শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম নগরীতে যত সমস্যা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারী বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। জোয়ারের পানি, অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারে কিংবা হালকা বৃষ্টিতে মাসের বেশির ভাগ সময় ডুবে থাকে এ দুই বাজারের বেশির ভাগ এলাকা। এতে করে শত শত কোটি কোটি টাকার ভোগ্যপণ্য নষ্ট হয় ব্যবসায়ীদের। শুধু চাক্তাই-খাতুনগঞ্জই নয়, একইভাবে জোয়ার এবং হালকা বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরীর কিছু কিছু এলাকা। জলাবদ্ধতা ছাড়াও নানা সমস্যায় পিষ্ট বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থা, যানজট এখন যেন নিত্যসঙ্গী নগরবাসীর। পানি, গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সংকটও চরম আকার ধারণ করেছে। এতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে চট্টলবাসীর জীবন। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি সংস্থাকে সমস্যাগুলো নিরসনের দায়িত্ব দিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে নিরসন হবে যত সংকট। দুর্ভোগ লাঘব হবে জনসাধারণের।

নগর পরিকল্পনাবিদ দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, জলাবদ্ধতা, যানজট এবং সড়কের বেহাল দশা দৃশ্যমান সমস্যার অন্যতম। এ তিন সমস্যাই জনজীবনে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে আমলাতান্ত্রিকতা থেকে দূর করে জনপ্রতিনিধিদের হাতে দিতে হবে। পৃথকভাবে কোনো সংস্থাকে উন্নয়নের দায়িত্ব না দিয়ে একটি সংস্থাকে উন্নয়নের দায়িত্ব দিতে হবে। এতে করে উন্নয়ন কাজে যেমন জবাবদিহিতা বাড়বে, সেই সঙ্গে উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত হবে।

জানা যায়, নগরবাসীর দুর্ভোগের অপর নাম জোয়ার ও বৃষ্টির পানি। অল্প বৃষ্টিতেই নগরীর বেশির ভাগ এলাকা হাঁটু থেকে কোমর সমান কিংবা কোথাও গলা সমান পানিতে ডুবে যায়। প্রায় প্রতি মাসেই অর্ধেক সময় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় কিছু এলাকা। জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকা এলাকারগুলোর মধ্যে অন্যতম আগ্রাবাদ, খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, আছাদগঞ্জ। এসব এলাকায় জোয়ারের পানিতে দোকান ও গুদামে ভিজে নষ্ট হয় ভোগ্যপণ্য। গত কয়েক বছর ধরে জোয়ারের পানি দুর্ভোগের সঙ্গী হয়েছে নগরীর চান্দগাঁও, মোহরা, ফরিদাপাড়া, খাজা রোড, বাকলিয়া, বলিরহাট, দক্ষিণ বাকলিয়া, রাজাখালি, মিয়াখান নগর এলাকা। যদিও জলাবদ্ধতা নিরসন করতে বৃহৎ একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। যানজট সমস্যা নগরীর অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থার কারণে যানজট নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী। যানজটের কবলে পড়ে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় সল্টগোলা ক্রসিং, আগ্রাবাদ শেখ মুজিব সড়ক, দেওয়ানহাট, জিইসি, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, রাহাত্তার পুল, কালামিয়া বাজার, চকবাজার মোড়, গুলজার মোড়, আন্দরকিল্লা, অলংকার ও এ কে খান মোড়সহ নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে। টানা বর্ষণ, জলাবদ্ধতা এবং নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক তৈরির ফলে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে সড়কগুলো। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে নগরবাসীর জীবনে। এসব সড়ক দিয়ে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। এতে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা ও জ্বালানি। চসিকের হিসাবমতে নগরীর ১১০০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ৫০০ কিলোমিটারই ক্ষতবিক্ষত। ক্ষতির পরিমাণও প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। যানবাহন ও লোকজনের চলাচলের প্রায় অনুপযোগী এসব সড়ক সংস্কারের দাবিতে নগরবাসী মানববন্ধন করেছেন। দিয়েছেন আলটিমেটাম। মেয়র আ জ ম নাছির আশ্বস্ত করেছেন, বৃষ্টি বন্ধ হলেই এসব সড়ক মেরামত শুরু হবে। এদিকে, নগরীতে দৈনিক গড়ে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও মিলছে সাড়ে ৮০০ মেগাওয়াট। লোডশেডিং করে ঘাটতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগকে। চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির চাহিদা দৈনিক ৫০ কোটি লিটার হলেও উৎপাদন হচ্ছে ৩২ কোটি লিটার। ১৮ কোটি লিটার ঘাটতি থাকায় পানি সংকট নগরীর নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্যাস সংকট দিন দিন বাড়ছে নগরীতে। সংকটের কারণে শুধু শিল্প-কারখানাই নয়, নগরীর অনেক এলাকার বাসাবাড়িতে গ্যাসের চুলা জ্বলে না।

সর্বশেষ খবর