সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বর্ণাঢ্য উদ্বোধন সম্মেলনের

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সিপিএ’র রেজুলেশন নেওয়ার চিন্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সিপিএ’র  রেজুলেশন নেওয়ার চিন্তা

রাজধানীতে গতকাল সিপিএ সম্মেলনের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন হয় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রোহিঙ্গা ইস্যুতে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ) রেজুলেশন নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। সিপিএ’র সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি রেজুলেশন গ্রহণ করা হতে পারে নির্বাহী কমিটিতে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করে সিপিএ চেয়ারপারসন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সিদ্ধান্ত নেবেন। গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে রেজুলেশন নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ নিয়ে সদস্যদেশগুলোর ব্যাপক আগ্রহও দেখা গেছে।

এ বছর ১৪৪টি দেশের জাতীয় এবং ৪৪টি দেশের আঞ্চলিক পার্লামেন্টের ৫৫০ জনের বেশি প্রতিনিধি ঢাকায় এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। মোট ৫২টি দেশ সিপিএ সদস্য। এ ছাড়া ইংল্যান্ড ও মালয়েশিয়া সিপিএ ডেলিগেটদের কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের উদ্যোগ নেওয়ারও প্রস্তাব করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের থার্ড কমিটিতে এ বিষয়ে পেশ করা বাংলাদেশের প্রস্তাবের প্রতি সিপিএভুক্ত দেশগুলোর সরকারকে সমর্থন দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়া সেন্টারে এসব বিষয়ে কথা বলেন সিপিএ মিডিয়া কমিটির সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ এমপি। সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি, পঙ্কজ দেবনাথ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ক্যামেরুন, উগান্ডা, মালেসহ ১৮টি দেশ এ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। সবাই এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এ বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য সিপিএর জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে রেজুলেশন গ্রহণের প্রস্তাব করেন। আলোচনার সময় অনেকেই বিষয়টি গণহত্যা, জেনোসাইড ও ইথনিক্যাল ক্লিনজিং হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সবাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক অবস্থান ও দেশবাসীর উদারতার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। তিনি জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুটি জানার বিষয়ে সিপিএ ডেলিগেটদের আগ্রহ ছিল প্রবল। এদিকে বাংলাদেশ সংসদীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া গতকাল সিপিএর এশিয়া গ্রুপের রিজিওনাল বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন।

সিপিএ সম্মেলনের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী : সবুজ শ্যামল বাংলার প্রকৃতি আর ঐতিহ্যের আলোক ছটায় উদ্ভাসিত হয়েছে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন সিপিএর ৬৩তম সম্মেলন। দেশাত্মবোধক গান আর নৃত্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এক খণ্ড বাংলাদেশকে। বর্ণাঢ্য ও জাঁকজকমপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুগ্ধ করেছে বিদেশি অতিথিদের। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অস্থায়ী মঞ্চে গতকাল সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সংস্থাটির ভাইস প্যাট্রন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি স্মারক ডাক টিকিট অবমুক্ত করেন। এরপর সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে চলে ফটো সেশন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টা ২৬ মিনিটে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে সিপিএ নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাকে স্বাগত জানান। এরপর অতিথিরা আসন গ্রহণ করেন। শিল্পকলা একাডেমির একদল শিল্পী জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শাশ্বত একখণ্ড বাংলাদেশকে তুলে ধরা হয় আগত ছয়শ বিদেশি অতিথিদের কাছে। সেখানে ছিল বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ। এ ছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রকৃতি তুলে ধরা হয়। উদ্বোধনী মঞ্চ বানানো হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলার আদলে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে এশিয়াটিক। প্রতিষ্ঠানটি সেখানে উদ্বোধনী মঞ্চ তৈরি করা ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। অনুষ্ঠানে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাণী পাঠের পরই ‘স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ নামে একটি পরিবেশনা ছিল। এরপর সিম্পনি অব ডেমোক্রেসি নামে একটি নৃত্য পরিবেশন করা হয়। শিবলি সাদিক ও শামীম আরা নীপার নেতৃত্বে নৃত্যাঞ্চলের একদল শিল্পী এটি পরিবেশন করেন। এরপর দেখানো হয় সিপিএর কর্মকাণ্ড ও গুরুত্ব। বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও সমৃদ্ধি বিষয়ক পরিবেশনা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী বক্তব্য দিয়ে সম্মেলনের শুভ সূচনা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিপিএ নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। আরও বক্তব্য রাখেন সিপিএ মহাসচিব আকবর খান প্রমুখ।

 এ ছাড়া গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে বাংলাদেশি পণ্যের প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠান উপলক্ষে সম্মেলন কেন্দ্র জুড়ে ছিল বর্ণাঢ্য সাজের বাহার। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে অস্থায়ী প্যান্ডেলে সাজানো বাংলাদেশি পণ্যের মেলা নজর কেড়েছে বিদেশি অতিথিদের। হাতে তৈরি চামড়ার ভ্যানিটি ব্যাগ, পাটজাত বাহারি পণ্য, রাঙামাটির তাঁতের পোশাক, হ্যান্ডিক্রাফট, পুঁতিরমালা, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি, সিল্ক থেকে নকশি কাঁথা কী নেই মেলায়। বাংলাদেশি পণ্য বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) সম্মেলন স্থলের পাশেই বাংলাদেশি পণ্যের এ মেলা’। গতকাল এ মেলার উদ্বোধন করেন সিপিএ চেয়ারপারসন ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাটের তন্তু থেকে তৈরি ওড়না, হাতব্যাগ, চামড়াজাত পণ্য ঘুরে ঘুরে দেখছেন বিদেশি অতিথিরা। অতিথিদের জন্য ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়। প্যাভিলিয়নে আসা বিদেশি প্রতিনিধিদের মুদ্রা বিনিময়ের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের একটি বুথসহ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের স্টলে মুদ্রা বিনিময়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মোট ২২টি স্টল বসানো হয়েছে সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে।

এ প্রসঙ্গে সিপিএ চেয়ারপারসন ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সিপিএ সম্মেলনে যেসব ডেলিগেট অংশ নিচ্ছেন তাদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হবে। এ জন্য হয়তো তারা বাইরে কোথাও কেনাকাটা করতে যাওয়ার সুযোগ পাবেন না। আমরা তাদের জন্য এই মেলার আয়োজন করেছি। এখানে বাংলাদেশি বিভিন্ন পণ্য এক ছাতার নিচে আনার চেষ্টা করেছি, যাতে এখান থেকেই বিদেশিরা কেনাকাটা সারতে পারেন। মেলার প্রবেশ মুখেই রয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিকে তুলে ধরার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ স্টলটি দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বেশ কিছু দুর্লভ আলোকচিত্র, তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচাসহ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বইসহ অন্যান্য উপকরণ রাখা হয়েছে এই স্টলে। বঙ্গবন্ধু কর্নারে ভিডিও চিত্রে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণসহ তার জীবনীর ওপর প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। মেলায় অংশ নিয়েছে চামড়াজাত পণ্যের এক নারী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান গুজ লিমিডেট। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শিলা বোস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের কদর বিশ্বব্যাপী। আমরা ইউরোপের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে চামড়াকে নানা রঙের ফিনিশিং দিয়ে বাজারজাত করার উদ্যোগ নিয়েছি। মেশিনে তৈরি ভ্যানিটি ব্যাগের পাশাপাশি আমরা হাতে তৈরি ও নানা কারুকার্যময় ব্যাগ ক্রেতাদের সামনে এনেছি। পুরোটাই দেশীয় পণ্যে তৈরি। এসএমই ফাউন্ডেশন, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জয়িতা ফাউন্ডেশন, জয়িতা মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ মেলায় অংশ নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর