দুই বছরেও উদঘাটিত হলো না বাংলাদেশি মাহফুজা রহমানের নিখোঁজ-রহস্য। স্ত্রী নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পর মাহফুজার স্বামী মোহাম্মদ চৌধুরী (৩৯) সেই যে গেলেন বাংলাদেশে আর ফিরছেন না। তার গতিবিধি রহস্যময়। খবর এনআরবি নিউজ। নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসে বেডফোর্ড পার্ক এলাকার ৯ বছর বয়সী কন্যাসন্তানের মা মাহফুজা (৩০) ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে নার্স পদে কাজের পাশাপাশি হান্টার কলেজেও লেখাপড়া করছিলেন। ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর মাহফুজা নিখোঁজ হন। ডিটেকটিভ পুলিশ তন্নতন্ন করে অনুসন্ধানের পর জানতে পায়, মাহফুজা বাংলাদেশে যাননি। কারণ, তার পাসপোর্ট, ক্রেডিট কার্ডসহ ওয়ালেট, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট বাসায় পাওয়া গেছে। অথচ মাহফুজার স্বামী পুলিশকে প্রথম দিনই জানিয়েছেন, মা-বাবা গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার সংবাদ পেয়েই তড়িঘড়ি করে মাহফুজা বাংলাদেশে গেছেন এবং একমাত্র কন্যাসন্তানকে নিয়ে তিনি নিজেও দুই দিনের মধ্যে বাংলাদেশে যাচ্ছেন। এতে তদন্ত কর্মকর্তারা কিছুটা আস্থা পেলেও নিজেরা বাংলাদেশে মাহফুজার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হন, দুর্ঘটনার কথা সত্য নয় এবং ৯ ডিসেম্বরের পর মাহফুজার সঙ্গে তাদের কোনো কথাও হয়নি। এমন তথ্য জানার পর ডিটেকটিভ পুলিশ মাহফুজার বাসায় তল্লাশি চালায়। কংক্রিকেটর আঙিনা এবং মেঝে খুঁড়েও সন্ধান করা হয় মাহফুজার দেহ। কিছুই পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত মাহফুজার লাশ কিংবা দেহের খণ্ডিত অংশও খুঁজে না পাওয়ায় পুলিশ হত্যা-মামলাও রুজু করতে পারেনি। অন্যদিকে, বিষয়টি তামাদি ঘোষণাও করতে পারছে না। কারণ, মাহফুজা নিখোঁজ হওয়ার পরদিন অর্থাৎ ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর সকাল ৮টা ৯ মিনিটে তার স্বামী নিজের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে নিকটস্থ একটি স্টোর থেকে ধারালো ১৬ ইঞ্চি কুড়াল কিনেছেন। একই সঙ্গে কিনেছেন বস্তাবন্দী করার কাজে ব্যবহার্য টেপ।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টায় মাহফুজা তার কর্মস্থল বেলভ্যু হাসপাতাল থেকে বের হন। তিন মাস পরও তিনি কাজে না ফেরায় কর্তৃপক্ষ দুশ্চিন্তায় পড়ে পুলিশকে বিষয়টি জানায়। সর্বশেষ ২১ নভেম্বর নিউইয়র্ক পুলিশের ডিটেকটিভ কর্মকর্তা জানান, ‘তদন্ত অব্যাহত রয়েছে’। মাহফুজার ব্যাপারে কেউ যদি কিছু জানেন তা তদন্ত কর্মকর্তাকে জানানোর আহ্বানও জানানো হয়েছে। মাহফুজা রহমানের সন্ধান না পাওয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে।
জলজ্যান্ত একজন মানুষ এভাবে হাওয়া হয়ে যাবে-তা কেউই ভাবতে পারেন না। অনেকে ভেবেছিলেন, মাহফুজা হয়তো তার গোপন প্রেমিকের হাত ধরে অন্যত্র গাঢাকা দিয়েছেন। কিন্তু এটি এখন আর ধোপে টিকছে না। কারণ, তার পাসপোর্ট, আইডি, ক্রেডিট কার্ড সবকিছুই বাসায় পাওয়া গেছে। নতুন করে কিছু করাও সম্ভব নয়। আশপাশের কোনো দেশে বিনা পাসপোর্টে গেলেও কোনো না কোনোভাবে তার হদিস পাওয়ার কথা। বিশেষ করে ৯ বছর বয়সী একমাত্র সন্তানের জন্য একবার হলেও তার যোগাযোগের চেষ্টা করার কথা। অথবা দেশে মা-বাবাকেও নিজের অবস্থান জানানোর কথা। প্রবাসীরা অনেকে বলছেন, পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আত্মগোপনে যাওয়া মাহফুজার স্বামী মোহাম্মদ চৌধুরীকে বাংলাদেশ থেকে ধরে আনলে নিখোঁজ-রহস্য উদঘাটন সহজ হবে।