শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

একটা কমলে আরেকটা বাড়ে চাপে সাধারণ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

একটা কমলে আরেকটা বাড়ে চাপে সাধারণ মানুষ

বাজার দর

ফিবছর এই সময়ে পিয়াজের দাম কমতে থাকে। কারণ ‘মুড়িকাটা’ নামে আগাম জাতের পিয়াজ বাজারে উঠতে থাকে নভেম্বরের শেষ দিকে। এবার ঘটেছে উল্টো ঘটনা। এই সময়ে বাড়তে শুরু করেছে পিয়াজের দাম। এখন দেশি পিয়াজের দাম বাজারে ১০০ টাকা কেজি। আর আমদানি করা ভারতীয় পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি পিয়াজ ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর মাসখানেক আগে বিক্রি হয়েছে তার অর্ধেক দামে।

শুধু যে পিয়াজের দাম নিয়ে কষ্ট বেড়েছে তাই নয়, চাল-ডাল থেকে শুরু করে কাঁচা পণ্য পর্যন্ত সবকিছুর বাড়তি দামে চাপে আছে সাধারণ মানুষ। বছরের মাঝামাঝি হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যায় ধানের আবাদ নষ্ট হওয়ায় বেড়ে যায় চালের দাম। প্রকারভেদে প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি দিয়ে চাল কিনতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সবজির বাড়তি মূল্য স্বল্প আয়ের মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ায় এখন আবার চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষ কেনে এমন ধরনের পাইজাম, পারি ও আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। সরকারের খাদ্য মজুদ তলানিতে পৌঁছানোর পর আমদানি চালে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা হচ্ছে। এ কারণে ডলারের দামের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে চালের দাম। ভোক্তাদের ধারণা ছিল শীত আসায় সবজির দাম কমবে। হাত খরচের চাপও কিছুটা কমবে। কিন্তু সে ভাবনার বাস্তব প্রতিফলন ঘটেনি। কেবল মুলার দাম কিছুটা কমলেও এখনো শীতের অন্যান্য সবজি উচ্চমূল্যেই বিক্রি হচ্ছে। উপরন্তু নতুন করে চাল ও পিয়াজের দাম বাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। রাজধানীর রূপনগর এলাকার টেলিভিশন মেকার আলাউদ্দিন গতকাল বাজার করতে গিয়ে বলেন, ‘ভাই! নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে চাপে আছি। একবার চালের দাম বাড়ে তো আরেকবার সবজির দাম। এখন বেড়েছে পিয়াজের দাম। একটা কমলে আরেকটার বাড়ে। দামের কোনো কূলকিনারা পাচ্ছি না।’ সাধারণত সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। চালের দামের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খাটলেও সবজির ক্ষেত্রে তা খাটছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী চলতি অর্থবছরে ৩৯ লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন সবজির উৎপাদন হয়েছে। গত অর্থবছরে যা ছিল ৩৬ লাখ ৬৬ হাজার মেট্রিক টন। ফলে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন সবজি বেশি উৎপাদন হয়েছে। এর পরও কেন সবজির দাম কমছে না— এমন প্রশ্নের জবাবে সম্প্রতি পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘ঝড়বৃষ্টির কারণে সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটেছে। গ্রাম থেকে শহরে সবজি আসতে পরিবহন ভাড়া বেশি। এ ছাড়া আমাদের ব্যবসায়ীদের লাভ করার প্রবণতাও অধিক। একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে আর কমে না।’ এদিকে সবজির মতো বাজারে পিয়াজের সরবরাহে তেমন কোনো ঘাটতি না থাকলেও দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। গত আগস্টেও পিয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজি ৩৫-৪০ টাকা দরে। বিবিএসের হিসাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে পিয়াজ উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ ৬৬ হাজার মেট্রিক টন, যা আগের বছরের চেয়ে ১ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে আলোচ্য সময়ে দেশে ১০ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন পিয়াজ আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন বেশি। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে পিয়াজের জোগান এসেছে প্রায় ২৯ লাখ মেট্রিক টন। আর দেশে পিয়াজের চাহিদা বছরে ২২ থেকে ২৩ লাখ মেট্রিক টন। দেখা যাচ্ছে সরবরাহে ঘাটতি না থাকার পরও কেবল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্যটির দাম গত কয়েক মাসে বাড়িয়ে দিয়েছেন তিন গুণেরও বেশি। এখন পিয়াজের দাম বাড়ার পেছনে ভারতের রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে দেওয়াকে অজুহাত হিসেবে তুলে ধরছেন তারা। শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পাশের দেশ ভারত হঠাৎ করে পিয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করেছে। এ অবস্থায় আমাদের কিছু করার নেই। দাম বেশি দিয়েই আগামী দুই মাস পণ্যটি কিনতে হবে।’ কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবীর ভূইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, নিত্যপণ্যের দামে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যতটা না পণ্যের দাম বাড়ছে, বিভিন্ন অজুহাত তুলে তার চেয়ে বেশি বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।’ তিনি বলেন, ‘অতিমুনাফা, মজুদদারি করে বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হলেও বাজার নিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা কেউ মাথায় রাখছে না।’

সর্বশেষ খবর