হলেও প্রার্থিতা বাছাই নিয়ে এখনো চলছে জল্পনা-কল্পনা। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সংসদ নির্বাচনের আগে এবারের খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খুলনায় মেয়র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে অনেকেই প্রচারণায় রয়েছেন। এক্ষেত্রে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামের তালিকা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠানো হবে। সেখানে তাদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা-ভাবমূর্তি যাচাই-বাছাই করা হবে। মেয়র নির্বাচন প্রসঙ্গে তালুকদার আবদুল খালেক এমপি বলেন, ‘আমি নির্বাচিত সংসদ সদস্য। আমার সংসদীয় এলাকায় (রামপাল-মংলা) সরকারের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। দলে এখন অনেক যোগ্য তরুণ নেতৃত্ব রয়েছেন। তাদের দিয়েই কাজ চালিয়ে নিলে ভালো হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে দলের স্বার্থে আমি নির্বাচন করতে রাজি আছি।’ অবশ্য তালুকদার খালেকের বিকল্প হিসেবে ক্লিন ইমেজের আরেক প্রার্থী বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হতে পারেন। পারিবারিক অবস্থানের কারণে দলের তরুণ নেতা-কর্মীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা তুঙ্গে। বিশেষ করে ব্যবসায়ী মহলে তিনি স্বচ্ছ ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। প্রসঙ্গত, শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের বাবা শেখ আবু নাসেরকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দলের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে প্রচারণায় রয়েছেন সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খুলনা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম। খুলনার উন্নয়ন ও আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রাখায় ইতিমধ্যে ব্যবসায়ী সমাজের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, মেয়র প্রার্থী হিসেবে আমি দলের মনোনয়ন চাইব। তৃণমূলে দলকে সংগঠিত করে নেতা-কর্মীদের নির্বাচনমুখী করতে মাঠে কাজ শুরু করেছি। দলের সম্ভাব্য আরেক প্রার্থী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি যুবলীগ নেতা অ্যাডভোকেট সরদার আনিছুর রহমান পপলু ইতিমধ্যে নিজ দলের নেতা-কর্মী ও সুশীল সমাজের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করতে চেষ্টা করছেন। আনিছুর রহমান পপলু বলেন, সিটি নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সাংগঠনিক সক্ষমতা আমার আছে। দলের শক্ত মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইব।