শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রতিদিন স্তন ক্যান্সারে মারা যাচ্ছেন ১ হাজার ২৫৫ জন

ঝুঁকিতে নিম্ন ও মধ্য আয়ের নারীরা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ক্যান্সারে মৃত্যুর ঘটনায় নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন স্তন ক্যান্সারে। বিশ্বে প্রতিদিন স্তন ক্যান্সারে মারা যাচ্ছেন প্রায় ১ হাজার ২৫৫ জন। এ সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। তবে নিয়মিত স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে এ রোগ শনাক্ত করে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে বিশ্বে প্রতিবছর ১ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ক্যান্সার সচেতনতা মাস পালন করা হয়। ক্যান্সার সচেতনতা মাস উপলক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন ১৩৮ কোটি এবং মারা যাচ্ছেন প্রায় ৪ লাখ ৫৮ হাজার নারী। নারীরা অন্য রোগের তুলনায় স্তন ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশের নারীরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর কারণ হিসেবে তারা দায়ী করেছেন অনিয়মিত জীবনযাপন, নগরায়ন এবং পশ্চিমা জীবনযাপনের অনুকরণ। নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশে স্তন ক্যান্সারে প্রতি বছর মারা যাচ্ছেন ২ লাখ ৬৯ হাজার নারী। এদের বেশির ভাগই সচেতনতার অভাবে বুঝতে পারেননি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার অবস্থা। তাই শেষ ধাপে পৌঁছানোয় মৃত্যুর হাত থেকে তাদের ফেরাতে পারেননি চিকিৎসকরা। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণকে দায়ী করেন চিকিৎসকরা। এ ব্যাপারে এ্যাপোলো হসপিটালস অনকোলজি বিভাগের কো-অর্ডিনেটর এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. কৈলাশ মিশ্র বলেন, স্তন ক্যান্সারে বেশ কিছু কারণে নারীরা আক্রান্ত হন। এর মধ্যে  রয়েছে দেরিতে বিয়ে করা, দেরিতে গর্ভধারণ করা, গর্ভনিরোধক পিল খাওয়া, শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া ও স্থূলতা। এ বিষয়গুলোতে সচেতন হলে স্তন ক্যান্সার ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়তে থাকে। বয়স তো থামিয়ে রাখা যায় না। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে এবং শরীরে পরিবর্তন অনুভব হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। স্তন ক্যান্সার কোনো সংক্রামক বা ছোঁয়াছে রোগ নয়। তাই এটা একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়ায় না। স্তন ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ শনাক্ত করেছেন চিকিৎসকরা। স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় স্তনে এক ধরনের চাকা আকার ধারণ করে, তবে এটাতে কোনো ব্যাথা থাকে না। এ ছাড়া স্তনের আকার বা আকৃতিতে পরিবর্তন হতে পারে,  স্তনের ত্বক কুঁচকে যেতে পারে, স্তনের বোঁটা ভিতর দিকে ঢুকে যাওয়া, স্তনের বোঁটা থেকে রক্তসহ তরল পদার্থের ক্ষরণ, স্তনের বোঁটায় বা তার চারপাশে চুলকানির মতো হওয়া, বগলের লসিকা গ্রন্থিগুলো ফুলে যাওয়াও স্তন ক্যান্সারের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী এবং জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ্ তালুকদার রাসকিন বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ শনাক্ত হচ্ছেন এবং চিকিৎসা নিচ্ছেন। শনাক্ত না হওয়ার পেছনে অনেক কারণ বিদ্যমান। যেমন— শহুরে মানুষকে সচেতন করার কিছু কার্যক্রম থাকলেও গ্রামাঞ্চলের মানুষকে সচেতন করার কার্যক্রম নেই। আমাদের দেশের নারীরা লজ্জা ও সংকোচে স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণ পরীক্ষায় আগ্রহী নন। শহর এলাকায় ক্যান্সার শনাক্তের ব্যবস্থা থাকলেও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। এ ছাড়া গ্রামাঞ্চলের মানুষ ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন নন। অনেকেই স্তনের সমস্যা যখন শুরু হয়, তখন খেয়াল করেন না। এসব কারণে ক্যান্সার শনাক্ত করতে বিলম্ব হয়। তাই চিকিৎসায়ও ভালো ফল পাওয়া যায় না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর