শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিশ্ব এইডস দিবস আজ

সফল চিকিৎসকরা আক্রান্ত মা জন্ম দিল সুস্থ শিশু

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটের কানাইঘাটের বকুল মিয়া (ছদ্মনাম) ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যপ্রবাসী। নিজের অজান্তেই শরীরে এইচআইভি জীবাণু নিয়ে দেশে আসা-যাওয়া করতে থাকেন। ২০০৭ সালে দেশে ফেরার কিছু দিন পর অসুস্থ হয়ে পড়লে ভর্তি হন হাসপাতালে। সেখানেই ধরা পড়ে তার শরীরে বাসা বেঁধেছে মরণব্যাধি এইডস। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে বকুলের স্ত্রী জোলেখা (ছদ্মনাম) ও পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে পারুলের (ছদ্মনাম) শরীরেও মরণব্যাধি এই জীবাণু পান। এর পর থেকেই নিয়মিত চলতে থাকে তাদের চিকিৎসা। শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি বকুলকে। তবে ২০১৫ সালে এইচআইভি পজিটিভ এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় পারুলের। গত ৮ মার্চ ওসমানী হাসপাতালে একটি সুস্থ বাচ্চার জন্ম দেন পারুল। এইডসকে জয় করার এই গল্প নতুন নয়। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (সিওমেক) চিকিৎসকদের এই সফলতার কাহিনী শুরু হয়েছে আরও আগেই। সিলেট বিভাগের কোটি মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল ওসমানী হাসপাতালে ২০১৩ সাল থেকে এইচআইভি পজিটিভ মায়েদের গর্ভ থেকে সুস্থ (এইচআইভি জীবাণুমুক্ত) শিশুর জন্ম নিচ্ছে। সিওমেক হাসপাতালের এইচআইভি সেবা জোরদারকরণ কার্যক্রমের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোতাহের হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ওসমানীতে এইচআইভি পজিটিভ ৩২ জন অন্তঃসত্ত্বা মা ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে ৩০ জন এইচআইভিমুক্ত সুস্থ শিশুর জন্ম দিয়েছেন। অন্য দুজন বর্তমানে হাসপাতালে সন্তান জন্মদানের অপেক্ষায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে সর্বপ্রথম এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। তার বাড়ি ছিল সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায়। বর্তমানে সিলেট বিভাগে ৮৩৯ ব্যক্তি এইচআইভি পজিটিভ বলে শনাক্ত হয়েছেন। তার মধ্যে ৪৪৭ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন ওসমানী হাসপাতালে। ওসমানী হাসপাতালের অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টারের প্রধান কনসালট্যান্ট ডা. আবু নঈম মোহাম্মদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, গত দুই মাসে ওসমানীতে ৭২ ব্যক্তিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তার মধ্যে চারজনের শরীরে ধরা পড়েছে এইচআইভির জীবাণু। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে সিলেট বিভাগে এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিদের চিকিৎসা ছিল এনজিওনির্ভর। তবে বর্তমানে সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ওসমানী হাসপাতালে বিনামূল্যে এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত অক্টোবরে এ হাসপাতালে যাত্রা করেছে এআরটি সেন্টার।

 বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলেট বিভাগে এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তির সিংহভাগই প্রবাসফেরত। প্রবাসীরা নিজের অজান্তেই শরীরে এইচআইভি জীবাণু নিয়ে দেশে আসেন। এরপর স্ত্রী, সন্তানদের শরীরেও তা ছড়িয়ে পড়ছে। সিওমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক বলেন, বিদেশ যাওয়ার সময় এইচআইভিসহ বিভিন্ন রোগ আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু যারা বিদেশ থেকে ফেরেন, তাদের শরীরে রোগজীবাণু পরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা বিমানবন্দর বা স্থলবন্দরগুলোয় নেই। এটা চালু করা গেলে এইচআইভির বিস্তার ঠেকানো সম্ভব।

সর্বশেষ খবর