মিয়ানমারের অভিবাসন, শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেইন সোয়ে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বলেছেন, বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়াদের আবারও গ্রহণ করা হবে, তবে তাদের নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করব না। এর অর্থ হবে— ‘আমরা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়া মানুষদের গ্রহণ করছি। তাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করছি না।’
ইলেভেন মিয়ানমার নামে একটি অনলাইনের প্রতিবেদনে গতকাল বলা হয়েছে, মিয়ানমার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের এক বৈঠকে থেইন সোয়ে এ কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লোকদের ফিরিয়ে আনার অর্থ তাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেওয়া নয়। থেইন সোয়ে বলেন, আমরা ‘বাঙালি’দের গ্রহণ করছি, যারা সহিংসতার জন্য বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিল। এখানে তাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে না। যারা মিয়ানমারে ফিরে আসতে চাইবে তাদের কাছে অবশ্যই ‘যাচাইকরণ প্রক্রিয়ার কার্ড’ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা প্রতিদিন প্রায় দেড়শ লোককে ‘চেক’ করার পরিকল্পনা করেছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যা বাড়তে বা কমতে পারে। দুই দেশের মধ্যে এই নীতিই ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা জানালেন চীনা রাষ্ট্রদূত : রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রুত সময়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে চীন বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং। তিনি বলেন, আমরা যেমন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হই ঠিক তেমনি বাংলাদেশও রোহিঙ্গা নিয়ে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। আমরা কথা দিচ্ছি বাংলাদেশের পাশে থাকব। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনসিসি সম্মেলন কক্ষে দুই দেশের মধ্যে একটি প্রকল্পের কাঠামোগত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। মিং কিয়াং বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়ে আমাদের বন্ধু। আমরা আশা করব দুই দেশের সঙ্গে সেই সম্পর্ক বজায় থাকবে। দুই ভ্রাতৃসুলভ রাষ্ট্র একসঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করে ফেলব। ইতিমধ্যেই আমি লক্ষ্য করেছি যে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার মাধ্যমে কিছু কিছু দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মহেশখালীর গভীর সমুদ্র থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিবহনে ৪৬ দশমিক ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক। প্রতি ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় তিন হাজার ৭৪২ কোটি টাকা। ইনস্টালেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপ লাইন প্রকল্পের আওতায় ঋণ দিচ্ছে চীন। এ জন্য মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত দুটি পাইপ লাইন নির্মিত হবে। প্রতিটি পাইপ লাইনের দৈর্ঘ্য হবে ১১০ কি.মি. করে। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলিয়ে বছরে ৯ মিলিয়ন টন তেল পরিবহন করা সম্ভব হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আযম ও ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং এতে সই করেন। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৬০ কোটি ডলার। বাকি অর্থ জিওবি খাত থেকে মেটানো হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে গভীর সমুদ্র বন্দরের নিচ দিয়ে দুটি তেল পাইপ নির্মিত হবে। একটি দিয়ে পরিশোধিত অপরটি দিয়ে অপরিশোধিত তেল পরিবহন করা হবে। এতে সিস্টেম লসসহ সময় কমবে। একই সঙ্গে দেশে তেল সঞ্চালনে নতুন গতি আসবে। তিনি আরও বলেন, মহেশখালী দ্বীপ নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান হচ্ছে। এখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে। ইতিমধ্যে ইকোনমিক জোনও হচ্ছে। অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে দুটি পাইপলাইন নির্মাণ শুরু হবে। এই পাইপ লাইন নির্মাণে সময় লাগবে ৩৬ মাস। ফলে আগে যেখানে গভীর সমুদ্রবন্দর থেকে ছোট জাহাজে চট্টগ্রামে তেল আনতে ১২ দিন সময় লাগত এখন লাগবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা।