রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সন্ধান মেলেনি সিজারের অপেক্ষায় পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজারের সন্ধান মেলেনি। তার ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ সন্তানের শোকে এরই মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তার মা উম্মে কুলসুম। প্রায় একই অবস্থা বাবা সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোতাহার হোসেনেরও। বিতর্কিত সাইট ‘বিডি পলিটিকো’-এর ডোমেইন মুবাশ্বার হাসান সিজারের নামে নেওয়া বলে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। এই সাইট থেকেই বিভিন্ন সময় সরকারবিরোধী উসকানিমূলক খবর আপলোড করা হয়েছিল। তারা বলছেন, দুই বছর আগে সিজারের নামে বিডি পলিটিকোর ডোমেইন নেওয়া হয়। এ ছাড়া সিজার ও প্রকাশক তানভীর করিমের এখনো কোনো সন্ধান না মিললেও সম্প্রতি নিখোঁজ হওয়ার পর অনেকেই ফিরে এসেছেন বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে এটুআই প্রকল্পে কাজ করা অবস্থায় সিজার কীভাবে বিডি পলিটিকো নামের ওই বিতর্কিত সাইটটি চালাতেন তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। ওই সাইটে গত ছয় মাসে প্রচুর সরকারবিরোধী অথচ অসত্য খবর আপলোড করা হয়েছিল। উল্লেখযোগ্য নিউজগুলোর মধ্যে যেমন সম্প্রতি মহাখালীর একটি বাসায় সেনাবাহিনীর জেনারেলদের বৈঠক, যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিখোঁজ, প্রধান বিচারপতিকে হত্যার চেষ্টার মতো ভুয়া খবর তুলে ধরা হয়েছে। বিডি পলিটিকো নামের ওই সাইটে সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে বিভিন্ন সময় অসত্য খবর আপলোড করা হয়েছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতই সিজার নিজে ওই সাইটটি নিয়েছিলেন কিনা তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা উচিত। আবার বিভিন্ন জার্নালে তার লেখায় সরকার কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী কোনো তথ্য থাকলে এর উৎসস্থল কিংবা কারা এর সরবরাহকারী তাও খতিয়ে দেখা উচিত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলাম কতটুকু প্রভাব রাখছে এ বিষয়ে পিএইচডি করেছেন সিজার। সন্ত্রাসবাদ নিয়েও তার ব্যাপক আগ্রহ ছিল। বিভিন্ন জার্নালে তার লেখায় এর ছাপ ছিল। তবে কিছুদিন ধরে ফেসবুকে নানা ধরনের আপত্তিকর বার্তা পাচ্ছিলেন। নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য দক্ষিণ বনশ্রীর ২৫ নম্বর সড়কের ১২/৩ নম্বর বাড়ির চারদিকে তিনি একাধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছিলেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। তবে বলার মতো এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি। সিজারের বোন তামান্না তাসনিম জানান, ‘আমার ভাইয়ের সঙ্গে কোনো দল বা সংগঠনের সম্পৃক্ততা নেই। তার কোনো শত্রু ছিল বলে আমাদের জানা নেই।’ খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, মুবাশ্বার হাসান সিজারের সন্ধানে তারা কাজ করছেন। কী কারণে বা কারা তাকে তুলে নিয়ে যেতে পারে, সবদিক বিশ্লেষণ করেই তদন্ত করা হচ্ছে। শিক্ষক সিজারের ব্যক্তিগত জীবনের বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার পরিবারের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা নিয়মিত হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার সকালে দক্ষিণ বনশ্রীর বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান সিজার। সেখান থেকে বিকালে আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের একটি মিটিং শেষে বের হওয়ার পরপরই নিখোঁজ হন তিনি। ওই ঘটনায় রাজধানীর খিলগাঁও থানায় একটি জিডি (নম্বর ৪৭১) করেন তার বাবা মোতাহার হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতক সিজার একসময় সাংবাদিকতাও করেছেন। পরে তিনি যুক্তরাজ্যে মাস্টার্স ও অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করেন। সম্প্রতি সমাজে জঙ্গিবাদের বিস্তার নিয়ে গবেষণা করছিলেন বলে জানা গেছে। ফিরেছেন অনেকেই : ৭ নভেম্বর সকালে দক্ষিণ বনশ্রীর ২/১ নম্বর রোডের এ/৩ নম্বর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সানোফি-এভেনটিসের ফার্মাসিস্ট জামাল রহমান। এ ঘটনায় ৮ নভেম্বর দুপুরে তার বাবা সিদ্দিকুর রহমান খিলগাঁও থানায় জিডি করেন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জামাল বাসায় ফেরেন।

এ ব্যাপারে খিলগাঁও থানার ওসি মশিউর রহমান জানান, জামাল অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু কোন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।

৫ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন উত্তর শাহজাহানপুরের ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন। সারা দিন পর রাতে শাহজাহানপুর থানায় একটি জিডি করা হয়। ৮ নভেম্বর রাতে গিয়াসের বাবা আবদুল মজিদ সরকার হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। পরদিন ৯ নভেম্বর সকালে গিয়াস উদ্দিন বাসায় ফিরে আসেন। এ ব্যাপারে শাহজাহানপুর থানার এসআই সঞ্জয় কুমার বলেন, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন ফিরে এসেছেন। তবে তিনি কোথায় ছিলেন সে বিষয়ে পুলিশকে কিছুই বলেননি।

৮ নভেম্বর ভোরে গুলশান-২-এর ৫১ নম্বর রোডের একটি বাড়ি থেকে করিম ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি পুস্তক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তানভীর ইয়াসিন করিমকে মাইক্রোবাসে করে উঠিয়ে নেয় সাদা পোশাকের পুলিশ। ওই দিন সন্ধ্যায় করিমের আত্মীয় হুমায়ুন বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি জিডি করেন।

করিম ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের প্রতিষ্ঠানটি তেজগাঁওয়ের মনিপুরী পাড়ায়। প্রতিষ্ঠান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের বই আমদানি করা হয়। এ ছাড়া তাদের অন্য প্রতিষ্ঠান দারুল ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে পবিত্র কোরআন ও হাদিস আমদানি করা হয়। গতকাল পর্যন্ত করিমের খোঁজ মেলেনি। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুবকর সিদ্দিক বলেন, তানভীরের সন্ধানে একাধিক টিম কাজ করছে। তবে এখনো সন্ধান মেলেনি।

সর্বশেষ খবর