রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন

মেলেনি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত

নিজামুল হক বিপুল, বন (জার্মানি) থেকে

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-২৩) ষষ্ঠ দিনেও চলছে বিভিন্ন ইস্যুতে দরকষাকষি। বিশেষ করে প্যারিস চুক্তি  বাস্তবায়নের রোল বুক তৈরিসহ পাঁচটি ইস্যুতে এখন পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো। সিদ্ধান্তগুলোকে কীভাবে দীর্ঘ মেয়াদে ঝুলিয়ে রাখা যায় সেজন্য তৎপর উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। আর এ দুই পক্ষের দেনদরবারের মাঝে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর অবস্থা রীতিমতো অসহায়। সম্মেলনের ষষ্ঠ দিনে গতকাল দিনভর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের রোল বুক বা বিধিমালা তৈরি, এনডিসির (ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন) উপাদান, তথ্য ও পরিমিতি, অভিযোজন, ২০২৩ সালে একটি বৈশ্বিক স্টকটেকিং, কমপ্লায়েন্স মেকানিজম ও ট্রান্সপারেন্সি ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় স্থান পেয়েছে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমিয়ে আনার বিষয়টি। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে উন্নয়নশীল ও উন্নত বিশ্বকে এমিশন কমিয়ে আনতে হবে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে এই এমিশন কমিয়ে আনা নিয়েই। চীনসহ ১৩৪টি দেশের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা জি-৭৭ ভুক্ত দেশগুলোই এসব ইস্যুতে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থা নিয়েছে। জি-৭৭-এর মধ্যে লিস্ট ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রি (এলডিসি) রয়েছে বাংলাদেশসহ ৪৭টি। যারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আবার এই জি-৭৭-এর মধ্যে রয়েছে চীন, আমেরিকা, সৌদি আরব, মিসরসহ ১০-১২টি দেশ। যাদের সমন্বয়ে লাইট ডেভেলপিং কান্ট্রি বা এলএমডিসি নামে গড়ে উঠেছে আরেকটি গ্রুপ। আর উন্নত ৩৮টি দেশের সমন্বয়ে রয়েছে আরেকটি গ্রুপ। এ ছাড়া স্মল আইল্যান্ড ডেভেলপিং স্টেট নামে রয়েছে অন্য একটি গ্রুপ। সম্মেলনসূত্রে জানা গেছে, এলডিসি ও উন্নত দেশগুলোর মধ্যে এখন গ্যাস নির্গমন কমিয়ে আনা নিয়ে চরম দরকষাকষি চলছে। উন্নত ৩৮টি দেশ বলছে, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। অন্যদিকে এলএমডিসিভুক্ত দেশগুলো যারা এখন এমিনেশনের ক্ষেত্রে শীর্ষে তাদের বক্তব্য হচ্ছে, উন্নত ৩৮টি দেশ ২০০ বছর আগে থেকেই নিঃসরণ করে আসছে। এখন আগে তাদেরই এটা কমাতে হবে। শক্তিশালী এই দুই গ্রুপের মাঝে পড়ে জি-৭৭ভুক্ত অন্য রাষ্ট্রগুলোর অবস্থা এখন খুবই করুণ। শুধু কার্বন নিঃসরণ কমানোই নয়, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে পাঁচটি বিষয়কে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার বা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সেখানে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো বাগড়া দিচ্ছে। এলএমডিসিভুক্ত উন্নয়নশীল দেশগুলো চাচ্ছে এসব বিষয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে। ফলে গত ছয় দিনের আলোচনায় আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। তবে এসব বিষয় নিয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আলোচনা অব্যাহত আছে। এদিকে অভিযোজন তহবিল নিয়ে এবারই একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চায় বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলো। এজন্য তারা জোর দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার করে যে তহবিল গঠন করার কথা সেটিকে এখন থেকেই ত্বরান্বিত করতে হবে। আর ২০২৫ সাল থেকে নিউ গ্লোবাল ফান্ডিংয়ের জন্য টার্গেট করতে হবে। কিন্তু এই আলোচনায় খুব একটা অগ্রগতি নেই। অন্যদিকে এনডিসি নিয়ে সবাই যখন বলছে, ২০৩০ সালের পর থেকে এনডিসি হতে হবে পাঁচ বছর মেয়াদি; তখন এলএমডিসিভুক্ত দেশগুলোর জোট বলছে, এটি হবে ১০ বছর মেয়াদি; যা বর্তমানে বিদ্যমান আছে। এদিকে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে যোগ দিয়েছেন সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী এবং বর্তমানে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ। তিনি গতকাল আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। আর পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর আজ বন আসার কথা। তবে আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় সম্মেলনের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তাই কাল শুরু হওয়া জলবায়ু সম্মেলনের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী। এদিকে বাংলাদেশ তিনটি বডিতে সদস্য হিসেবে রি-ইলেকটেড হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে অভিযোজন ফান্ড বোর্ড। যেখানে ২২টি সদস্য দেশ রয়েছে। অন্যটি এক্সিকিউটিভ কমিটি অব লস অ্যান্ড ড্যামেজ। এই বডিতে রয়েছে ২০টি সদস্য দেশ। আরেকটি হচ্ছে কনসালটেটিভ গ্রুপ। এখানেও ২০টি দেশ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর