রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পর্দা নামল সুরের মূর্ছনায়

ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত

মোস্তফা মতিহার

পর্দা নামল সুরের মূর্ছনায়

হৃদয়ের গহিনে লোকসংগীত যে ধরনের অনুভূতির পরস্ফুরণ ঘটায় তা কেবল সংগীত পাগলরাই ভালো জানে। সুরের উচ্ছ্বাস ও তাল-লয়ের অনবদ্য শৈল্পিকতা হৃদয়ের গহিনে কী ধরনের অনুরণন ঘটায় তা কেবল সুরপিয়াসীরাই বোঝেন। নন্দনতত্ত্বের এই একটি মাধ্যমের দ্বারাই সারা বিশ্বের সব ভাষাভাষীর হূদয় ছুঁয়ে যাওয়া যায়। ভাষা যতই অপরিচিত হোক কিন্তু মেলোডি আর সুরের উত্তাপ সুরের কাঙ্গালদের মনমন্দিরে ভালোলাগা আর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবেই। মুহুর্মুহু করতালি, উচ্ছ্বাস, নাচের উদ্দামতা আর ওয়ান ওয়ান মোর ধ্বনিতে আফ্রিকার মালির গানের দল তিনারিওয়েন ও দলটির প্রধান ভোকাল ইবরাহিম আগ আল হাবিবকে প্রায় অর্ধ লাখ শ্রোতার অভিনন্দনের মধ্য দিয়ে সেটিই প্রমাণিত হয়েছে লোকসংগীত উৎসবের শেষ রাতে। মালির এই গানের দলের অনবদ্য পরিবেশনার মধ্য দিয়েই গতকাল আর্মি স্টেডিয়ামে শেষ হয় ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব ২০১৭’। শেষ রাতের পরিবেশনায় মালির সংগীতে ভিজেছেন এ দেশের সুরপিয়াসীরা। শেষ রাত বলে শ্রোতাদের প্রত্যাশাটাও ছিল একটু বেশি। ওস্তাদের মাইর শেষ রাতে হয় নিজেদের শৈল্পিকতায় প্রচলিত এই ধারণাটির প্রমাণ দিয়েছেন মালির গানের দল তিনারিওয়েন ও এর প্রধান ভোকাল ইবরাহিম আগ আল হাবিব।

বাউল সাধক শাহ আলম সরকার এবং পালাগানের শিল্পী আলেয়া বেগমের পালাগানের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত সময় সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয় শেষ রাতের সুরের আসর। পালাগানের এই লড়াইয়ে শাহ আলম সরকার শরিয়তের ভূমিকায় আর আলেয়া বেগম ছিলেন মারফতের ভূমিকায়। দুজনই গানে গানে প্রশ্নোত্তর কখনো বা প্রশ্ন পাল্টা প্রশ্নের মাধ্যমে পালা উপহার দেন। শাহ আলম সরকার গেয়ে শোনান ‘আকাশটা কাঁপছিল কেন’, ‘মায়ের কান্দন যাবজ্জীবন’, ‘বান্ধিলাম পিরিতের ঘর’, ‘খড় কুটার এক বাসা বাঁধলাম’সহ বেশকিছু গান। এর জবাবে মারফতের ভূমিকায় থাকা আলেয়া বেগম পরিবেশন করেন ‘মানুষও রতন কর তারে যতন’। এভাবে একটার পর একটা গানের মধ্য দিয়ে শরিয়ত ও মারফতে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন পালাগানের এই দুই শিল্পী। প্রায় ৪৫ মিনিটের এই পরিবেশনা লোকসংগীতের অনুরাগীদের মুগ্ধ করে রাখে। এরপর মঞ্চে আসেন দেশের লোকগানের অন্যতম জনপ্রিয় গায়িকা শাহনাজ বেলী। লালনের দেহতত্ত্বনির্ভর গান ‘স্বভাব না হলে চাতক’ দিয়ে শুরু করে একে একে তিনি পরিবেশন করেন শাহ আবদুল করিমের ‘আইলা না আইলারে বন্ধু’, ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইছে’, ‘তুমি যাইও না যাইও কান্দাইয়া’ এবং সবশেষে হাসন রাজার গানের মধ্য দিয়ে মঞ্চ থেকে নামেন এই শিল্পী। এরপর সুইডিশ গিটার প্লেয়ার কাম গায়ক মিকাল হেমনিটি উইনথার গিটারের ধুন আর অসাধারণ গায়কীতে মুগ্ধতা ছড়ান সমগ্র স্টেডিয়ামে। এই পরিবেশনা শেষে মঞ্চে আসেন ভারতের বাসুদেব দাস বাউল। ‘তোমার হৃদমাজারে রাখব’ দিয়ে শুরু করে সোঁদা মাটির গন্ধমিশ্রিত সুরের উষ্ণতায় স্টেডিয়ামভর্তি দর্শক-শ্রোতার হৃদয়ে নিজের ঠাঁই করে নেন ভারতের এই বাউল। শেষ রাতের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ইরানের গানের দল ‘রাস্তিক’। ফারসি সংগীতের সঙ্গে গিটার, বেজ গিটার, বাঁশি ও ঢোলের অপূর্ব সমন্বয়ে লোকসংগীতের ফিউশনে সংগীতের অনুরাগীদের হারিয়ে নিয়ে যান সংগীতের দ্যোতনায়। এবারের আসরে বাংলাদেশসহ ৮টি দেশের ১৪০ জন শিল্পী অংশ নিয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর