বুধবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্বাভাবিক হয়নি ডলার বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

এখনো স্বাভাবিক হয়নি ডলারের মূল্য। বাজার স্বাভাবিক করতে ব্যাংকগুলোর কাছে ৭০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত মূল্য স্বাভাবিক হয়নি। আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, গতকালও তাদের ৮৪-৮৫ টাকায় ডলার কিনতে হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো তাদের ওয়েবসাইটে বিক্রি দেখিয়েছে সাড়ে ৮২ টাকা থেকে ৮৩ দশমিক ৬০ টাকা। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, গতকালও প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮২ দশমিক ৩০ টাকায়। আমদানিকারকরা  জানিয়েছেন, ডলারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে তারা বিপাকে পড়েছেন। এতে আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি বাজারে ডলারের সংকট তো রয়েছেই। ব্যাংকগুলোয় পণ্য আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার কমেছে বলে জানা গেছে। আমদানি পণ্যের দামও বাড়ার আশঙ্কা করছেন আমদানিকারকরা। শুধু তাই নয়, ডলার কারসাজির জন্য দায়ী যে ২০টি ব্যাংককে নোটিস করা হয়েছিল, সেসব ব্যাংক এখনো জবাব দেয়নি। সন্তোষজনক জবাব না পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান রয়েছে। এদিকে ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে ও বাজার নিয়ন্ত্রণে করণীয় নির্ধারণে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) জরুরি বৈঠক করেছে। জানা গেছে, গতকালও আমদানি পর্যায়ে প্রতি ডলার প্রায় ৮৫ টাকায় বিক্রি করেছে অধিকাংশ ব্যাংক। যদিও ব্যাংকগুলোর ঘোষিত মূল্য ছিল ৮৩ টাকার নিচে। বাজারের সংকট কাজে লাগিয়ে এক মাস ধরে প্রতিদিনই নিজেদের ঘোষিত মূল্য ভঙ্গ করেছে অধিকাংশ ব্যাংক। এ নিয়ে ২০টির মতো ব্যাংককে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্ক করলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, বাজারের চাহিদার ওপর ডলারের দাম ওঠানামা করে। সে বিবেচনায় দাম বাড়লে সেটি স্বাভাবিক ধরা হয়। তবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা বা অন্য কোনো কারণে দাম বাড়ছে কিনা, তা বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষণ করছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে এ কারণে নোটিসও করা হয়েছে। বাফেদা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, ‘আমদানি পর্যায়ে ডলারের মূল্য ৮৩ টাকার নিচে রাখাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে কয়েক মাস ধরেই বাজারে কোনো স্ট্যান্ডার্ড পরিস্থিতি নেই। সুযোগ পেলেই ফাঁকফোকর দিয়ে কিছু ব্যাংক ডলারের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কয়েক দিন আগে অনুষ্ঠিত বাফেদার বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই ডলারের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দুই বছর ধরেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান মাধ্যম রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা পড়েছে। অন্যদিকে হঠাৎ করেই রেকর্ড পরিমাণ চালসহ খাদ্যশস্য ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি হওয়ায় বেড়েছে আমদানি ব্যয়। ফলে ডলারের চাহিদাও বেড়েছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ৬৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। অথচ গত অর্থবছরে বাজারে ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রির বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১৯৩ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সর্বশেষ খবর