রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার তুমি কার?

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার তুমি কার?

পরিকল্পনা ত্রুটির কারণে সারাক্ষণই যানজট লেগে থাকছে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

পরিকল্পনায় ত্রুটি, লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থতাসহ নানা কারণ দেখিয়ে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের দায়িত্ব নিতে অনীহা দেখাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এই ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর যানজট দূর হওয়া তো দূরে থাক, আগে যেখানে শুধু নিচে যানজট লাগত এখন সেখানে উপর-নিচ জুড়ে ভয়াবহ যানজট লেগে থাকছে। এদিকে এ অবস্থায় ফ্লাইওভারের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। দক্ষিণ সিটির কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা আরও কয়েক দিন অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবে। আর উত্তর সিটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ফ্লাইওভারটি তাদের সংস্থার মধ্যে নয়। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারটি কার? প্রায় ৮ দশমিক ৭০০ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এ ফ্লাইওভারের সিংহভাগই পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভিতর। উত্তর সিটিতে রয়েছে ফ্লাইওভারের কারওয়ান বাজার ও সাতরাস্তাসহ কিছু অংশ। শুরুতে পুরো ফ্লাইওভারটি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শেষ মুহূর্তে দুই সিটি করপোরেশনের কাছেই হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রকল্প পরিচালক ও এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুশান্ত কুমার পাল জানিয়েছেন, উদ্বোধনের পর থেকেই ফ্লাইওভারটি দুই সিটি করপোরেশনের কাছে দ্রুত হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু ফ্লাইওভার ব্যবহারের ম্যানুয়েল তৈরির কাজ চলছে। এরপর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এলাকা অনুযায়ী দুই সিটি করপোরেশনের কাছে ফ্লাইওভারের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে। জানা গেছে, এর মধ্যে ফ্লাইওভারে ট্রাফিক সিগন্যাল, বাম দিকে স্টিয়ারিং, যানজট লেগে থাকা, ওঠানামার র‍্যাম্প জটিলতাসহ নামার লুপে যানজট লেগেই থাকছে। নকশা অনুমোদনের পর থেকেই মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নিয়ে নানা ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে এই ফ্লাইওভার যানজট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার চালু হওয়ার আগে আশা ছিল ওই এলাকায় চলাচলের ক্ষেত্রে যানজটের ভোগান্তি থেকে এটি মুক্তি দেবে মানুষকে। কিন্তু ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর প্রতিনিয়ত এর উপরে-নিচে যানজট লেগে থাকায় সেই আশা হতাশায় রূপ নিচ্ছে। গাড়িচালক, যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ফ্লাইওভারে উঠলেও যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে, আবার নিচেও যানজট বেড়েছে। গতকাল নিউ ইস্কাটনে এসপিআরসি হাসপাতালের সামনে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে বসে ছিলেন ফার্মগেটমুখী আয়াত পরিবহনের একটি বাসের চালক আবদুুল হাই। বাসভর্তি যাত্রী নিয়ে এক জায়গায় তিনি প্রায় ২৫ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছিলেন- কখন যানজট ছাড়বে। আয়াত পরিবহনের ওই বাসের মতো আরও শত শত যানবাহন বাংলামোটর থেকে নিউ ইস্কাটন পর্যন্ত অপেক্ষা করছিল। চালক আবদুল হাই বলেন, ‘বাংলামোটর সিগন্যাল থেকে ইস্কাটনের এসপিআরসি হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। এই রাস্তায় আমার গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা প্রায় আট বছরের। বাংলামোটর থেকে কোনো দিন এ পর্যন্ত জ্যামে পড়তে হয়নি। কিন্তু এ সপ্তাহে প্রায় দিনই এ রকম জ্যামে পড়তে হচ্ছে। আগে বাংলামোটর সিগন্যাল থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ গজ পর্যন্ত জ্যাম লাগত। কিন্তু ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর থেকে এই জট প্রায়ই এ রকম আকার ধারণ করে। তাই দুই সিটির কোনোটিই ফ্লাইওভারটির দায়িত্ব নিতে অনীহা দেখাচ্ছে। দক্ষিণ সিটি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন হলো মাত্র কয়েক দিন আগে। বিষয়টি বুঝতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। এদিকে উত্তর সিটির প্যানেল মেয়র ওসমান গণি জানান, ফ্লাইওভারটি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে পড়েছে। এটার দায়িত্ব আমরা কেন নিতে যাব? উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিন তলাবিশিষ্ট চার লেনের এই ফ্লাইওভারটির দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ৭০০ কিলোমিটার। এটি ১০ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল।

 

সর্বশেষ খবর