রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রংপুর সিটিতে প্রার্থী কারা

২১ ডিসেম্বর নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুর সিটিতে প্রার্থী কারা

আগামী ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনের ভোট। সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগে মাঠে নেমে পড়েছেন। তবে এবারও আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির পুরনো তিন প্রার্থীই ভোটযুদ্ধে থাকছেন। যদিও আওয়ামী লীগ-জাপার বিদ্রোহী প্রার্থীদেরও মাঠে দেখা যাচ্ছে। গতকাল রাতে গণভবনে মনোনয়ন বোর্ডের সভায় বর্তমান মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।  বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিএনপি থেকে মহানগর সহসভাপতি কাউসার জামান বাবলা অনেকটাই চূড়ান্ত। তবে শিগগিরই প্রার্থী ঘোষণা দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি থেকে  মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এরই মধ্যে লাঙল প্রতীকে তার নাম ঘোষণা করেছেন জাপা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ। গত সিটি নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মোস্তফা। রংপুর সিটির প্রথম নির্বাচনে নগরপিতা হন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। মেয়র পদে তিনি ভোট পেয়েছিলেন ১ লাখ ৬ হাজার ২৫৫টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জাতীয় পার্টির নেতা মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট। জাতীয় পার্টির আরেক নেতা এ কে এম আবদুর রউফ মানিক পেয়েছিলেন ৩৭ হাজার ২০৮ ভোট। আর মেয়র পদের বিএনপি নেতা কাউসার জামান ভোট পেয়েছিলেন ২১ হাজার ২৩৫টি। যদিও তিনি কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেছিলেন।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, রংপুর সিটি করপোরেশনে বর্তমান ভোটার  সংখ্যা ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৬ এবং নারী ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন। প্রথম নির্বাচনে ভোটার ছিল ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন। সে অনুযায়ী এবার ভোটার বেড়েছে ৩৬ হাজার ২৫২ জন।

চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে আওয়ামী লীগ : রংপুর সিটিতে জাতীয় পার্টির সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলেই ভাবছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এমনকি এ সিটিতে আওয়ামী লীগ একটু ভুল করলে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন। তবে সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর মতে, গতবারের চেয়ে রংপুর সিটিতে আওয়ামী লীগের অবস্থান অনেক শক্তিশালী। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিলে গত নির্বাচনের  চেয়ে দ্বিগুণ  ভোট  পেয়ে বিজয়ী হব। এক সময় রংপুরকে জাতীয় পার্টির দুর্গ বলে ভাবা হলেও এখন আর  সেই অবস্থা নেই।  এদিকে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, এমপিরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না। তবে সরকারি সুবিধা ভোগ করেন না এমন নেতারা যাবেন রংপুরে। তবে সিটির বাইরে থেকেই পর্যবেক্ষণ করবেন হেভিওয়েট নেতারা। রংপুর সিটি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য গতকাল মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঢাকায় দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক হয়েছে। রংপুরে আওয়ামী লীগের দায়িত্বে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তৃণমূল আওয়ামী লীগ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ। নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধতা ও সরকারের উন্নয়নের মহাকর্মযজ্ঞ আমাদের প্রধান শক্তি। নৌকার বিপক্ষে গেলেই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

জয় চায় জাপা : জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জয় ছিনিয়ে আনতে তৎপর রয়েছেন পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার আগেই ৫ নভেম্বর রাতে রাজধানীর বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠকের পর মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নেতাদের মধ্যে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে।  জানতে চাইলে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, নির্বাচন কমিশন রংপুর সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রংপুর জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। তারা দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে আগামী নির্বাচনে রংপুরে দলীয় প্রার্থীকে সিটি মেয়র করতে বদ্ধপরিকর। এ ব্যাপারে জাপা একটি নির্বাচনী মনিটরিং কমিটি গঠন করছে। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এখন প্রধান টার্গেট রংপুর সিটি নির্বাচন। আমরা দলীয়ভাবে রংপুর সিটি নির্বাচনে মোস্তাফিজার রহমানকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছি। জানা গেছে, প্রথম নির্দলীয় নির্বাচনে মোস্তাফিজার রহমান  মোস্তফা পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট। জাতীয় পার্টির আরেক  নেতা এ  কে এম আবদুর রউফ মানিক পেয়েছিলেন ৩৭ হাজার ২০৮ ভোট। এবারেই প্রথম দলীয় প্রতীকের ভোটকে কেন্দ্র করে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে নানা ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছে।

রংপুরে অবস্থান জানান দিতে চায় বিএনপি : আসন্ন রংপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। একই সঙ্গে ২০ দলীয় জোটকেও কাজে লাগাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিএনপি মনে করে, এ সিটি নির্বাচনের জয়-পরাজয়ের প্রভাব পড়বে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে। তাই ধানের শীষের পক্ষে জোয়ার আনতে খোদ দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া নিজেই মাঠে নামবেন। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সর্বস্তরের মানুষের ভোট চাইবেন। চাঙ্গা করবেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের। পর্যায়ক্রমে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও নির্বাচনী গণসংযোগে অংশ নেবেন। দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরামে প্রাথমিকভাবে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির ওপর।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। অতীতে সব সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে। আসন্ন ছয় সিটিতেও বিএনপি অংশ নেবে। তবে নিকট অতীতে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই সরকার ভোট ডাকাতি করেছে। নির্বাচন কমিশনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারেনি। নতুন ইসিও যদি একই পথে হাঁটে তবে ওই নির্বাচনে থাকা না থাকা সমান কথা।’ রংপুর সিটি নির্বাচনে বিগত সময়ে প্রার্থী হয়েছিলেন মহানগর সহসভাপতি কাউসার জামান বাবলা। এবারও তিনি আলোচনার শীর্ষে। তবে রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেনও দলীয় প্রার্থী হতে পারেন। অন্যদিকে রংপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইচ আহমেদকেও পছন্দ নেতা-কর্মীদের একটি অংশের।

সর্বশেষ খবর