মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ত্রাণ দিতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন ৬ জন

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আরও ৩

সঞ্জিত সাহা, নরসিংদী

মানবতার টানে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিবিরে ত্রাণ নিয়ে ছুটে গেছেন সিলেটের বিয়ানীবাজারের ৭ বস্ত্র ব্যবসায়ী। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তাদের মধ্যে লাশ হয়ে ফিরে এসেছেন ৬ জন। জানা গেছে, এই ৭ ব্যবসায়ী রোহিঙ্গাদের মুখে হাসি ফুটাতে নগদ টাকা ও খাবারের পাশপাশি এক হাজার কম্বল নিয়ে যান। দুই দিন উখিয়ায় অবস্থান করে তারা ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। গতকাল সকালে মাইক্রোবাস যোগে সিলেটের বিয়ানীবাজারে যাচ্ছিলেন তারা। মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে মাইক্রোবাসটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকা কান্দাইলে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ৪ জন নিহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান আরও ২ জন। এর কিছুক্ষণ পর একই সড়কে জেলার শিবপুর উপজেলা কারারচর নামক স্থানে যাত্রীবাহী বাস ও লেগুনার মধ্যে সংঘর্ষে আরও ৩ জন নিহত হন। আলাদা দুই সড়ক দূর্ঘটনায় ৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১০ জন। সকাল ৮টা ও ১০টায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন বিয়ানীবাজারের মাথিউরা গ্রামের ব্যবসায়ী আবদুল করিম, একই উপজেলার ছোট দেশের খায়রুল বাশার খান, শ্রীধরা গ্রামের জুবের আহমদ, কাকরদিয়া গ্রামের ইকবাল হোসেন, কসবার বাবুল আহমদ ও মাইক্রোবাস চালক বাবুল হোসেন। মাইক্রোবাস চালকের বাড়ি কোথায়- তা জানা যায়নি। গুরুতর আহত হয়েছেন মাইক্রোবাসের দুই যাত্রী। তারা হলো হাফিজ উদ্দিন ও দেলোয়ার হোসেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। শিবপুরের কারারচরে দুর্ঘটনায় নিহতরা হলে গ্রামের আরমান মিয়া (৫০) ও সৈয়দনগর গ্রামের মাসুম মিল্লাহ ও সুজন মিয়া (২৫)। পুলিশ জানিয়েছেন, নরসিংদী থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিলেন। ঢাকা সিলেট মহাসড়কের সদর উপজেলার কান্দাইলে যাত্রীবাহী বাসটি পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকা থেকে সিলেটগামী একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি ধুমড়ে-মুচড়ে যায়।

দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে চালকসহ ৪ জন নিহত হন। আহত ৪ জনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ২ জনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কের দুই পাশে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোক ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। পরে দুর্ঘটনাস্থল থেকে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি সরিয়ে নিলে দেড় ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এদিকে বিকালে সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে নিহতদের লাশ নিয়ে সিলেটের উদ্দেশে রওনা দেন স্বজনরা। দুর্ঘটনায় নিহত খায়রুল বাশার খানের চাচাতো ভাই আশ্রাফুল বাশার খান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে বৃহস্পতিবার রাতে আমার ভাইসহ ৭ জন ব্যবসায়ী  সিলেট থেকে কক্সবাজারের উখিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। সেখানে শুক্র ও শনিবার অবস্থান করে রোহিঙ্গাদের শিবিরে নগদ টাকা, খাবার ও কম্বল বিতরণ করেন। এরপর রবিবার কক্সবাজার ঘোরাফেরা করে ওইদিন রাতেই মাইক্রোবাস যোগে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন। গতকাল দুপুরে খবর পাই তারা নরসিংদীতে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।’ বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি আরও বলেন, মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে গিয়ে বাড়ি ফিরল লাশ হয়ে।

নরসিংদী ফায়ার সার্ভিস উপ সহকারী পরিচালক মজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, মাইক্রোবাসের চাকা বিস্ফোরণ হয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের সবার বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার বলে জানিয়েছে পুলিশ। ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর হাফিজুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দুটি আটক করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর