মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মধ্যরাতে মেঘনা যেন লঞ্চ টার্মিনাল

রাহাত খান, বরিশাল

মধ্যরাতে মেঘনা যেন লঞ্চ টার্মিনাল

দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথ দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী প্রতিটি যাত্রীবাহী লঞ্চ গভীর রাতে মেঘনা মোহনায় ডুবোচরে ঠেকে যাচ্ছে। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা ডুবোচরে আটকে থাকতে হচ্ছে। এতে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এখনই নদীর ওই পয়েন্টে খননের ব্যবস্থা করা না গেলে আগামী শীতে (মাঘে) ওই পথ দিয়ে নৌযানগুলোর চলার মতো অবস্থা থাকবে না বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। যদিও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে বিআইডব্লিউটিএ। বরিশাল-ঢাকা রুটের যাত্রীবাহী অত্যাধুনিক লঞ্চ এমভি সুন্দরবন-১১-এর ইনচার্জ মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর ধরেই মিয়ারচর থেকে মেঘনা মোহনায় প্রবেশমুখে ঢাকামুখী লঞ্চগুলো ডুবোচরে ঠেকে যাচ্ছে। ইদানীং ওই পয়েন্টে নাব্যসংকট প্রকট হয়েছে। সিরাজ বলেন, সুন্দরবন-১১ লঞ্চ চলতে নদীতে কমপক্ষে ২ মিটার পানির গভীরতা দরকার। কিন্তু ৫ নভেম্বর রাতে বরিশাল থেকে ঢাকা ফেরার সময় ওই পয়েন্টে পানির গভীরতা ছিল ১ মিটারেরও কম। এ কারণে বরিশাল থেকে ঢাকাগামী লঞ্চগুলো রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে ওই পয়েন্টে গিয়ে ডুবোচরে ঠেকে যাচ্ছে। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা এভাবে থাকার পর রাত দেড়টার দিকে জোয়ার আসতে শুরু করে। নদীর পানি বাড়ার পর রাত ২টা থেকে আড়াইটার দিকে লঞ্চগুলো ডুবোচরমুক্ত হয়ে গন্তব্যে যেতে থাকে।

বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি পারাবত-৮ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. বাচ্চু খান বলেন, শুধু বরিশাল রুট নয়, ভোলা-ঢাকা, ঝালকাঠি-ঢাকা, পটুয়াখালী-ঢাকা, আমতলী-ঢাকা, হুলারহাট-ঢাকাসহ দক্ষিণের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ঢাকাগামী সব লঞ্চই গভীর রাতে মিয়ারচর থেকে মেঘনা মোহনায় যেতে ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে। ২৫-৩০টি লঞ্চ একই সময় ডুবোচরে আটকে থাকে। তখন মনে হয় ডুবোচর এলাকা যেন লঞ্চঘাট। একই রুটের এমভি সুন্দরবন-১০ লঞ্চের কর্মকর্তা হারুনর রশিদ জানান, মেঘনা মোহনায় সাদা চোখে দেখলে মনে হবে বিশাল নদী। কিন্তু ডুবোচর পড়ে নদীতে ভয়াবহ নাব্যসংকটের সৃষ্টি করেছে। একাধিক লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টাররা জানান, নদীর যেখানেই ড্রেজিং হয় সেই পলিমাটি ফেলা হয় নদীতে। এ কারণে ড্রেজিংয়ের কিছুদিন পরই আবারও ওই স্থানগুলো ভরাট হয়ে যায়। নদীর তলদেশের পলি কেটে তীরে ফেলা হলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তারা। মেসার্স সালমা শিপিংলাইনসের স্বত্বাধিকারী মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস জানান, নাব্যসংকটের কারণে নৌপথের বিভিন্ন স্থান দিয়ে নৌযান চালাতে প্রতিনিয়ত সমস্যা হচ্ছে। ইদানীং মেঘনা মোহনার মিয়ারচর পয়েন্টে নাব্যসংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সরকার ও লঞ্চ মালিক সমিতিকে প্রতিনিয়ত এ সমস্যা অবহিত করা হলেও তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আলহাজ মো. সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, আগে নদীর কোথাও ড্রেজিং হলে লঞ্চ মালিক কিংবা মাস্টারদের মতামত নেওয়া হতো। এতে কোথায় কোথায় নাব্যসংকট প্রকট তা জানা যেত এবং সেখানে ড্রেজিং করা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কোথাও ড্রেজিং হলে লঞ্চ মালিক কিংবা মাস্টারদের কোনো মতামত নেওয়া হয় না। বিআইডব্লিউটিএ তাদের ইচ্ছামতো ড্রেজিং করে আবার ড্রেজিং করা পলিও নদীতে ফেলে। এ কারণে ড্রেজিংয়ের সুফল পাওয়া যায় না। বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, মিয়ারচর থেকে মেঘনা মোহনা বরিশাল জেলা সীমানায় হলেও ওই পয়েন্ট চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএর আওতাধীন। এ বিষয়টি চাঁদপুর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তারা বলেছেন, সেখানে দুটি ড্রেজার কাজ করছে। কিন্তু জোয়ারের সময় তীব্র স্রোত থাকায় ড্রেজিং করা যাচ্ছে না। ভাটার সময় ড্রেজিং করতে হচ্ছে। এ ছাড়া আপদের সময়ের জন্য দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী লঞ্চগুলোকে তিনি বিকল্প কালীগঞ্জ চ্যানেল ঘুরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে গতকাল থেকেই বিআইডব্লিউটিএর একজন অভিজ্ঞ পাইলট লঞ্চগুলোর পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করছেন বলে জানান রফিকুল ইসলাম।

সর্বশেষ খবর