সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

খুঁটিতে বেঁধে শিশু নির্যাতন

চুরির অপবাদে আরেকজনকে পিটুনি

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

খুঁটিতে বেঁধে শিশু নির্যাতন

লক্ষ্মীপুরে শিশু পিয়াসের পর এবার সুপারি পাড়াকে কেন্দ্র করে অপর এক শিশু মো. শাওনকে খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে হাত বেঁধে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শাওনকে নির্যাতনের পর চোর সম্মোধন করে ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রভাবশালীরা প্রচার করে। শনিবার উপজেলার চর ফলোয়ান গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল দুপুরে এ ঘটনায় পুলিশ ইমরান নামের একজনকে  আটক করার কথা জানালেও রহস্যজনক কারণে গণমাধ্যমের সামনে তাকে হাজির করা হয়নি। একই সঙ্গে ক্যামেরায় পুলিশের কোনো বক্তব্যও নেওয়া যায়নি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র নির্যাতনের শিকার শাওন স্থানীয় চর ফলোয়ান গ্রামের মৃত মনছুর আলীর ছেলে। জানা যায়, স্থানীয় চর ফলোয়ান গ্রামের মনছুর মিয়ার পরিবারের সঙ্গে একই এলাকার নুর মোহাম্মদের জমি-সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। সম্পর্কে নুর মোহাম্মদ নির্যাতিত শিশুটির ফুফা। শনিবার সকালে বিরোধীয় ওই সম্পত্তি থেকে সুপারি পাড়ে শিশু শাওন। এরপর নুর মোহাম্মদের কাছ থেকে বাগান ইজারা নেওয়া স্থানীয় প্রভাবশালী ইমরান শিশু শাওনকে আটক করে। একপর্যায়ে স্কুলের পাশে খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে তার হাত বেঁধে কাঁধে সুপারির ছড়া ঝুলিয়ে নির্যাতন করে তারা। খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ঘটনাস্থলে গিয়ে শাওনকে উদ্ধার করে। চর ফলোয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী বলেন, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শাওনকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত দেখে কারণ জানতে চাইলে অপর এক শিক্ষক কিছুক্ষণ পর খবর দেন, তাকে বিদ্যালয়ের পাশের একটি দোকানের সামনে বেঁধে রাখা হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে তিনি উদ্ধার করেন। এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষক। শিশু শাওনের সহপাঠী এবং এলাকাবাসীও নির্যাতনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

চুরির অপবাদে শিশু কর্মচারীকে নির্যাতন : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের রামভদ্র কদমতলা গ্রামের এক মুরগির খামারের শিশু কর্মচারী নয়ন (১২) কে ১০ হাজার টাকা চুরির অপবাদে নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই অভিযোগে খামার মালিক কবির হোসেনসহ তার সহযোগী অপর তিন জনের নামে সুন্দরগঞ্জ থানায় শিশুটির মা নুরজাহান বেওয়া বাদী হয়ে গতকাল মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আতিয়ার রহমান। তবে আসামিরা এখন পলাতক।  শিশু নয়নের মা নুরজাহান বেওয়া অভিযোগ করেন, বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারে অভাব-অনটনের কারণে ৫-৬ মাস আগে খামারে কাজ নেয় তার ছেলে। খামার থেকে ১০ হাজার টাকা চুরি হয়েছে দাবি করে শনিবার সকাল থেকে দিনভর তার ছেলেকে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে খামারের মালিক কবির হোসেন।

এরপর চুরির অপবাদে শনিবার সন্ধ্যায় খামারের পেছনে একটি গাছের সঙ্গে দুই হাত বেঁধে নয়নকে মারপিট করে। একপর্যায়ে শিশুটির ডান হাতের আঙ্গুলে পিন ঢুকিয়ে দেয় খামারের মালিক কবির ও তার লোকজন।

তিনি আরও জানান, মারপিট করার পর কবির হোসেনের উঠানে নয়নকে ফেলে রাখা হয়। পরে তিনি অসুস্থ ছেলেকে স্থানীয়দের সহায়তায় শনিবার রাতে উদ্ধার করে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ছেলের ওপর এমন অত্যাচার-নির্যাতনকারীদের শাস্তির দাবি জানান মা নুরজাহান বেওয়া।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইয়াকুব আলী মোড়ল বলেন, শিশুটির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মক জখম ও গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া নির্যাতনের ফলে শিশুটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তিনি আরও জানান তার চিকিৎসার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

গতকাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে নির্যাতিত শিশুটির চিকিৎসার খোঁজখবর নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম গোলাম কিবরিয়া।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর