রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্বতঃপ্রণোদিত গর্ভপাতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

স্বাস্থ্যকর্মী ও যন্ত্রপাতির অভাব

জিন্নাতুন নূর

দেশে যেসব নারী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গর্ভপাত করান তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই অনিরাপদ পরিবেশে ঝুঁকি নিয়ে প্রশিক্ষণবিহীন সেবা প্রদানকারীর কাছে গর্ভপাত করাচ্ছেন। আর অনিরাপদ গর্ভপাতের জন্য এই নারীরা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এ জন্য তারা রক্তক্ষরণ, অসম্পূর্ণ গর্ভপাত, সেপসিস ও জরায়ু ছিদ্র হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যায় ভুগছেন। তবে দরিদ্র এবং গ্রামীণ নারীরা সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ গর্ভপাতের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন। অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রিভেনশন অব সেপটিক এবরশান, বাংলাদেশ (বাপসা)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া যায়। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে গর্ভপাতের হার সবচেয়ে বেশি খুলনা বিভাগে এবং চট্টগ্রামে সবচেয়ে কম। বাপসার গবেষণা থেকে জানা যায়, ১৮৬০ সালের বাংলাদেশ দণ্ডবিধির অধীনে মায়ের জীবন রক্ষা ব্যতীত অন্য যে কোনো কারণে স্বপ্রণোদিত গর্ভপাত অবৈধ করা হয়। যদিও ১৯৭৯ সাল থেকে বাংলাদেশে মাসিক নিয়মিতকরণ সেবা পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে চলে আসছে। যার অংশ হিসেবে ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে বন্ধ থাকা মাসিক পুনরায় চালু করা হয়, যা এমআরএম নামে পরিচিত। তবে ওষুধের মাধ্যমে এই সেবা শেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকে ৯ সপ্তাহ পর্যন্ত অনুমোদিত। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এমআর সেবার সহজলভ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেক নারী-তরুণী গোপনে গর্ভপাত করাচ্ছেন। যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ। সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে বাপসা এ গবেষণা ২০১৪ সালে পরিচালনা করে। সে সময় দেশে ২০ লাখ ৮০ হাজার গর্ভবতী নারীর মধ্যে ৪৮ শতাংশের কাছেই গর্ভধারণ ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। আর এদের মধ্যে তিন-পঞ্চমাংশ সে সময় এমআর বা গর্ভপাত করান। এ সময় ১১ লাখ ৯৪ হাজার নারী স্বপ্রণোদিত হয়ে গর্ভপাত করান। যার অধিকাংশই প্রশিক্ষণবিহীন সেবা প্রদানকারীর হাতে এবং অনিরাপদ পরিবেশে করা হয়। অনিরাপদ গর্ভপাতের কারণে তিন লাখ ৮৪ হাজার নারী বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতায় আক্রান্ত হন। আর এসব নারীর মধ্যে যাদের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল তাদের এক-তৃতীয়াংশ গর্ভপাত-পরবর্তী জটিলতার চিকিৎসা গ্রহণ করেননি। এ জন্য নারীরা রক্তক্ষরণ, অসম্পূর্ণ গর্ভপাত, সেপসিস, জরায়ু ছিদ্র হওয়ার মতো স্বাস্থ্য জটিলতায় আক্রান্ত হন। ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে গর্ভপাত পরবর্তী জটিলতায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীর রক্তক্ষরণজনিত জটিলতা চিহ্নিত করা হয়। ২০১০ সালে এ সমস্যার হার যেখানে ছিল শতকরা ২৭ ভাগ ২০১৪ সালে তা দাঁড়ায় শতকরা ৪৮ ভাগে। যদিও ১৯৭৯ সাল থেকে দেশে এমআর কার্যক্রম সরকারিভাবে চালু আছে। কিন্তু বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী বিবাহিত নারীদের অর্ধেকই এর নাম শোনেননি। অন্যদিকে ২০১৪ সালে যেসব সরকারি ও প্রাইভেট ক্লিনিক এমআর সুবিধা প্রদান করতে পারত তাদের ১০টির মধ্যে ৩টি সেবা কেন্দ্রের এ সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি ছিল না, ছিল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর অভাব। পল্লী এলাকায় অবস্থিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রসমূহে ২০১৪ সালে মোট সেবার মাত্র অর্ধেক সেবা দেওয়া হয়। অর্থাৎ এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে এমআর সেবা দ্রুতগতিতে হ্রাস পেয়েছে। অথচ ২০১০ সালে যেখানে এসব কেন্দ্রে এমআরের সংখ্যা ছিল তিন লাখ দুই হাজার, তিন বছর পরে তা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩৮ হাজারে। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গর্ভপাত সম্পাদনের হার কমে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো সেবা প্রদানকারীদের অবসরে যাওয়া এবং তাদের শূন্যস্থান পূরণে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের এখন পর্যন্ত প্রশিক্ষণের সুযোগ না দেওয়া। অন্যদিকে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে সেবা গ্রহণকারীদের জন্ম নিরোধক পদ্ধতির ওপর পরামর্শ প্রদান করা হলেও খুব কম সংখ্যক সেবা কেন্দ্রে পদ্ধতি সরবরাহ করা হয়। বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মাত্র ৭ শতাংশ জন্মনিরোধক পদ্ধতি সরবরাহ করা হয়।

সর্বশেষ খবর