রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ঢাকায় আজ দ্বিপক্ষীয় পার্টনারশিপ ডায়ালগ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কী কথা?

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দুই দিনব্যাপী ষষ্ঠ ‘পার্টনারশিপ ডায়ালগ’ আজ ঢাকায় শুরু হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওয়াশিংটনের কড়া অবস্থান প্রত্যাশা করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে, এর ওপরের দিকেই রয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যুটি। এ ছাড়া ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট চলাচল ইস্যুটিও গুরুত্ব পাচ্ছে।

এ দুটি ইস্যুর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির প্রেক্ষাপটে সাইবার নিরাপত্তায় দ্বিপক্ষীয় সহায়তার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়তার বিষয়গুলোও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনার কথা রয়েছে। বিশেষ করে টিকফা, বিনিয়োগ পরিবেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধার ইস্যুগুলো বরাবরের মতোই আলোচনায় থাকবে। সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রস্তুতি সভার কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। পার্টনারশিপ ডায়ালগে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক আর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দেশটির রাজনৈতিক সম্পর্কিত আন্ডারসেক্রেটারি অ্যাম্বাসেডর থমাস এ শ্যানন জুনিয়রের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা রয়েছে। সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতিমূলক সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন সূত্রগুলো জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় এই সংলাপ সাধারণত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়তাসহ এ-সম্পর্কিত ইস্যুগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এশিয়া সফরের আগেই দেশটির সিনেট মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের বিল নিয়ে আলোচনা করেছে। সেখানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর অবরোধ আরোপসহ আরও কী উদ্যোগ নেওয়া যায় তা খতিয়ে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করার জন্য ওয়াশিংটনের প্রতি অনুরোধ জানাবে। আরেক ইস্যু নিউইয়র্কে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চলাচল বিষয়ে জানা গেছে, বিশ্ব এভিয়েশন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) তালিকায় বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে রয়েছে, যে কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বড় দূরত্বে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি কোনো ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পাচ্ছে না বিমানসহ অন্যান্য দেশীয় এয়ারলাইনস। ফলে বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সরাসরি ফ্লাইট চালু সম্ভব হচ্ছে না। সূত্র জানায়, শর্ত মেনে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোর উন্নয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন বোয়িং যুক্ত হয়েছে বিমানবহরে, যা নিউইয়র্কে ফ্লাইট পরিচালনায় যোগ্য। এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরবে ঢাকা, যাতে অচিরেই ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ পায় বাংলাদেশ বিমান। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে বৈষম্যের শিকার, সেটিও তুলে ধরা হবে। সূত্রগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে অন্য দেশগুলোকে যেখানে গড়ে ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়, সেখানে স্বল্পোন্নত দেশ হয়েও বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানিতে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করছে। শুল্কহারের এই বৈষম্যের কারণে ২০০০ সালে যেখানে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৪০ শতাংশ যেত যুক্তরাষ্ট্রে, ২০১৬ সালে তা কমে ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে। গত বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক পরিশোধ করেছে, যেখানে স্বল্পোন্নত অন্য দেশগুলো শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজারসুবিধা পেয়েছে। অথচ স্বল্পোন্নত দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ থাকে বাংলাদেশে। জানা গেছে, এই তথ্যগুলো তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজারসুবিধা পেতে সুর চড়াবে বাংলাদেশ।

এ ছাড়া ব্লু ইকোনমি সহায়তা, আঞ্চলিক যোগাযোগ ও কৌশলগত সহায়তা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহায়তা, বিমান চলাচল ইস্যু, কৃষি খাতে সহায়তা, এ খাতের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও প্রশিক্ষণ দেওয়া, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে দ্বিপক্ষীয় সহায়তা এবং এ খাতে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহায়তা বাড়ানোর জন্য সমঝোতা স্মারক সই, দুই দেশের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ধারণাজ্ঞান বিনিময়, নারীর ক্ষমতায়ন, তথ্য ও প্রযুক্তি সহায়তাসহ বেশ কিছু ইস্যু আলোচনার টেবিলে থাকবে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর