রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

এবার শীত আতঙ্কে রোহিঙ্গারা

ফারুক তাহের, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে

রোদ-বৃষ্টির তীব্রতার মধ্যে দিনাতিপাতের পর এখন শীত আতঙ্কে রয়েছে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। দুই মাসের বেশি সময় ধরে কখনো তীব্র গরম কখনো ঝড়ো বৃষ্টিতে ভুগেছে তারা। খুব কাছেই শীত মৌসুম। কিন্তু মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও পুলিশের নির্যাতন এবং অমানবিক নিপীড়নের মুখে প্রায় এক কাপড়ে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গার নেই কোনো শীতবস্ত্র। সরকারি ত্রাণভাণ্ডারেও নেই তাদের দেওয়ার মতো কোনো শীতের পোশাক ও কাঁথা-কম্বল। ফলে চরম শীত আতঙ্কে রয়েছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু। তবে সরকারের তরফ থেকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থা ও এনজিওর কাছে রোহিঙ্গাদের জন্য শীতবস্ত্র আহ্বান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক।

জানা গেছে, বর্তমানে নতুন করে উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। ইউনিসেফের হিসাবমতে এবার পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার মধ্যে রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার শিশু। সাধারণত বয়স্ক কোনো নারী-পুরুষের চেয়ে শিশুদের সহ্যক্ষমতা হয় কম। শীতের প্রকোপে শিশুদের নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে বেশি। এমনিতেই রোহিঙ্গা শিশুদের অধিকাংশই ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা, রক্তশূন্যতা, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছে। তার ওপর শীতে আক্রান্ত হলে তাদের অবস্থা ভয়াবহ রূপ নেবে বলে মনে করছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া উখিয়া-টেকনাফের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি জনপদে আশ্রয় নেওয়ার কারণে স্বভাবতই এখানে শীতের মাত্রা বেশি। তাই শীত জেঁকে বসার আগেই এদের জন্য শীতবস্ত্র নিশ্চিত করা কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়বে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যেহেতু ত্রাণের ওপরই নির্ভরশীল এখানকার আশ্রিত রোহিঙ্গারা, তাই তাদের জন্য ত্রাণ হিসেবে শীতবস্ত্রও আমরা আশা করছি সরকারি-বেসরকারি ও দেশি-বিদেশি সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছে। লাখ লাখ শীতবস্ত্রের জোগান দেওয়া কোনো প্রতিষ্ঠানের একার পক্ষে সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন সংস্থাকে শীতবস্ত্রের চাহিদার কথা জানিয়েছি। এনজিও ব্যুরোর মাধ্যমে এনজিওদের প্রতিও আহ্বান করা হয়েছে। আমাদের হাতে একটিও শীতবস্ত্র মজুদ নেই। তবে যথাসময়ে শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’ কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের মাঝে খাদ্য ও ওষুধসামগ্রীর পাশাপাশি কিছু কিছু বিদেশি সংস্থা ও ইউএনএইচসিআরের পক্ষ থেকে অল্পসংখ্যক রোহিঙ্গার মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা সামান্যই। এত বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য শীতের পোশাক-আশাক জোগান দেওয়া সহজ কথা নয়। তাই শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির আগেই রোহিঙ্গাদের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করছে প্রশাসন। এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক সহকারী স্বাস্থ্য পরিচালক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ভাগ্যধন বড়ুয়া জানান, শীতের মৌসুমে শিশু ও বৃদ্ধরা একটু অসতর্ক হলেই নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ও সর্দি-কাশিতে ভোগে। এ সময় এদের পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ ও আলাদা যত্ন না নিলে মৃত্যুও হতে পারে। গতকাল উখিয়ার বালুখালীর নতুন ক্যাম্পে কথা হয় মিয়ানমারের রাসিদং থেকে ২০-২৫ দিন আগে আসা রহমত আলীর (৫৫) সঙ্গে। তিনি জানান, তাদের সংসারে স্ত্রী এবং ৪ থেকে ২০ বছরের পাঁচ সন্তান রয়েছে। গত কয়েক দিনে এখানে খাদ্য ও অন্যান্য ত্রাণসামগ্রীর পাশাপাশি নতুন-পুরন কিছু জামা-কাপড়ও পেয়েছেন। কিন্তু কোনো শীতবস্ত্র পাওয়া যায়নি। তারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় নিজেদের পরনে যা ছিল তা এবং অল্প কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংসারিক জিনিস ছাড়া কিছুই নিয়ে আসতে পারেননি। দু-এক দিন ধরে শীতের আভাস দেখা দিয়েছে, তাতেই তিনি সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। এতগুলো মানুষের শীতবস্ত্র কেনার মতো সামর্থ্যও তার নেই। তাই বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন রোহিঙ্গা রহমত আলী। কেবল রহমত আলীই নন, তার মতো লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ এখন রয়েছে শীতাতঙ্কে।

 

সর্বশেষ খবর