শিরোনাম
রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নতুন বইয়ের মান নিয়ে সংশয়

সরকারের অর্জন ম্লান করার পাঁয়তারা

আকতারুজ্জামান

নিজস্ব ছাপাখানা, বাঁধাই প্রতিষ্ঠান নেই, সক্ষমতা-রিক্ত এমন প্রতিষ্ঠানও ২০১৮ সালের বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণের কাজ পেয়েছে। তারা সরবরাহ করছে নিম্নমানের বই। আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের মুদ্রণ সক্ষমতা থাকলেও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে কম মানের কাগজে বই ছাপছে। সম্প্রতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) একটি পরিদর্শন টিম এমন একটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিম্নমানের প্রায় ২৫ হাজার বই কেটে ফেলেছে। মাধ্যমিকের বইয়ের দায়িত্বে থাকা ইন্সপেকশন এজেন্ট ‘বালটিক বিডি লি.’ ৩২টি প্রেসের নিজস্ব ছাপাখানা ও বাঁধাইখানা নেই বলে প্রতিবেদন দিলেও তাদের বিরুদ্ধে এনসিটিবি তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি এসবের মধ্যে থাকা কয়েক প্রতিষ্ঠানকে নবম-দশম শ্রেণির ১২টি বই মুদ্রণে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ নভেম্বরের মধ্যে বই সরবরাহ করার কথা থাকলেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এখনো ছাপানোর কাজই শুরু করেনি। সব মিলে আগামী শিক্ষাবর্ষে যথাসময়ে বিনামূল্যের বই সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি মান নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বই নিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একটি মহল পাঁয়তারা করছে।

জানা গেছে, মহানগর প্রিন্টিং প্রেস, ফাইভ স্টার প্রিন্টিং প্রেস, পিএ প্রিন্টার্স, ফেইথ প্রিন্টিং প্রেস, দিগন্ত অফসেট প্রিন্টার্স, বৃষ্টি প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্সসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিকের সুখপাঠ্যের বইয়ের কাজ পাওয়ায় সময়মতো বই সরবরাহ করা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এনসিটিবির একটি সূত্র বলছে, অবশ্য তারা যথাসময়েই বই আদায় করে নেবেন। এনসিটিবির একটি সূত্র বলেছে— সুখপাঠ্যের টেন্ডারপ্রক্রিয়া কোনো কারণ ছাড়াই বিলম্ব হয়েছে। এসবের প্রায় দুই লাখ বই ছাপা কাজ এখনো শুরু করতে পারেনি এনসিটিবি।

সরকারের লক্ষ্য ২০১৮ সালে বিনামূল্যে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৯টি বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া। মানহীন কাগজে বই ছাপা, সক্ষমতা না থাকা প্রতিষ্ঠান কাজ পাওয়া, বই ছাপাতে বিলম্ব করায় কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, বছরের প্রথমেই বিপত্তির সামনে পড়তে পারে। গত বছরগুলোতে যথাসময়ে মানসম্মত বই সরবরাহ না করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করার পর অন্য নাম ব্যবহার করে কার্যাদেশ হাতিয়ে নিয়েছে। এতেও সংশয় রয়েছে যথাসময়ে বই সরবরাহ না করার। এনসিটিবি সূত্র জানায়, লামিয়া প্রিন্টার্স এর আগে মানসম্মত কাজ না করায় তাদের সরকার কালো তালিকাভুক্ত করে। তাই তারা গত বছর প্লাসিড প্রিন্টার্স নাম ধারণ করে কাজ বাগিয়ে নেয় এনসিটিবির কাছ থেকে। গতবারও চুক্তি অনুযায়ী বই সরবরাহ করতে না পারায় এনসিটিবির অসন্তোষের মুখে পড়ে। সে জন্য এবার ‘রেজা প্রিন্টার্স’ নামে কাজ নিয়েছে। দি ক্যাপিটাল প্রেস ২২০ লটে মাধ্যমিকের প্রায় দুই লাখ বই ছাপার কাজ পেয়েছে। সম্প্রতি ছাপাখানাটির ঠিকানায় ৩৪ আর এম দাস রোড সূত্রাপুরে গিয়ে এনসিটিবির এক সদস্য দেখতে পান ওটা তালাবদ্ধ। পরে এনসিটিবির চেয়ারম্যানসহ একটি টিম নিয়ে গেলে দেখতে পান এখন পর্যন্ত কোনো বই ছাপানো শুরুই করেনি তারা। অথচ ১৭ আগস্ট কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। আর ১৪ নভেম্বরের মধ্যে ছাপা কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। ক্যাপিটালের সঙ্গে কেন এনসিটিবির চুক্তি বাতিল করা হবে না এ মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বাজারে নিম্নমানের কাগজ সরবরাহ করার শীর্ষে আছে আল নূর পেপার মিলস। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আগের বছরগুলোতেও নিম্নমানের কাগজ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এনসিটিবিতে। এ ছাড়াও মক্কা পেপার মিলস, গাজীপুর পেপার মিলস, পূর্বাচল পেপার মিলস, হাক্কানী পেপার মিলস, মোস্তফা এবং ইকো পেপার মিলস নিম্নমানের কাগজ বাজারে সরবরাহ করছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রিয় প্রিন্টিং প্রেস, এসআর প্রিন্টিং প্রেস, মডেল প্রিন্টিং প্রেস, লিখন প্রিন্টিং, সীমান্ত প্রিন্টার্স, কোয়ালিটি প্রিন্টিং প্রেস, রেজা প্রিন্টিং প্রেস, পিএ প্রিন্টার্স, রিফাত প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, বর্ণমালা প্রেস, নুরুল ইসলাম প্রিন্টিং প্রেস, ফাহিম প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, সোম প্রিন্টিং প্রেসসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার করছে। এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, বই ছাপা কাজে মানের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। সক্ষমতা না থাকা কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ পায়নি বলে উল্লেখ করেন। তবে তিনি বলেন, কেউ কেউ হয়তো কিছু বই অন্য কোনো ছাপাখানা থেকে ছাপিয়ে এনেছে। বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের বই তুলে দেওয়া হবে জানিয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ইতিমধ্যে ১৮ কোটি বই ছাপা হয়েছে। নিম্নমানের বই দেওয়ার চেষ্টা করলে কেউ ছাড় পাবে না। এ ব্যাপারে এনসিটিবির প্রতিনিধি দল তত্পর।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর