সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে মূল লড়াই, সক্রিয় মুরাদ সিদ্দিকী

মো. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল

আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে মূল লড়াই, সক্রিয় মুরাদ সিদ্দিকী

এ আসনে সব রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ইউনিয়ন, পৌরসভা ও ওয়ার্ডে সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও মতবিনিময় করে যাচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ে শুরু হয়েছে লবিং। এ আসনে বড় এই দুই দলের প্রার্থীর মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের ছোট ভাই মুরাদ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৫ আসনের জয়-পরাজয়ের নিয়ামক শক্তি হয়ে উঠতে পারেন। তবে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলে কেবল আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকবে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মো. ছানোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ও মুরাদ সিদ্দিকীর নাম আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আহসান       হাবিব, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ছাইদুল হক ছাদুর নাম শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক এমপি ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবুল কাশেম ও সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হকের নাম শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া ইনডেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি পীরজাদা শফিউল্লাহ আল মুনির আগামী স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনিও এ আসনে ভোটের রাজনীতিতে বেশ প্রভাব রাখতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, গির্জা ও মন্দিরে অনুদানসহ অসহায় মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন তিনি। এ আসন থেকে ১৯৭০ ও ১৯৭৩-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবদুল মান্নান, ১৯৭৯ সালে একই দলের আবদুর রহমান, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মীর মাজেদুর রহমান, ১৯৮৮ ও ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের আবদুল মান্নান, ২০০১ সালে বিএনপির মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান, ২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে জাতীয় পার্টির আবুল কাশেম এবং ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের ছানোয়ার হোসেন এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ আসনের পুরো কর্তৃত্ব চলে যায় আওয়ামী লীগের খান পরিবারের চার ভাইয়ের হাতে। গত নির্বাচনে ছানোয়ার হোসেনের জয়ের পেছনেও তাদের ভূমিকা ছিল। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় আমানুর রহমান খান এমপি কারাগারে এবং তার তিন ভাই টাঙ্গাইল ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর থেকে স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। জানতে চাইলে ছানোয়ার হোসেন বলেন, এ আসনের জনগণ অতীতে ঢাকায় গিয়ে এমপির সঙ্গে দেখা করতেন। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি মনোনয়ন পেলে আসনটি আবারও শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারবেন বলে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এ আসনের প্রভাবশালী প্রার্থী মুরাদ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে যোগদানের জন্য দলের উচ্চপর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে। তবে এখনো তিনি সবুজ সংকেত পাননি। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মাহমুদুল হাসান পান ৯৬ হাজার ভোট। তার নিকটতম আওয়ামী লীগের আবদুল মান্নান পেয়েছিলেন ৮২ হাজার ভোট। আর মুরাদ সিদ্দিকী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে পেয়েছিলেন ৬৮ হাজার ১৬৭ ভোট। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও মুরাদ সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৪০ হাজার ৪৫৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন। গত ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ সিদ্দিকী ৫৯ হাজার ৩৯৮ ভোট পেয়ে সামান্য ব্যবধানে হেরে যান। জানতে চাইলে মুরাদ সিদ্দিকী জানান, তিনবার নির্বাচন করে প্রতিবারই সামান্য ভোটের ব্যবধানে তিনি হেরেছেন। গত নির্বাচনে তাকে জোর করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর তিনি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নেতা। দলীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় বিএনপিতেও দ্বন্দ্ব-বিবাদ রয়েছে। যে কারণে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে দলটি। জেলা বিএনপির নতুন কমিটি থেকে চার নেতা পদত্যাগ করেছেন। প্রায় প্রতিদিনই নতুন কমিটির বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশ হচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী কতটুকু সুবিধা করতে পারবেন তা নিয়ে দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল কোন্দলের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। কিন্তু কোন্দল নেই। যিনি মনোনয়ন পাবেন, নেতা-কর্মীরা তার পক্ষেই থাকবেন। টাঙ্গাইলে জাতীয় পার্টির তেমন একটা সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। তবে আবুল কাশেম, মোজাম্মেল হক আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। আবুল কাশেম জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট হলে এ আসনটি জাতীয় পার্টি পাবে। আর তিনি এখানকার সাবেক এমপি। এ কারণে আবারও দলের মনোনয়ন চাইবেন তিনি। তবে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক সম্প্রতি টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন।  টাঙ্গাইল জেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি খন্দকার ছানোয়ার হোসেন এ আসনে প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর