শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

কোথায় হবে নতুন বিমানবন্দর

নিজামুল হক বিপুল

কোথায় হবে নতুন বিমানবন্দর

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য মাদারীপুরে স্থান নির্ধারণ হলেও স্থানীয় সংসদ সদস্যের আপত্তির কারণে বিষয়টি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার  বৈঠক করে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে। ফলে আগামী নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

অবশ্য বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, শিগগির এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। তিনি জানান, আগামী নির্বাচনের আগেই তারা নতুন বিমানবন্দর নির্মাণকাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের চেষ্টা করছেন।

বিমান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে গত বছর জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোই কোম্পানি লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেয় সরকার। নিপ্পন কোই এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত স্থানগুলোতে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করে। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চর জানাজাত এবং মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের মাঝামাঝি স্থানের একটি চরসহ মোট তিনটি স্থান চিহ্নিত করে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য সম্প্রতি একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয় বিমান মন্ত্রণালয়কে। যার মধ্যে চর জানাজাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এই প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হলে গত ২৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত স্থানগুলো নিয়ে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে মাদারীপুরের সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারদলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে চর জানাজাত নিয়ে স্থানীয় এমপি জোরালো আপত্তি জানান। তিনি বলেন, চর জানাজাতে বিমানবন্দর নির্মাণ করতে গেলে বহুমুখী সমস্যায় পড়তে হবে। সেখানে বহু জনবসতি রয়েছে। বিপুল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। অধিগ্রহণের জন্যই সরকারকে অনেক বেশি আর্থিক মূল্য গুনতে হবে। এ ছাড়া আড়িয়ল বিলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সে রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আগামী নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দল এবং সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সূত্র জানায়, স্থানীয় এমপির এমন বক্তব্যের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্ভাব্যতা যাচাই করা তিনটি স্থানের ওপর আরেক দফা সমীক্ষা চালানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর বিমান মন্ত্রণালয় গত ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোই প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করে। বিমান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল হাসনাত জিয়াউল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর আমরা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেছি। নতুন করে আরেক দফা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য নিপ্পন কোইকে নির্দেশ দিয়েছি। তারা ১৫ কর্ম দিবসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দেবে। তারপর বিষয়টি আবারও প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হবে। তিনি জানান, নিপ্পন কোই যে তিনটি স্থান সম্পর্কে মতামত দিয়েছে সেগুলোর কোনটিতে কত জনবসতি আছে, কত লোককে রি-সেটেলমেন্ট করতে হবে, রি-সেটেলমেন্টে কত টাকা খরচ হতে পারে, ভূমি অধিগ্রহণে কত টাকা খরচ হতে পারে— এসব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রসঙ্গত, নতুন বিমানবন্দরের স্থান হিসেবে ২০১০ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছিল। কিন্তু বিমানবাহিনীর আপত্তির কারণে তা আর আগায়নি। এরপর সরকার মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু এলাকাবাসীর আন্দোলনের মুখে আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। পরে বিমানবন্দরের জন্য কেয়াইন, চর বিলাসপুর, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চর জানাজাত ও রাজৈর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা এবং গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বাঘিয়ার বিল, এই আটটি স্থান চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পরিদর্শন ও পর্যালোচনা করা হয়। তবে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চর জানাজাত সম্পর্কে স্থান নির্ধারণসংক্রান্ত সারসংক্ষেপে বলা হয়, পদ্মা নদীর তীরের এই চরের যোগাযোগব্যবস্থা ভালো নয়। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এর দূরত্ব ৬৮ কিলোমিটার। বিমান চলাচল খাতে ভবিষ্যতের বর্ধিত চাহিদা পূরণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে রাজধানীর অদূরে একটি নতুন বিশ্বমানের বিমানবন্দর করা দরকার। বর্তমান সরকার একে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করছে। দ্রুততার সঙ্গে এর সফল বাস্তবায়নে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। এ বিমানবন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে একটি বিমান চলাচলের বড় কেন্দ্র (এয়ারলাইনস হাব) হিসেবে গড়ে তোলারও পরিকল্পনা করছে সরকার। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে এ প্রকল্পের বিস্তারিত সমীক্ষা সম্পাদনের জন্য জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোই কোম্পানি লিমিটেডকে নিয়োগ দিয়ে গত বছরের ৩১ আগস্ট নিপ্পনের অনুকূলে কার্যাদেশ প্রদান করে বেবিচক। ২৯ সেপ্টেম্বর নিপ্পনের সঙ্গে বেবিচকের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। আর ১ অক্টোবর থেকে প্রতিষ্ঠানটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণের লক্ষ্যে সমীক্ষার কাজ শুরু করেছিল। এই সমীক্ষার জন্য ১৩৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল। এক বছর সমীক্ষা চালানোর পর গত মাসের শেষ দিকে তারা প্রতিবেদন জমা দেয়।

সর্বশেষ খবর