শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মাল্টায় বদলে যাবে বগুড়া

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

মাল্টায় বদলে যাবে বগুড়া

সবুজ রং ধরেছে। ডালপালা মেলেছে সারি সারি চারাগুলো। মাল্টার সবুজ রং যেন রাঙিয়ে দিয়েছে গোটা বগুড়াকে। আর চারাগুলো ডালপালা মেলায় নতুন স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে এখানকার কৃষকের মনে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে মাল্টা ফুলের পাগল করা গন্ধ। বগুড়ায় এখন মাল্টার ব্যাপক ফলনের হাতছানি।

ফলন পাওয়া শুরু হলে বদলে যাবে বগুড়া। জেলায় মাল্টার আবাদ করছেন অনেক কৃষক। এমনই একজন নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের টাকুরাই গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি বলেন, নিজের ৫৪ শতক জমির ওপর গড়ে তুলেছেন তার মাল্টা বাগান। এখানে পাকিস্তানি জাতের ২৩৫টি মাল্টা গাছ লাগানো হয়েছে। মাল্টার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, চারা রোপণের দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যেই পাওয়া যায় ফল। মাল্টা চাষের শুরু থেকেই কৃষি অফিসের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ পাচ্ছেন তিনি। তার বাগানের গাছগুলো এখন বেশ সতেজ হয়েছে। আগামী বছর ফলন পাবেন বলে আশা করছেন এই কৃষক। আবু বক্কর বলেন, ‘মাল্টা চাষে অনেক সুবিধা রয়েছে। মাল্টা বাগানে আপনি সাথী ফসল হিসেবে আবাদ করতে পারবেন অন্যান্য ফলও। এ সুবিধা নিয়ে আমি একই বাগানে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করছি ২৫০টি থাই পিয়ারা, ২২০টি থাই লেবু, ২০টি আমগাছ, পাঁচটি কমলা গাছ, ১২০০টি লিচু গাছ।’ তিনি বলেন, তার বাগান করা দেখে এলাকার বেশ কিছু কৃষক ও বেকার যুবক মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ফলন পাওয়া শুরু হলে আয়ও শুরু হবে বলে জানান তিনি।জেলার ১২ উপজেলায় সরকারিভাবে সহযোগিতা নিয়ে চাষিরা মাল্টা চাষে উৎসাহিত হয়ে উঠেছেন। জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হয়েছে।

 কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বগুড়ায় উৎপাদিত মাল্টা আগামী বছর বাজারে পাওয়া যাবে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচার সেন্টার বনানী কার্যালয়ের কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ২০১৫ সাল থেকে জেলায় বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ শুরু হয়। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া মাল্টা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এ পর্যন্ত যা চাষ হয়েছে তাতে দেখা গেছে এ জেলার মাল্টা মিষ্টি। দেশের অন্যান্য জেলায় উৎপাদিত মাল্টা সে অর্থে এমন মিষ্টি নয়। এখানে মাল্টার গাছগুলো কলম করে চারা কৃষকদের মাঝে বিক্রি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় কৃষক পর্যায়ে বিক্রি করা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার চারা। প্রতিটি চারা বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা দরে। এ ছাড়া কৃষি সম্প্রসারণের আওতায় রাজস্ব খাতের অর্থায়নে এখানে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে জেলার ১২টি উপজেলার কৃষকদের মাল্টা চাষে আগ্রহী করে তুলতে বারি-১ জাতের মাল্টার চারা বিতরণ করা হয়। চাষিরা সেই চারা দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টার বাগান তৈরি করে ফলন পাওয়ার আশা করছেন এখন। শুধু চারা বিতরণ নয়, চাষিদের প্রশিক্ষণ, মাল্টার চাষ প্রণালি বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করার পাশাপাশি প্রত্যেক কৃষককে টিএসপি সার ১৫ কেজি, এমপিও সার ১৫ কেজি, জিপসাম ১৮ কেজি এবং একটি সাইনবোর্ডও দেওয়া হয়েছে। এই বাগানগুলোতে আগামী বছর থেকে ফলন পাওয়া যাবে। সরকারিভাবে অর্থায়ন ছাড়াও কিছু কৃষক নিজ উদ্যোগে চারা সংগ্রহ করে বাগান তৈরি করে ফলন পেয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ২০টি মিশ্র ফলের বাগান রয়েছে। সেখানে মাল্টার পাশাপাশি অন্য ফলও চাষ করা হচ্ছে।

জানা যায়, ২০১৫ সালে বগুড়ার নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুর, কাহালু, বগুড়া সদর ও শেরপুর উপজেলায় কয়েকজন ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে মাল্টা চাষ শুরু করেন। এরও আগে বগুড়ার কয়েকটি নার্সারি মালিক নিজ বাগানে এবং বাড়ির ছাদে মিষ্টি মাল্টার চাষ করেন। সে সময় শখের বশে হলেও এবার বগুড়া জেলায় বাণিজ্যিকভাবে মাল্টার চাষ শুরু হয়েছে। জেলার বেশির ভাগ বাণিজ্যিক মাল্টার বাগানের বয়স এক থেকে দুই বছর। এরই মধ্যে দুই বছরের গাছে মাল্টা ধরা শুরু হয়েছে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচার সেন্টার বনানী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবদুর রহিম জানান, বগুড়ায় ১৫ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হয়েছে। আগামী বছর থেকে মাল্টার বাণিজ্যিক ফলন পাওয়া যাবে। এর মধ্যে কিছু বাগান মিশ্রভাবে তৈরি করা হয়েছে। মিশ্র বাগানে মাল্টা গাছের ফাঁকে ফাঁকে পেয়ারা, লিচুসহ অন্যান্য ফলের গাছও লাগানো হয়েছে। একটি সবল গাছ থেকে দেড়শটিরও বেশি মাল্টা পাওয়া যাবে। এই মাল্টা হবে মিষ্টি। মাল্টার বাগান গড়ে ওঠায় বিভিন্ন এলাকার চাষিরা এ ফল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বাণিজ্যিকীকরণ শুরু হলে মাল্টা চাষের পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর