হাজারো ব্যস্ততায় হাঁপিয়ে ওঠা শহুরে জীবনে ইচ্ছে হলেই প্রকৃতির খুব কাছাকাছি চলে যাওয়া একটু কঠিনই বটে। আর যদি এমনটা চান যে, আপনার চারপাশে হাজার হাজার প্রজাপতি একসঙ্গে ওড়াওড়ি করছে তবে সেটিকে দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই বলা যাবে না। তবে এই দিবাস্বপ্নকেই যেন বাস্তবে রূপ দিয়েছে রাজধানীর অদূরে অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)।

‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ এই স্লোগানে ৮ম বারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় প্রজাপতি মেলা। গতকাল অনুষ্ঠিত এই মেলায় সব বয়সের মানুষের পদচারণায় উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। বিশেষ করে শিশু কিশোরদের উপস্থিতি মেলায় যোগ করে অন্যরকম মাত্রা। জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের উদ্যোগে ২০১০ সাল থেকে নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসছে ব্যতিক্রমী এই প্রজাপতি মেলা। গতকাল বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে মেলা উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রজাপতির সৌন্দর্যের পেছনে দৌড়ায়নি এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। জানতাম না কি কারণে প্রজাপতির পেছনে দৌড়াচ্ছি। প্রজাপতি প্রকৃতিতে কি অবদান রাখছে তা এ প্রজাপতি মেলা থেকে জানতে পারছি। এরকম ব্যতিক্রমী একটি মেলা জাবিতে আয়োজন করতে পেরে আমরা সত্যিই খুব আনন্দিত।’ মেলায় দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্যে ছিল শিশুদের নাচ, বর্ণাঢ্য র‍্যালি, শিশু-কিশোরদের প্রজাপতির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা, হাট দর্শন (জীবন্ত প্রজাপতি প্রদর্শন), অরিগামি প্রজাপতি, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড়ানো, বারোয়ারী বিতর্ক (প্রজাপতি ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক), প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতিবিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী। বিকালে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠান। এবারের মেলায় প্রজাপতির চোখ এবং কালার ভিশনের গবেষণায় সার্বিক অবদানের জন্য ‘বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড-২০১৭’ প্রদান করা হয় অধ্যাপক কেনটারো আরিকাওয়াকে। তিনি জাপানের গ্র্যাজুয়েট ইউনিভার্সিটি ফর অ্যাডভান্সড স্ট্যাডিজের অধ্যাপক। এ ছাড়া ‘ইয়াং বাটারফ্লাই ইনথুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয় জাবির লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আফলাতুন কায়সারকে। মেলার আহ্বায়ক প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন জানান, ‘প্রকৃতি রক্ষায় প্রজাপতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দেশে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির প্রজাপতি আছে। অবকাঠামো বেড়ে যাওয়া, গাছ কাটা, লতাগুল্ম কমে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন তথা অতিবৃষ্টি, অতিরিক্ত গরম প্রভৃতি কারণে প্রজাপতির সংখ্যা দিন দিন কমছে। প্রজাপতি সংরক্ষণে প্রয়োজন মানুষের সহমর্মিতা ও সচেতনতা। প্রজাপতি সংরক্ষণ করতে পারলে প্রকৃতির সৌন্দর্য রক্ষা করতে পারব। প্রজাপতি সংরক্ষণে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যেই এই আয়োজন।’