শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

জোর লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

জোর লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি

রাজধানী ঢাকার সীমানা উত্তরদিকে শেষ হলেই শুরু হয় গাজীপুর জেলা সদরের নির্বাচনী আসন এলাকা গাজীপুর-২। আসনটি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একাংশ ও গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত। এ নির্বাচনী আসনের প্রায় পুরো এলাকাই গাজীপুর সিটি করপোরেশনভুক্ত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান, ঈদ এবং পূজার মতো ধর্মীয় উৎসবকে উপলক্ষ করে পোস্টারে শুভেচ্ছা দিয়ে জানান দিচ্ছেন প্রার্থীরা। আবার প্রার্থীদের পক্ষে তাদের সমর্থকরাও সম্ভাব্য প্রার্থীর ছবি দিয়ে পোস্টার, ব্যানার সাঁটিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীর জন্য দোয়া চাইছেন। প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক গণসংযোগ শুরু না করলেও এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে নতুন মুখও আছেন। মনোনয়ন যুদ্ধে লড়বেন একই দলের একাধিক নেতা। প্রার্থী নির্বাচনে চমকও থাকতে পারে এ আসনে। তাই নানা হিসাব-নিকাশ করে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের পথ চলছেন। আওয়ামী লীগ তাদের আসন ধরে রাখতে চায় আর ২০ দলীয় জোট তথা বিএনপি চায় তাদের হারানো আসন ফিরে পেতে। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীও বসে নেই। তবে ভোটের জন্য জোর লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আসনটি বেশির ভাগ সময়ই দখলে ছিল আওয়ামী লীগের; দুবার বিএনপির, দুবার জাতীয় পার্টির। গাজীপুর-২ আসনে প্রয়াত সংসদ সদস্য ও শ্রমিক লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি ১৪ দলের পক্ষ থেকে এবারও মনোনয়ন চাইবেন। আহসান উল্লাহ মাস্টার ২০০৪ সালের ৭ মে খুন হলে ওই বছরই অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে জাহিদ আহসান রাসেল এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে ও ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত। সরকারি এবং দলীয় ছাড়াও এলাকার নানা কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তিনি। চাইছেন ভোটও। আওয়ামী লীগ-জাপা জোট হলেও রাসেলই এ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ আসনে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানও নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন। জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মো. হাসান উদ্দিন সরকার প্রার্থী হবেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাবেক এমপি হাসান উদ্দীন সরকার। তিনি এক সময় ছিলেন টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যানও। রাজনৈতিক বাস্তবতার চাপের মধ্যেও বিভিন্ন কৌশলে হাসান উদ্দিন সরকার দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে চেষ্টা করছেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিয়ে তাদের সুখ-দুঃখের কথাও শোনেন। বলাবলি হচ্ছে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও গাজীপুর সিটি মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান ও হাসান সরকারের মধ্যে একজন মেয়র পদে নির্বাচন করলে অন্যজন সংসদ নির্বাচন করার সম্ভাবনা বেশি। তবে সংসদ নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচন হলে সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীর ওপর নির্ভর করছে বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন। অধ্যাপক এম এ মান্নান ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত হন। এরপর খালেদা জিয়ার সরকারের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন। পরে আসন ভাগ হলে তিনি বর্তমান গাজীপুর-৩ আসন (শ্রীপুর উপজেলাসহ গাজীপুর সদরের আংশিক নিয়ে গঠিত) থেকে ২০০৮ সালে নির্বাচন করেন এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট রহমত আলীর কাছে পরাজিত হন। এখানে শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি মো. সালাহ উদ্দিন সরকারও প্রার্থী হবেন বলে নির্বাচনী মাঠে প্রচার আছে। জাতীয় পার্টির স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও সাবেক স্বাস্থ্য সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। সম্প্রতি তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। গাজীপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. জয়নাল আবেদীনও এ আসনে প্রার্থী হতে চান। এ ছাড়াও ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান, বাসদের মো. আবদুল কাইয়ুম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের শেখ মো. মাসুদুল আলম, সিপিবির মো. জিয়াউল কবির নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। জামায়াতে ইসলামী জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী। এ ক্ষেত্রে জোটের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় তারা।

সর্বশেষ খবর