সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নরসিংদীতে পলো উৎসব

সঞ্জিত সাহা, নরসিংদী

নরসিংদীতে পলো উৎসব

দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার সেই প্রাচীন ঐতিহ্য। কালের পরিক্রমায় শুকিয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে খাল-বিল আর নালা। আগের মতো আষাঢ়-শ্রাবণে নৌকায় পাল তুলে মাঝিদের গান ধরতে দেখা যায় না। শত প্রতিকূলতার মাঝেও কেউ কেউ বাঙালির গ্রামীণ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে লালন করার চেষ্টা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় নরসিংদীর মেঘনা নদীতে পালিত হলো ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নানা বয়সের কয়েকশ মানুষ পলো নিয়ে অংশ নেয়। মাছ ধরে সবাই আনন্দে ভেসেছে। শত বছরের এই উৎসবকে  বাঁচিয়ে রাখতে নদী রক্ষার দাবি জানিয়েছেন আয়োজকরা। পলো বাওয়া উৎসবের বৈশিষ্ট্যই হলো দল বেঁধে পলো নিয়ে (বাঁশ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি ঝাঁপি) মাছ ধরা। আর এই উৎসবকে ঘিরে শৌখিন মাছ শিকারিরা গড়ে তুলেন পলিয়া নামে একটি মত্স্য শিকারি সমিতি। ব্যাপক প্রস্তুতি না থাকলেও সমিতির শৌখিন মাছ শিকারিরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে পলো বাওয়ার দিনক্ষণ নির্ধারণের পর সবাইকে জানিয়ে দেন। এ ঘোষণার পর আগ্রহীরা পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নেয়। পর্যায়ক্রমে একেক নদীতে বা জলাশয়ে একেক দিন এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। নরসিংদীর বদরপুর গ্রামে মেঘনার শাখা নদীতে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে সদর উপজেলা ও রায়পুরা, শিবপুর সহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিভিন্ন বয়সের কয়েকশ শৌখিন মাছ শিকারি পলো নিয়ে এই উৎসবে অংশ নেয়। সকাল ১০টায় নদীর জামতলা ঘাট থেকে মাছ শিকার শুরু হয়। দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে। উৎসবে শৈল, গজার, বোয়াল, আইড়, কালনা ও টাকিসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে। পলো বাওয়া দেখতে আশপাশের গ্রামের লোকজন ভিড় জমায় নদী ঘাটে। আয়োজকরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদী-নালা ও খাল-বিলের তলদেশ ভরাট হয়ে প্রতিনিয়ত পানি হ্রাস পাচ্ছে। এবং নদী দূষণসহ নানামুখী তৎপরতার কারণে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রগুলোর বেশির ভাগই বিনষ্ট হয়ে গেছে। নদী বেঁচে থাকলে বেঁচে থাকবে ঐতিহ্যবাহী এই পলো উৎসব। তাই পলো বাওয়া উৎসব থেকেই নদী রক্ষার দাবি জানানো হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর