সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

বগুড়ায় তৈরি কৃষি যন্ত্রাংশের সম্ভাবনা

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় তৈরি কৃষি যন্ত্রাংশের সম্ভাবনা

বগুড়ায় তৈরি কৃষি যন্ত্রাংশ বদলে দিতে পারে অর্থনীতি। নতুন করে সৃষ্টি হতে পারে কর্মসংস্থান। কিন্তু ভিনদেশি পণ্যের প্রবেশ, সঠিক তদারকি না হওয়া, সরকারি সহযোগিতা না থাকা, সহজ শর্তে ঋণ না পাওয়ার কারণে বগুড়ার শিল্পমালিকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অনীহা। অথচ বগুড়ার বিসিকে গড়া ওঠা সম্ভাবনাময় শিল্পটি সঠিক তদারক  করা হলে কয়েক হাজার কোটি টাকার লেনদেনের পাশাপাশি লক্ষাধিক বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। জানা যায়, বগুড়ায় উৎপাদিত হাজার হাজার কৃষিপণ্য ব্যবহার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষিকাজে। এ ছাড়া বাসাবাড়ি, ছোট-বড় ইন্ডাস্ট্রি ও বিভিন্ন উৎপাদনমূলক কল-কারখানায় ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রাংশও তৈরি হচ্ছে এখানে। এর মধ্যে রয়েছে শ্যালো ইঞ্জিনের সেচপাম্প, লায়নার, পিস্টন, টিউবওয়েল, পাওয়ার টিলারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, লেদ মেশিন, গাড়ির ব্রেক ড্রাম, করাতকল, ফ্লাওয়ার মিল, টেক্সটাইল মিল, অয়েল মিল, এমনকি ধান কাটা মেশিনসহ অন্যান্য মেশিনের যন্ত্রাংশ। এসব যন্ত্রাংশের ওপর দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে। বগুড়া বিসিকের কর্মকর্তারা জানান, স্বাধীনতার আগে থেকে জেলায় বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি শুরু হয়। বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় বিসিক শিল্প ও কাটনারপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় এই পার্টস তৈরি হতো। একপর্যায়ে এই কারখানাগুলোতে তৈরি কৃষিপণ্য বগুড়াসহ উত্তরের ১৬ জেলায় ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি করে। এই চাহিদার কারণে বগুড়া বিসিকে শিল্পপ্লটের চাহিদা বাড়তে থাকে। ১৯৮০ সালে বগুড়া বিসিক শিল্পনগরীতে শিল্পপ্লট শেষ হয়ে যায়। পরে এ শিল্পের বিকাশ বেড়ে যাওয়ায় শহরের ফুলবাড়ী, গোহাইল রোড, রেলওয়ে মার্কেট, শাপলা মার্কেট, কাটনারপাড়া, চারমাথা এলাকায় গড়ে ওঠে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। এসব কারখানায় তৈরি বিভিন্ন পার্টস ব্যবহূত হয়ে থাকে বাসাবাড়ি, ইন্ডাস্ট্রি ও কৃষিকাজে। দেশের কৃষি যন্ত্রাংশের মোট চাহিদার ৮০ শতাংশের জোগানদাতা বগুড়ার ফাউন্ড্রি শিল্প। এ শিল্পের সঠিক তদারক করা হলে কমপক্ষে এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বগুড়া বিসিকের ফাউন্ড্রি শিল্প মালিক মিল্টন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. আজিজুর রহমান মিল্টন জানান, আশির দশকে ব্যক্তি উদ্যোগে বগুড়াতেই প্রথম ফাউন্ড্রি শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে। জেলায় ফাউন্ড্রি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৬২টি। এর সঙ্গে আরও কিছু সহযোগী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আর ফাউন্ড্রি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ওয়ার্কশপ রয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে এক হাজারের মতো। বগুড়ায় ফাউন্ড্রি শিল্পের ৮০ ভাগ যন্ত্রাংশ তৈরি হয়। এর মধ্যে ফাউন্ড্রি শিল্পকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ওয়ার্কশপ। শহরের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা এসব ছোট-বড় কারখানায় হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হলে যেমন এর প্রসার ঘটবে, তেমনি সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান। বাংলাদেশ ফাউন্ড্রি শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আইনুল হক সোহেল জানান, গার্মেন্টসের চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে এই ফাউন্ড্রি শিল্প। একই সঙ্গে এ শিল্প বহু লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। বগুড়ার কারখানাগুলোয় তৈরি টিউবওয়েলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে ব্যবহূত কৃষি যন্ত্রাংশের ৮০ ভাগের জোগানদাতা বগুড়া। শ্যালো ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ, যানবাহনের ছোট পার্টস, কল-কারখানার প্রয়োজনীয় পার্টসসহ কৃষির সব যন্ত্রাংশ তৈরি হয় এখানে। কৃষির জন্য পাওয়ার টিলারের লোহার চাকা, শ্যালো মেশিন দিয়ে মাটির নিচ থেকে পানি তুলতে সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প, মেশিনের যন্ত্র পিস্টন, গজল পিন, লাইনার হেডপিট তৈরি হচ্ছে। তবে কিছুদিন হলো বগুড়ায় কিছু গাড়ির ব্রেক ড্রাম তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারি সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন। প্রয়োজন সহজ শর্তে ঋণ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর