শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ত্যাগীরা কোণঠাসা আওয়ামী লীগে বিএনপির একক প্রার্থী খোকন

সঞ্জিত সাহা, নরসিংদী

ত্যাগীরা কোণঠাসা আওয়ামী লীগে বিএনপির একক প্রার্থী খোকন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠেছে নরসিংদী জেলা শহরের রাজনৈতিক অঙ্গন। এরই মধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।  তৃণমূলে দৌড়ঝাঁপের পাশাপাশি কেন্দ্রে বেড়েছে লবিং-তদবির। প্রার্থিতা জানান দিতে সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছেন তারা। আওয়ামী লীগের জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নসহ উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে সভা-সেমিনার করছেন দলীয় নেতারা। তবে বসে নেই বিএনপিও। একসময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত নরসিংদী সদর আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া স্থানীয় বিএনপি। দলকে চাঙ্গা করতে সংগ্রহ করা হচ্ছে নতুন সদস্য। মামলা-হামলা মাথায় নিয়ে রাজপথ কাঁপাচ্ছেন নরসিংদী জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। তবে কোন্দল আর অন্তর্দহনের খোলস থেকে মুক্ত হতে পারছে না আওয়ামী লীগ। নরসিংদী-১ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় এগিয়ে রয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি লে. কর্নেল মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (অব.)। মাঠে রয়েছেন ফ্লোরিডা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. আইয়ুব খান মন্টু। এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন স্বৈরাচার পতন আন্দোলনের নেতা ডাকসুর সাবেক জিএস ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন। জাতীয় পার্টি থেকে রয়েছেন শফিকুল ইসলাম শফিক। জেলা নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী সদর আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি নির্বাচিত হন মোসলেহ উদ্দীন ভূইয়া। এরপর ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আবদুল মোমেন খান বিজয়ী হন। ’৮৬ সালে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির মেজর সামসুল হুদা (বাচ্চু)। ’৯১ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে বিএনপি থেকে সামসুদ্দীন আহমেদ এছাক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে তার মৃত্যুর পর বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত নরসিংদী সদর আসনের উপনির্বাচনে খায়রুল কবির খোকন বিজয়ী হন। ২০০৮ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে সদরের এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। ২০১৪ সালে তিনি আবার এমপি নির্বাচিত হলে তাকে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১১ সালে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পৌর মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ড ও মামলাকে ঘিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে জেলা আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম। জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি থেকে বাদ পড়েন দলটির ত্যাগী ও পোড় খাওয়া একাধিক নেতা। সৃষ্টি হয় বিভাজন। শুরু হয় অন্তঃকোন্দল। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম ও পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলের একক আধিপত্য বজায় রাখতে দলে পেশাদার খুনি, সন্ত্রাসী ও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের স্থান দেওয়া হয়েছে। বঞ্চিত করা হয়েছে দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাদের। কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টি ও বিএনপি সমর্থিতদের, যারা দলের দুর্দিনে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে কাজ করবেন। তা ছাড়া নিজেদের বলয় ধরে রাখতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সংগঠিত ও শক্তিশালী। আমরা প্রান্তিক পর্যায়েও আওয়ামী লীগের বীজ বপন করে দিয়েছি। তাই আগামী নির্বাচনে সদরসহ পাঁচটি আসনেই আমরা বিজয়ী হব।’ জেলায় নানা উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামীতে একটি মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ১০০ শয্যা হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হবে।’ বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা সভাপতি খায়রুল কবির খোকন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নরসিংদীতে বিএনপির ব্যাপক জনপ্রিয়তা। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সদরসহ জেলার পাঁচটি আসনেই বিপুল ভোটে বিএনপি প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন।’ তিনি বলেন, ‘ভোটার ও বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একতরফা সিল মেরে ক্ষমতা আঁকড়ে রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর